অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনের দাম আবারো বাড়িয়েছে সরকার। দাম বাড়িয়ে ইতোমধ্যেই শুক্রবার সার্কুলার জারি করা হয়েছে। বর্ধিত দাম অনুযায়ী শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকে ডিজেল ১১৪ টাকা, পেট্রোল ১৩০ টাকা এবং অকটেন ১৩৫ টাকা লিটার বিক্রি করা হবে।
সব রকমের জ্বালানী তেলের মূল্য বাড়িয়ে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৫ আগস্ট শুক্রবার রাত ১২টার থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ডিজেলে প্রতি লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনে প্রতি লিটারে ৪৬ টাকা এবং পেট্রোলে প্রতি লিটারে দাম বেড়েছে ৪৪ টাকা।
গত বছরের নভেম্বরে একবার জ্বালানী তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল। বছর ঘুরার আড়েই আবারো বাড়ল জ্বালানী তেলের দাম। জ্বালানী তেলের দাম বাড়ার ফলে সব রকমের পণ্য পরিবহন খরচ বাড়বে। এতে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে আরো একদফা। সরকারের দুর্নীতি, লুটপাটে দেশের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায়। এর দায় নিতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে।
এদিকে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পেট্রোল পাম্প বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলে সারাদেশে বিভিন্ন ফিলিংস স্টেশন গুলোতে চরম সংকট তৈরি হয়েছে। অন্যদিকে বাইক চালকরা ফিলিং স্টেশনে ভিড় করেছেন। এসময় সরকারের প্রতি তারা ক্ষোভ জানান। তারা বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির খবরে কর্তৃপক্ষ পাম্প বন্ধ করেছে যাতে করে ১২টার পর থেকে অতিরিক্ত দামে তেল বিক্রি করতে পারে। তারা মূলত সিন্ডিকেট তৈরির ব্যবস্থা করেছে। সরকার উন্নয়নের কথা বলে বলে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করছে। এমনকি তেল নিতে এসে পিটুনিতেও শিকার হয়েছেন অনেকেই।
এছাড়া তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে মধ্যরাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। সরকারের কথিত উন্নয়নের সমালোচনা করে তেলের দাম কমিয়ে জনগনের নাগালের মধ্যে আনার দাবি জানান তারা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে গাড়ি না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ।
মধ্যরাতে ঝিনাইদহে মহাসড়ক অবরোধ
তেল না পেয়ে ঝিনাইদহ-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন মোটরসাইকেলচালকরা। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে মহাসড় অবরোধ করেন তারা। এতে মহাসড়কের দুই পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জ্বালানি তেলে দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকেই ঝিনাইদহের সবকটি পাম্পে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। মোটরসাইকেল নিয়ে পাম্পে তেল কিনতে আসেন অনেকে। তবে রাত ১২টার পর বন্ধ হয়ে যায় জেলার অধিকাংশ পাম্প। ফলে তেল কিনতে পারেন না শত শত মোটরসাইকলচালক।
মোটরসাইকেল ছাড়াও ট্রাক, প্রাইভেটকার সহ অন্যান্য যানবাহনের চালকদেরও পাম্পে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। এসময় বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিভিন্ন পাম্প এলাকায় পুলিশের টহল বাড়ানো হয়।
রংপুরে তেলপাম্পে গ্রাহকদের বিক্ষোভ
দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোসণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রংপুরে পেট্রলপাম্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে তেল কিনতে গিয়ে বিপাকে পড়েন গ্রাহকরা। একপর্যায়ে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগে শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয় সরকার। শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে জ্বালানি তেলের বর্ধিত দাম কার্যকরের কথা থাকলেও আগেভাগেই পাম্প বন্ধ করে দেওয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
তেল কিনতে আসা রাব্বি নামে এক মোটরসাইকেলচালক বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে, রাত ১২টার পর কার্যকর হবে। কিন্তু রাত ১০টার মধ্যে রংপুরের সব ফিলিং স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আরেক বিক্ষোভকারী মকবুল মিয়া বলেন, রাত পোহালে প্রায় দ্বিগুণ লাভ, এই আশায় রাত ১২টা বাজার আগেই ফিলিং স্টেশনের মালিকরা তেল দেওয়া বন্ধ করে দিলেন। কিন্তু প্রশাসন চুপচাপ। তাই আমরা রাস্তা বন্ধ করে প্রতিবাদ করছি।
ফিলিং স্টেশনে তেল নিতে আশা রবিউল নামে এক ক্রেতা বলেন, মোটরসাইকেলের তেল শেষ হওয়ায় তেল নিতে এসেছিলাম। এসে দেখি অনেকেই তেল না পাওয়ায় বিক্ষোভ করছেন। আমি নিজেও যেহেতু ভুক্তভোগী, তাই আমিও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছি।
উল্লেখ্য, শেখ হাসিনা কয়েক দিন আগে ঘোষণা দিলেন পেট্রল দেশেই তৈরি হয় কোন সংকট দেখা দেবেনা। এছাড়া দেশে পেট্রল ও অকটেনের কোনো ঘাটতি নেই বলে দাবি করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। রাজধানীসহ দেশের পেট্রল পাম্পে সরবরাহ স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল রয়েছে বলেও দাবি করে সরকারের এই সংস্থাটি। তার এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই এই দাম বাড়ানো হলো।
Discussion about this post