অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক:-
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অবশেষে চুড়ান্ত অ্যাকশন শুরু করেছে আমেরিকা। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রশ্নে দীর্ঘদিন ধরেই শেখ হাসিনাকে সতর্ক করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো।
একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন আগে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসানীতি চালু করেছে। এর মধ্যে তারা বেশ লোকের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগও করেছে। এমনকি শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়ও এই ভিসানীতির আওতায় পড়েছে। ছেলের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগের সংবাদ জানার পরই শেখ হাসিনা আরও ক্ষেপে গেছেন। তিনি এখন প্রতিদিনই যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিয়ে কথা বলছেন। বলতে গেলে যুক্তরাষ্ট্রকে হাসিনা পাত্তাই দিচ্ছে না। হাসিনা এখন নিজেকে সুপার পাওয়ার মনে করছেন।
অপরদিকে, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে শেখ হাসিনা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতিকে হাসিনা কোনো পরোয়া করছে না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রও বসে নেই। তারা এখন হাসিনাকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলতেছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার হল যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইইউভুক্ত দেশগুলো। ইতিমধ্যে তারা বাংলাদেশের পোশাক প্রত্যাহার শুরু করে দিয়েছে।
বাংলাদেশের দুইটি গণমাধ্যম আজ রিপোর্ট করেছে যে এ বছর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিক্রি বন্ধ করা হয়েছে এবং গ্রাহকদের ফেরত দিতে বলা হয়েছে-এমন দেশগুলোর মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, লিথুয়ানিয়া, এন্তোনিয়া, বুলগেরিয়া ও সাইপ্রাস। এমনকি একই ধরনের অভিযোগ তুলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৯টি দেশ তাদের বাজার থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন পোশাক তুলে নিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কানাডার সরকার বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া জর্জ ব্র্যান্ডের ২ লাখ ১৬ হাজারের বেশি পোশাক ক্রেতাদের কাছ থেকে ফেরত নিতে বলেছে বৈশ্বিক চেইনশপ ওয়ালমার্টকে। এসব পোশাকের ব্যাপারে কানাডার স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, জর্জ ব্র্যান্ডের রাতে পরার পোশাকের জিপারের বর্ধিতাংশ ভেঙে যেতে পারে এবং পায়ের ও গলার গ্রিপ বারবার ধোয়ার ফলে চেপে যেতে পারে, যা ওই পোশাক পরা ব্যক্তির দম বন্ধ হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
গত ৩ অক্টোবর কানাডা সরকার সে দেশের সরকারি ওয়েবসাইটে এ ব্যাপারে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে এরই মধ্যে বিক্রি হয়ে যাওয়া জর্জ ব্র্যান্ডের এসব পোশাক ওয়ালমার্টে ফেরত দেওয়ার জন্য গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। ওয়ালমার্টে বিক্রির জন্য জর্জ ব্র্যান্ডের এই পোশাকগুলো তৈরি হয়েছে গাজীপুরের ইউনিক ডিজাইনার্স লিমিটেড নামের একটি কারখানায়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন মাসের দিকে পোশাকগুলো সরবরাহ দেওয়া হয়।
বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে অর্থনৈতিক ও আর্থসামাজিক নীতি সহায়তা প্রদান করা সংস্থা অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ওইসিডি) তথ্যমতে, কানাডা ছাড়াও চলতি ২০২৩ সালে ১১টি দেশের বাজার থেকে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া পোশাক উঠিয়ে নিতে বাধ্য করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো। এর কারণ হিসেবে একেক দেশে একের ধরনের অজুহাত তুলে ধরা হয়েছে। আবার অনেক দেশে বিক্রীত পোশাক গ্রাহকদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে তাদের টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওইসিডির তথ্যে দেখা যায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে পোশাক পরার কারণে শ্বাসরোধ ও আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা, ঢিলেঢালা হওয়ার কারণে আগুনের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি, পোশাকে অতিমাত্রায় রাসায়নিক পদার্থ থাকা, আগুন প্রতিরোধী মান নিশ্চিত না হওয়া প্রভৃতি।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশিরা স্বাস্থ্য ঝুকির কথা বললেও প্রকৃত ঘটনা ভিন্ন। এখানে বড় ধরনের রাজনীতি কাজ করছে। বর্তমান সরকার যে পশ্চিমাদেশগুলোর সাথে অতি বাড়াবাড়ি করছে, সেটার ফল হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উপর সরাসরি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে ভিন্নভাবে কাজটা করছে। এটাও শেখ হাসিনার সরকারের উপর এক প্রকার চাপ। এখন তারা যদি বাংলাদেশের সব পোশাক প্রত্যাহার করে তাহলে আমাদের রপ্তানি একেবারে ধসে পড়বে। শেখ হাসিনাকে এমনিতেই ক্ষমতা ছেড়ে দিতে হবে।
Discussion about this post