অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে রাজধানীর রামপুরায় বাস চাপায় একরামুন্নেছা স্কুলের ছাত্র মাইনুদ্দিন নিহত হয়। এই প্রতিবাদে রাতে ক্ষুব্ধ জনতা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয়। এদিকে মাইনুদ্দিন হত্যার বিচার দাবিতে তার সহপাঠীরা দুইদিন ধরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। আর নটরডেম কলেজের ছাত্র নিহতের ঘটনা ও বাসে হাফ পাসের দাবিতে কয়েকদিন ধরেই রাজধানীতে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে ছাত্ররা।
নিরাপদ সড়ক ও হাফ পাসের দাবিতে ছাত্ররা যে আন্দোলন করছে এটা তাদের ন্যায় সংগত আন্দোলন। আর রামপুরায় বাসে আগুন দেয়ার যে ঘটনা ঘটেছে সেটা করেছে প্রতিবাদী বিক্ষুব্ধ জনতা। তাদের সাথে রামপুরা এলাকার শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছিল। তারা ক্ষুব্দ হয়ে বাসে আগুন দিয়েছে। কিন্তু বাস দুর্ঘটনায় ছাত্র নিহতের দায়কে আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপি-জামায়াতের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।
এদেশে কোনো ঘটনা ঘটলে তদন্তের আগেই সেটার দায় সরকার বিএনপি-জামায়াতের উপর চাপিয়ে দেয়। আ.লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে মানুষকে গুলি করে হত্যা করলে কিংবা মানুষের বাড়িঘরে আগুন দিলেও সেটাকে সরকার বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা বলে চালিয়ে দেয়। সহজ ভাবে বললে-দেশে যত অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটে, আওয়ামী লীগের ভাষায় সবগুলোর সাথে বিএনপি-জামায়াত জড়িত। লক্ষণীয় বিষয় হল-এবার তারা সড়ক দুর্ঘটনার দায়ও বিএনপি-জামায়াতের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ সরাসরি বলেছেন-রামপুরার ঘটনা দুর্ঘটনা নাকি বিএনপি-জামায়াতের পরিকল্পিত কাজ সেটা খতিয়ে দেখতে হবে। তারা প্রশ্ন তুলেছেন-দুর্ঘটনা ঘটার ১৫ মিনিটের মধ্যে ফেসবুকে লাইভ হয় কিভাবে? এত তাড়াতাড়ি শিক্ষার্থীরা এখানে আসলো কিভাবে? অল্প সময়ের মধ্যে এত মানুষ সেখানে কিভাবে আসলো?
আসলে ওবায়দুল কাদের আর হাছান মাহমুদ যে পাগল এটা আবারো প্রমাণিত হল। এখন তো অধিকাংশ মানুষের পকেটেই স্মার্টফোন থাকে। আর মোবাইলে ফেসবুক ব্যবহার করে না এমন মানুষের সংখ্যা বর্তমানে খুবই কম। ফেসবুক লাইভের জন্য এখন আর বিশেষজ্ঞ লাগে না। কোথাও কিছু হলেই সাথে সাথে লাইভ শুরু হয়ে যায়। আর রামপুরায় যে ঘটনা ঘটেছে সেটাতো লাইভ হওয়ায় স্বাভাবিক।
জানা গেছে, সেদিন ক্ষুব্ধ জনতা গাড়িতে আগুন দিয়েছে আর উৎসুক কিছু মানুষ ফেসবুকে লাইভ প্রচার করেছে। সাধারণ মানুষের এসব প্রতিবাদ ও ফেসবুক লাইভের দায় বিএনপি-জামায়াত নেবে কেন?
এদিকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ বাঁশেরকেল্লার তথ্য নিয়ে অপব্যাখ্যা করে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। এই অপপ্রচারের তীব্রপ্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বাঁশেরকেল্লা।
তথ্যমন্ত্রী রামপুরায় বাসে আগুনের পিছে বাঁশের কেল্লার যোগসূত্র তৈরী করে করেছেন। তথ্যমন্ত্রীর কৌতুহল ভাবে জানতে চেয়েছেন বাঁশেরকেল্লা কীভাবে ১৫ মিনিটের মধ্যে এই খবর পেল এবং খবর প্রচার করল? যা জনমনে হাস্যরস তৈরী করেছে।
বাঁশের কেল্লা তথ্যমন্ত্রী জবাব দিয়ে লিখেছেন, এখনতো মুহুর্তেই বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে উগান্ডায় বসে বাংলাদেশের ঢাকার কোন চিপায় কি হচ্ছে সেটা জানা সম্ভব। কোথাও কিছু ঘটলে জনগণই এখন প্রচারে নেমে পড়ে। কাল বিলম্ব না করে টিম বাঁশেরকেল্লাকে নিউজ দেয়। বাঁশেরকেল্লাও শুধুমাত্র জনগণের আস্থার প্রতিদান স্বরূপ নিউজ শেয়ার দেয়।
বাঁশের কেল্লা তাদের প্রতিবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গত পরশুদিন (২৯ নভেম্বর) রাত ১১ ঘটিকায় রাজধানীর রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের একটি বাস চা পা য় একরামুন্নেসা স্কুলের মাঈনুদ্দিন নামের একজন এসএসসি পরিক্ষার্থী নি হ ত হয়। ছেলেটি দীর্ঘদিন যাবৎ ঐ এলাকায় বসবাসরত হওয়ায় এই খবর শুনে তাৎক্ষণিক তার বন্ধু, স্বজন ও এলাকাবাসী ঘটনাস্থল রামপুরায় ছুটে আসে। এছাড়াও মুহুর্তেই আশপাশের শিক্ষার্থীরাও এসে বাস আটকে বি ক্ষো ভ শুরু করে। পরবর্তীতে হঠাৎ অজ্ঞাত কে বা কারা ১০ থেকে ১২টি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ উপস্থিত থাকলেও তারা কোনরূপ বাঁধা প্রদান করেনি। তাই প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের অনেকেই ধারণা প্রকাশ করেছে, এই কাজে সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের জড়িত থাকার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। কারণ গত কয়েকদিন ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কে ব্যাহত করতেই এই অ প কৌশল নিয়েছে সরকার।”
উল্লেখ্য, নিজস্ব সোর্সের বরাতে এই খবরটি স্বাভাবিক নিয়মেই ২৯ নভেম্বরের রাত ১১ ঘটিকায় বাঁশেরকেল্লা’র ফেসবুক পেইজ ও টেলিগ্রাম চ্যানেলে এই খবর এক যোগে প্রচার করা হয়। যেটি আমরা ঘটনাস্থলে না গিয়েও আমরা আমাদের সোর্সের বরাতে এই তথ্য জানতে সক্ষম হই। যে চেষ্টাটা আমাদের সবসময় অব্যাহত থাকে সেটা হলো, আমাদের পাঠকদের কাছে প্রতিমুহুর্তের আপডেট দ্রুত সময়ের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টা। অথচ এই স্বাভাবিক একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বাঁশেরকেল্লার বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ ভাবে সরকার নিয়ন্ত্রিত একাধিক গণমাধ্যমে মি থ্যা চা র ছড়ানো হচ্ছে।
অনির্বাচিত তথ্যমন্ত্রীর কৌতুহল জাগছে কিভাবে ঘটনা ঘটার কিছু সময় পর রাত ১১টায় বাঁশেরকেল্লা’র টেলিগ্রাম চ্যানেলে খবরটি প্রকাশিত হয়। বাঁশেরকেল্লা কীভাবে ১৫ মিনিটের মধ্যে এই খবর পেল এবং খবর প্রচার করল?
এখনতো মুহুর্তেই বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে উগান্ডায় বসে বাংলাদেশের ঢাকার কোন চিপায় কি হচ্ছে সেটা জানা সম্ভব। আর এমনিতেই সরকারের পা – চা টা মিডিয়ার বিকল্প হিসেবে বাঁশেরকেল্লা এখন জনগণের ভরসা ও আস্থার স্থান। কোথাও কিছু ঘটলে জনগণই এখন প্রচারে নেমে পড়ে। কাল বিলম্ব না করে টিম বাঁশেরকেল্লা কে নিউজ দেয়। বাঁশেরকেল্লাও শুধুমাত্র জনগণের আস্থার প্রতিদান স্বরূপ নিউজ শেয়ার দেয়। বাচাল হাসান মাহমুদের যদি নূন্যতম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে জ্ঞান থাকতো তবে তিনি এই প্রশ্ন করতেন না। এখন অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে কেউ কি এমন বোকার মতো প্রশ্ন করে? আর যিনি করেছেন তিনি কিনা কথিত ‘ডিজিটাল সরকার’ এর তথ্যমন্ত্রী ! সত্যিই বিস্ময়কর এবং হাস্যকরও বটে !
Discussion about this post