শনিবার, অক্টোবর ১১, ২০২৫
Analysis BD
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home মতামত

শহীদ নাজিরকে ভুলিয়ে দেওয়া হয়েছে

ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪
in মতামত
Share on FacebookShare on Twitter

১৯৪৩ সালের ঘটনা। স্বাধীনতা আন্দোলনে উত্তাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ইংরেজদের থেকে স্বাধীনতা আদায়ের এক অগ্রগণ্য সেনাপতি ছিলেন ফেনীর নাজির আহমদ ভাই। তিনি ছিলেন তৎকালীন মুসলিম লীগের ছাত্রসংগঠন অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট লীগের নেতা।

নাজির আহমদরা ভারতীয় মুশরিকদের আগ্রাসন থেকে নিজেদের ও পরবর্তী প্রজন্মকে বাঁচাতে আলাদা রাষ্ট্র তথা পাকিস্তান আন্দোলন করেছিলেন। হিন্দুদের আগ্রাসন থেকে বাঁচতে তিনি জীবন পর্যন্ত দিয়েছেন।

১৯৪৩ সালে মেয়েদের হোস্টেলে নতুন ছাত্রীদের অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল। আনুষ্ঠানিক কর্মে ও পরিচর্যায় যারা নিযুক্ত ছিল, তারা সকলেই ছিল হিন্দু। গেট সাজানো থেকে আরম্ভ করে প্রবেশ পথ, সভাকক্ষ এবং মঞ্চ সাজানো সবাই হিন্দু মেয়েরা করেছিল। তাদের আলপনার মধ্যে সরস্বতীর চিহ্ন ছিল। প্রবেশ পথের দু’পাশে মাটির হাঁড়ির ওপর সিদুঁর শুকানো নারকেল ছিল। মঞ্চটি হিন্দু দেবীর পূজার ঘরের মতো সাজানো হয়েছিল। অনুষ্ঠান আরম্ভ হবে, এমন সময় দুটি মুসলমান ছাত্রী প্রবেশ তোরণ এবং মঞ্চ দেখে হল থেকে প্রতিবাদ করে বেরিয়ে আসে। হিন্দুদের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ করে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে আমরা সরস্বতীর পূজা করতে পারবো না।

এই প্রতিবাদের ফলে মুসলিম ছাত্ররা জড়ো হয়। তারা অনুষ্ঠান স্থগিত করার দাবি জানায়। কার্যত কোনো ফল হয়নি। প্রশাসন হিন্দুত্ববাদের পক্ষেই অবস্থান নেয়। ঢাকার চতুর্দিকে এ খবর ছড়িয়ে যায় এবং মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে একটি প্রবল প্রতিক্রিয়া ঘটে। রাতে বিভিন্ন হলে আলোচনা হতে থাকে যে, পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে! নাজির আহমদ সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ছাত্রনেতা ছিলেন। তিনি পরবর্তী আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন এটা সিদ্ধান্ত হয়।

ছাত্রদের বুদ্ধি-পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে কবি জসীমউদ্দিনের সহযোগিতা স্মরণযোগ্য। সিদ্ধান্ত হয় যে পরের দিন মুসলমান ছেলেরা ক্লাসে যাবে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সভা ও মিছিল করবে। এদিকে হিন্দু ছাত্ররা মূলত কংগ্রেসের কর্মীরা ঢাবি শিক্ষক পি. কে. গুহর বাসায় মিটিং করে ও আন্দোলনকারীদের কঠোরভাবে প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নেয়।

পরদিন নাজির আহমদের নেতৃত্বে ছাত্ররা গতকালের ঘটনার প্রতিবাদ করে মিছিল শুরু করে। মিছিলে অতর্কিত আক্রমণ করে কংগ্রেসপন্থী হিন্দু ছাত্ররা। মিছিলের সামনে থাকা কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করে। অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট লীগের মিছিল প্রথমে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে তারা আবার ঘুরে দাঁড়ায়। কিন্তু ততক্ষণে কয়েকজন মারাত্মকভাবে আহত হন। এর মধ্যে ছাত্রদের জনপ্রিয় নেতা নাজির আহমদ ছিলেন।

তিনি ছুরিকাঘাতে আহত হন। রক্তক্ষরণে ক্রমশ নাজির আহমদ দুর্বল হতে থাকেন এবং তখন মিটফোর্ড হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। কবি জসীম উদ্দিন হাসপাতালে সর্বক্ষণ তাঁর শয্যাপাশে ছিলেন। ২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার সময় যখন মাগরিবের আজান হচ্ছিল তখন নাজির আহমদ শাহদাতবরণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানকে হিন্দু ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করার প্রতিবাদ করায় নাজির আহমদকে শহীদ করা হয়। সেই হিন্দুত্ববাদের ছোবল থেকে আমরা কিছুদিনের জন্য মুক্তি পেলেও এখন আবার তাদের হাতে বন্দি হয়ে গেছি। ২০১৯ সালে বুয়েটের শহীদ আবরারকে একই কারণে হত্যা করে হিন্দুত্ববাদের অনুসারী ছাত্রলীগ।

পূর্ববাংলার মুসলমানদের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বঙ্গভঙ্গ রদের পর বিক্ষুব্ধ মুসলমানদের শান্ত করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। স্বভাবতই মুসলমান ছাত্রই বেশি ছিল। সাধারণত সংখ্যাধিক্য সম্প্রদায়ের ভয়ে শঙ্কিত থাকে সংখ্যালঘুরা। কিন্তু ঢাবিতে ঘটলো তার উল্টো। মুসলমান ছাত্রনেতা নিহত হলো হিন্দুদের হাতে। এর কারণ ইংরেজরা হিন্দুদের দাবির মুখে ঢাবির প্রশাসক ও শিক্ষক নিয়োগ হিন্দুদের হাতেই ন্যস্ত করে। বিশেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আশুতোষ মুখার্জি।

এই ঘটনায় ঢাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। কংগ্রেস নেতাদের হস্তক্ষেপে এই খুনের বিচার করেনি ততকালীন ব্রিটিশ বেনিয়া। কিন্তু ছাত্ররা ২ ফেব্রুয়ারীকে শহীদ নাজির দিবস হিসেবে পালন করতো। ১৯৪৪ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঢাবিতে শহীদ নাজির দিবস পালন হয়ে আসছিল। ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ঢাবিতে প্রশাসনের আয়োজনে এই দিবস পালিত হয়।

১৯৫২ সালে সংকীর্ণ বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান হয়। এরপর থেকে শহীদ নাজিরকে ভুলিয়ে দিতে থাকে ভাষা আন্দোলনকারীরা। শহীদ নাজিরকে চিহ্নিত করা হয় সাম্প্রদায়িক হিসাবে। জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান বলেন, ১৯৫২ সালের পর থেকে আর কখনো ঢাবিতে শহীদ নাজির দিবস পালন করা যায় নি। এর কয়েকবছর পর সবাই শহীদ নাজির কে ভুলে গেল।

গতকাত ছিল ২ ফেব্রুয়ারি। শহীদ নাজিরের ৮১ তম শাহদাতবার্ষিকী। ঢাকার ‘নাজিরা বাজার’ শহীদের নাজিরের স্মৃতিকে আগলে আছে। আল্লাহ তায়ালা শহীদ নাজিরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করুন। সময় আসবে! ইতিহাস ঘুরে যাবে। নাজির আহমদেরাই আমাদের নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। ইনশাআল্লাহ।

সম্পর্কিত সংবাদ

Home Post

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫
slide

ভয়েস অব আমেরিকা বন্ধের বার্তা কী?

মার্চ ১৯, ২০২৫
মতামত

ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায় জনগণের সামরিক প্রশিক্ষণ জরুরি

আগস্ট ১০, ২০২৪

Discussion about this post

জনপ্রিয় সংবাদ

    সাম্প্রতিক সংবাদ

    রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

    সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

    সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

    আগস্ট ১০, ২০২৫

    জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

    মে ৩১, ২০২৫

    মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

    মে ২১, ২০২৫

    ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

    মে ২১, ২০২৫

    © Analysis BD

    No Result
    View All Result

    © Analysis BD