অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
আওয়ামী লীগের বিগত ১২ বছরের শাসনামলে দেখা গেছে, কেন্দ্রদখল, জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই জায়েজ করতে দুইটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনের আগে তারা একটা ভুয়া জরিপ প্রকাশ করেছে। নির্বাচনের আগে এসব ভুয়া জরিপের ফল প্রকাশ করে তারা মানুষকে জানিয়েছে যে, ৭০ শতাংশ মানুষ আওয়ামীলীগকে সমর্থন করে। তারা পুনরায় আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় চায়।
এবার তারা ভারতের দেয়া করোনার টিকা মানুষের দেহে পুশ করার জন্য আগের মতো ভুয়া একটা জরিপ করেছে। তাদের গৃহপালিত ব্যক্তি ও কথিত নামবস্বর্বস্ব প্রতিষ্ঠান দিয়ে জরিপ করিয়ে বলছে-দেশের ৭৫ শতাংশ মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী।
ভারতে করোনার টিকা নেয়ার পরই অসুস্থ হয়ে পড়ে কয়েকশ মানুষ। এর মধ্যে একজন স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৩জন মারা গেছে। এঘটনার পর করোনার টিকা নিয়ে ভারতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ এখন টিকা নিতে আর বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
ভারতের এই টিকা বাংলাদেশে আসার পর থেকে জনগণের মধ্যেও ভয়-আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ শুধু ভারতের এই টিকার সমালোচনই করছে না, তারা টিকা না নেয়ারও ঘোষণা দিচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগপন্থী অনেক সাংবাদিককেও ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে টিকা নিতে অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।
আর সরকারের উচ্চপর্যায়ের লোকজন প্রথমে টিকা না নেয়ার ঘোষণায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বাড়ছে। এনিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারতের টিকার প্রতি মানুষের আগ্রহ আছে-এটা প্রমাণ করার জন্য ভুয়া এক জরিপ করেছে সরকার।
রাজধানীর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল হেলথ ইনস্টিটিউট এ জরিপ প্রকাশ করেছে। এ জরিপে সহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও যুক্ত ছিলেন সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার, রংপুর হাইপারটেনশন রিসার্চ সেন্টার, ইউনিভারসিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ।
এ জরিপে গবেষক দলে ছিলেন ড. আহমেদ হোসেন (এন এস ইউ), ড. হাসান মাহমুদ রেজা, (এন এস ইউ), মিনহাজুল আবেদিন (সি আই পি আর বি), ড. ফারাহ নাজ রহমান (সি আই পি আর বি), আমিনুল ইসলাম (ইউল্যাব), ড. জাকির হোসেন (এইচ এ আরসি-রংপুর)।
তারা দেশের মাত্র ৮টি জেলায় সর্বমোট ৩ হাজার ৬৪৭ জনের মতামত নিয়েছে। তাদের এই জরিপ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ বলছেন-এটা কোনো জরিপ না। ১৭ কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৩ হাজার মানুষের মতামত কোনো জরিপ হতে পারে না। এটা তাদের মাঠ জরিপ নয়।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের এক জরিপে দেখা যাচ্ছে দেশের ৩২ শতাংশ মানুষ টিকা কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথে টিকা নিতে আগ্রহী। আগ্রহী আরও ৫২ শতাংশ মানুষ আছেন, তবে তারা ঠিক এ মূহুর্তেই টিকা নিতে রাজী নন।
বরং তারা কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তবেই টিকা নিতে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন গবেষণা দলটির অন্যতম সদস্য ড. শাফিউন নাহিন শিমুল। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় ৩,৫০০ লোকের ওপর জরিপ চালিয়ে এই ফলাফল পাওয়া গেছে।
ঢাবি’র গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের আট বিভাগের আটটি জেলা ও ষোলটি উপজেলায়, এবং ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনে জনসমাগম বেশি এমন জায়গাগুলোতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষের ওপর পরিচালিত জরিপে পাওয়া গেছে যে ১৬শতাংশ মানুষ কখনোই টিকা নিতে চাননা।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. নাহিন বলেন, মোট ৮৪% মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী তবে এর মধ্যে ৫২% এখনই না নিয়ে ধীরে সুস্থে নিতে আগ্রহী।
গবেষণায় উঠে আসা তথ্য বিশ্লেষণ করে যা পাওয়া গেছে তা হলো- ঢাকা সিটিতে টিকা নেয়ার আগ্রহ তুলনামূলক কম আবার যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক তাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি।
আবার যদিও বিনামূল্যে না দেয়া হয় তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ তুলনামূলক কম।
এমনকি মোট যে ৮৪% মানুষ টিকা নিতে আগ্রহী তাদের মধ্যে অর্থের বিনিময়ে টিকা নিতে আগ্রহী ৬৬%। আবার বয়স্কদের, বিশেষ করে ষাটের চেয়ে বেশি বয়স যাদের, তাদের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ কম।