শুক্রবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সরকারী সফরে নয়াদিল্লীতে পৌঁছাবেন, তখন তার প্রত্যাশা থাকবে যে ভারত একটু বাড়তি চেষ্টা করবে। এবং, তার এই প্রত্যাশা নায্য। হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ ভারতের অবিচল মিত্র হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। খবরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তার এই সফরে দু’ পক্ষ প্রায় ৪০টি চুক্তি স্বাক্ষরে প্রস্তুত।
ভারতের দিক থেকে নজর ছিল প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তির ওপর। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবিলায় বর্ধিত সহযোগিতা থাকার কথা ওই চুক্তিতে। পাশাপাশি, কয়েক বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহযোগিতা প্যাকেজের অংশ হিসেবে সামরিক সরঞ্জাম কিনতে ৫০ কোটি ডলারের ঋণের প্রসঙ্গও এসেছে। ওই প্যাকেজের আওতায় রয়েছে কানেকটিভিটি থেকে শুরু করে জ্বালানি পর্যন্ত সব কিছু।
এটি অগ্রাহ্য করার জো নেই যে, বাংলাদেশে যেই ইস্যুটি প্রাধান্য বিস্তার করে আছে সেটি হলো তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। আর ২০১১ সাল থেকে এই চুক্তি সম্পাদনের অগ্রগতি নিশ্চল হয়ে আছে। বাংলাদেশী কর্মকর্তারা তিস্তা ইস্যুকে ‘লিটমাস টেস্ট’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ ইস্যুতে বড় অগ্রগতি হলে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদীর যৌথ ব্যবস্থাপনের দ্বার খুলে যাবে।
তবে হাসিনার ৪ দিন ব্যাপী সফরে তিস্তা নিয়ে কোন চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা কম। যদিও আশা করা হচ্ছে যে, প্রেসিডেন্টের দেওয়া ভোজে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। মমতাকে এই তিস্তা চুক্তি আটকে রাখার নেপথ্যে মূল ব্যাক্তি হিসেবে ভাবা হয়। তবে এ নিয়ে আলোচনা রয়েছে যে, দুই পক্ষ একটি খসড়া নথি নিয়ে কাজ করছে যা চূড়ান্ত চুক্তির দ্বার খুলে দিতে পারে।
২০১৯ সালের শুরুর দিকে নির্বাচনে যেতে প্রস্তুত বাংলাদেশ। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে ভারতের কাছে নিজেকে নতজানু দেখানোর ঝুঁকি হাসিনা নিতে পারবেন না। এই অভিযোগ তার বিরুদ্ধে বিরোধী দল বিএনপি বারবার করেছে। ইতিমধ্যে দলটি ভারতের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেছে। তাই এই মিত্রের হাত শক্তিশালী করাটা ভারতের জন্য অনুজ্ঞাসূচক। তিনি এমন এক মিত্র যিনি নয়াদিল্লির কাছে অত্যন্ত জরুরী যেসব ইস্যু, যেমন সন্ত্রাসবাদ ও আঞ্চলিক কূটনীতি, সেসব ইস্যুতে অভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করেছেন।
হাসিনার জন্য নিজ দেশের মানুষের কাছে এই বার্তা পাঠানোটা গুরুত্বপূর্ণ যে, তিনি ভারতের সঙ্গে লেনদেন করছেন সমতার ভিত্তিতে। আর এক্ষেত্রে নয়াদিল্লি সাহায্য করতে পারে তার উদ্বেগ নিরসনে বাড়তি চেষ্টা করার মাধ্যমে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনী জয়লাভের পর বিজেপি এখন বাড়তি কিছু করার অবস্থানে রয়েছে। উভয় পক্ষের উচিৎ বড় দিকটির দিকে জোর দেওয়া। একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশই ভারতের দীর্ঘমেয়াদী স্বার্থের পক্ষে। হাসিনা একাধিকবার প্রমাণ করেছেন যে, তিনি এই বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনে কাজ করতে প্রস্তুত।
অনুবাদ: নাজমুল আহসান
Discussion about this post