অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০ বছর পর আফগানিস্তানে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে। তবে কোনো স্বাভাবিক পরিবর্তন নয়। দীর্ঘ ২০ বছর যুদ্ধ করে তালেবান ক্ষমতা দখল করেছে। দীর্ঘ যুদ্ধে তালেবান তাদের বহু যোদ্ধাকে হারিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। যদিও তালেবানের ক্ষমতা দখল নিয়ে বিভিন্ন মহল বিভিন্ন ধরণের কথা বলছে। ইতিমধ্যে চীন-পাকিস্তানসহ কয়েকটি দেশ তালেবানের সাথে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে। তবে তালেবানের পুনরুত্থানে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে ভারত। কারণ আমেরিকার বসানো আশরাফ গনির সরকারকে ভারত সর্বাত্মক সমর্থন করেছিল। আর তালেবান যেহেতু ইসলামি ভাবধারায় দেশ পরিচালনা করতে চায়-এ কারণেও ভারত উদ্বিগ্ন। কারণ, কাশ্মির প্রশ্নে তালেবান ভারতকে ছাড় দেবে না।
আফগানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর চরমভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বাংলাদেশ সরকারও। প্রতিবেশী ভারতের এমন কোনঠাসা অবস্থান দেখে সরকার যেন খেল হারিয়ে ফেলেছে। সরকারের মন্ত্রীদের কথায় যেন ভীতির ছাপ স্পষ্ট। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মুখে আফগানের নাম না নিয়ে বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশে পরিবর্তনের পর বাংলাদেশে কিছু লোক শেখ হাসিনার সরকার হঠানোর চক্রান্ত করছে। তারা মাঠে নামার জন্যই বিশ্ববিদ্যায়গুলো খুলে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও যেন একই সুরে সুর মেলালেন। আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন-বাংলাদেশে কোনো তালেবান নাই। যদিও কিছু দিন আগে পুলিশ কমিশনার বলেছেন-কিছু বাংলাদেশি তালেবানের সাথে যুদ্ধ করতে আফগানে গিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতা দখলের পরই সরকারের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও সকল নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধানদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। যাতে কোনো ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেউ মাঠে নামতে না পারে।
জানা গেছে, দেশের সকল কওমী মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষককে সরকার তালেবানের ভাবধারার মনে করে। আর বর্তমানে কওমী মাদরাসার সম্পৃক্ত সবাই সরকারের উপর প্রচণ্ড ক্ষুব্দ। এছাড়া সরকারের কাছে তথ্য আছে-অনেক বাংলাদেশি দীর্ঘদিন ধরে আফগানে থেকে তালেবানের সাথে যুদ্ধ করেছে। গেরিলা যুদ্ধ কিভাবে করতে হয় সেটা তারা তালেবান থেকে শিখেছে। এখন তারা যদি কোনোভাবে দেশে আসতে পারে তাহলে সরকারের জন্য বড় ধরণের হুমকির কারণ হবে।
দেখা গেছে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ওপর ক্ষমতাসীনরা যে অত্যাচার চালিয়েছে তাতে যে কোন সময় রাজপথে নামতে পারে সাধারণ মানুষ। এছাড়া করোনাকালীন সময়ে কথিত লকডাউনের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে রেখেছে তার ফলাফলও খুব ভালো নয়। অন্যদিকে দেশের আলেমদেরও ওপরেও যে ধরণের আচরণ করেছে ক্ষমতাসীনরা তা নিয়ে ক্ষুব্ধ আলেম সমাজ। শুধু তাই নয় মামুনুল হকসহ কওমীর বড় বড় আলেমদের গ্রেফতারের বিষয়টিকে আলেম সমাজসহ কেউ ভালভাবে নিচ্ছে না। এছড়া বিরোধী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের উপর ক্ষুব্ধ। তাদের সাথে আবার যুগ হয়েছে ভিপি নুরের ছাত্র অধিকার পরিষদ। বিএনপিও সরকার বিরোধী আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। আর সাধারণ মানুষতো ১২ বছর ধরেই সরকারের উপর ক্ষুব্ধ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশের অধিকাংশই ইসলামপন্থী। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা যেভাবে ইসলামপন্থীদের কোনঠাসা করে রেখেছে তালেবানদের থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা যে কোন সময় সরকার পতনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে। যদিও এ পর্যন্ত সরকার দলীয় সন্ত্রাসী বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি দিয়ে সব গুলো আন্দোলন দমন করেছে। তাই তারা ভিন্ন পথও বেছে নিতে পারেন। ইতিহাসে প্রতিটি স্বৈরশাসকের বিদায় সহজ ভাবে হয়নি। শুধু ইসলামপন্থী নয় বিরোধী দলসহ সাধারণ মানুষও সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তাই তালেবানের এই ইত্থান বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের ওপর প্রভাব ফেলবে।
Discussion about this post