শনিবার, অক্টোবর ২৫, ২০২৫
Analysis BD
No Result
View All Result
No Result
View All Result
Analysis BD
No Result
View All Result
Home Top Post

বাংলাদেশে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র কেমন?

আগস্ট ৬, ২০১৯
in Top Post, বিশেষ অ্যানালাইসিস
Share on FacebookShare on Twitter

বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণ বিষয়ে গেলো সপ্তাহে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সভায় একটি পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। সভায় বিভিন্ন বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনের আলোকে বাংলাদেশের নির্যাতন পরিস্থিতি নিয়ে কমিটির সদস্যরা যেসব অভিযোগ তুলে ধরেছেন, তার বিপরীতে বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী দাবি করেছেন, বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের তথ্য অনেকক্ষেত্রেই অসত্য। এছাড়া এ ধরণের নির্যাতন প্রতিরোধে আইনী কাঠামোর উন্নতির কথাও তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী।

কিন্তু বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র আসলে কী রকম?

বিবিসি বাংলার তাফসীর বাবুর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে  চাঞ্চল্যকর তথ্য।

দু’হাজার ষোল সালের এক মধ্যরাত। আব্দুল আলীমের (ছদ্মনাম) বাসায় প্রবেশ করে সাদা পোষাকে পুলিশের বেশ কিছু সদস্য। কোন ওয়ারেন্ট ছাড়াই আব্দুল আলীমকে নিয়ে আসা হয় থানায়। তখনো মি. আলীম জানেন না তার অপরাধ কী?

সকাল হতেই শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন।

মি. আলীম বলছিলেন, “থানার ভেতরে একটি রুমে ওরা আমাকে প্রথমে রশিতে ঝুলায়। এরপর আমার শরীর ঘোরাতে থাকে আর কয়েকজন পুলিশ সদস্য লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। ঘণ্টা দুয়েক থেমে থেমে চলে এই নির্যাতন।”

মি. আলীম বলছিলেন, এভাবে টানা আট দিন তাকে মারধর করা হয়। প্রতিদিন অন্তত: দুই ঘণ্টা।

কিন্তু কোন মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়নি।

মারধরের আওয়াজ মোবাইল ফোনে তার বাড়ির সদস্যদের শুনিয়ে টাকা চাওয়া হয়েছিলো। বলা হয়েছিলো, টাকা দিলে ছেড়ে দেবে।

আব্দুল আলীম জানাচ্ছেন, তারা টাকা দিতে পারেননি। পরে ভাংচুরের একটি মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে চারদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। আবারো চলে নির্যাতন।

মি. আলীম প্রায় দশ মাস কারাভোগের পর জামিন পান।

তবে তিনি পরে থানা হেফাজতে নির্যাতন বিষয়ে টুঁ শব্দটিও করেন নি। কোন মামলাও করেন নি।

“আমি বা আমার পরিবার আসলে মামলা করার কথা ভাবিই নি। ছাড়া পেয়েছি এটাই ছিলো বড় কথা। পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করে কি নিজের জীবনকেই হুমকির মধ্যে ফেলবো?” মি. আলীমের পাল্টা প্রশ্ন।

রিমান্ডে নির্যাতনের বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না অনেক ভূক্তভোগী।

থানা হেফাজতে থাকা অবস্থায় এবং রিমান্ডে মি. আলীম তার উপর নির্যাতনের যে অভিযোগ করছেন, বাংলাদেশে এমন অভিযোগ নতুন নয়।

এমনকি নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনাও আছে।

এরকমই একটি মৃত্যুর ঘটনা আমাকে বলছিলেন পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী। ধরা যাক, তার নাম মানুসরা খাতুন।

মানসুরা খাতুন জানাচ্ছিলেন, ২০১২ সালে পুলিশের হাতে তার বড় ভাই আটক হওয়ার একদিন পরই তার লাশ পাওয়া যায় হাসপাতালের মর্গে।

“পুলিশের সোর্স আমার ভাইয়ের কাছে টাকা চাইছিলো। সে দেয় নাই। পরে একদিন পুলিশের এক এসআই কয়েকজন পুলিশ নিয়া আইসা আমার ভাইরে এলাকা থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। রাতে আমরা দেখা করতে যাই। প্রথমে দেখা করতে পারি নাই। কিছুক্ষণ পরে থানার বাইরে থেকেই ভাইয়ের কান্না আর চিৎকার শুনতে পাইতেছিলাম। ওরা আমার ভাইরে মারতেছিলো।”

মানসুরা বলছেন, সেই রাত্রেই পরে থানায় ভাইয়ের সঙ্গে তারা দেখা করতে পেরেছিলেন।

তখন তার ভাইয়ের শরীর ছিলো রক্তাক্ত। তার ভাই তখন জানিয়েছিলেন, ৫০,০০০ টাকা না দিলে তাকে মেরে ফেলবে।

“পরদিন দুপুরে আমি থানা থিক্যা ফোন পাই। বলে আমার ভাই অসুস্থ্য। হাসপাতালে আছে। আমি আর আমার বোন দৌড়ায়া হাসপাতালে যাই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভাইরে খুইজ্যা পাই মর্গে। ভাইয়ের দুই পা নীল হয়া আছিলো। এমন মারছে যে, আমার ভাই যদি বাঁইচাও থাকতো, ওর পা দুইটা মনে হয় কাইটা ফেলতে হইতো।”

মানসুরা বলছেন, তার ভাইয়ের একমাত্র কন্যাকে এখন তারাই দেখাশোনা করছেন।

এ ঘটনায় পরে তিনি পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় পুলিশের এক এসআই জেলহাজতে আছেন।

গত পাঁচ বছরে নিরাপত্তা হেফাজতে মারা গেছেন তিন শতাধিক ব্যক্তি।

বাংলাদেশে আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক অবস্থায় কিংবা রিমান্ডে নির্যাতনের এরকম ঘটনা আরো অনেক আছে।

কিন্তু এসব বিষয়ে অবশ্য ভূক্তভোগীরা প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। মামলাও করতে চান না।

এ ধরণের ঘটনার তথ্য অনেক সময় মানবাধিকার সংগঠনগুলোই জনসমক্ষে নিয়ে আসে।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার গত পাঁচ বছরে এরকম ১৩১টি নির্যাতনের সংখ্যা উল্লেখ করছে।

এছাড়া পুলিশের হেফাজতে থাকা অবস্থায় গত পাঁচ বছরে ৩০৭ জন নির্যাতনে মৃত্যুর শিকার হয়েছে বলে তথ্য দিচ্ছে সংস্থাটি।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এর অনারারি নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন বলছেন, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন অহরহই ঘটছে। অথচ এটা বেআইনী।

তিনি বলছেন, “আপনি কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই কারো বিরুদ্ধে কোন মতেই নির্যাতন করতে পারবেন না। এখানে নির্যাতনের পক্ষে কোন অজুহাতের সুযোগ নেই। এমনকি দেশে যদি যুদ্ধাবস্থাও থাকে এবং আটক ব্যক্তি যদি সন্ত্রাসীও হয়, তাহলেও তাকে নির্যাতন করা যাবে না। আমাদের সংবিধানে কিন্তু এরকমটাই বলা আছে।”

বাংলাদেশে ২০১৩ সালে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন বন্ধে একটি আইন পাস করা হয়। যেখানে সব ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, শাস্তি দেয়া এমনকি ভয়-ভীতি দেখানোও অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়েছে।

কিন্তু মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই আইনে যেমন কারো শাস্তি পাওয়ার নজীর নেই তেমনি আইন প্রতিপালনেও ঘাটতি আছে।

সারা হোসেন বলছিলেন, “এখানে জবাবদিহিতার ব্যাপারটা আসলে নেই। কারণ যে সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছে, তারা নিজে কিন্তু জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করছে না। যেই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ বাহিনী তাদের কয় জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে? নির্যাতন বিষয়ে কী করা হয়েছে সে বিষয়ে সংসদেই বা কয়বার কথা হয়েছে?”

বাংলাদেশে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন এবং এর যথাযথ আইনী প্রতিকার না পাওয়ার অভিযোগ অবশ্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও করে থাকে।

কিন্তু এসব অভিযোগের বিষয়ে সরকার কী করছে?
গেলো সপ্তাহে জাতিসংঘের নির্যাতন বিরোধী কমিটির আয়োজনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বাংলাদেশের আইন মন্ত্রী দাবি করেছেন, নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ পেলে সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয় সরকার।

এ বিষয়ে গেলো সপ্তাহে জেনেভা থেকে টেলিফোনে বিবিসি’র সঙ্গে কথা বলেন আইনমন্ত্রী।

তিনি অবশ্য নির্যাতনের অভিযোগগুলোকে অনেক ক্ষেত্রেই অসত্য বলছেন।

আনিসুল হক বিবিসিকে বলছিলেন, “দুই চারটা এরকম ইনসিডেন্ট যেগুলো হয়েছে, সেসবের দায়িত্বভার বর্তায় যাদের উপরে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। শুধু ডিপার্টমেন্টাল পদক্ষেপ না, আমরা ফৌজদারি পদক্ষেপও নিয়েছি।”

“কিন্তু আমরা জাতিসংঘেও এটা বলেছি যে, অনেক ক্ষেত্রেই অনেক ব্যাপারে বাইরে থেকে যেসব তথ্য তারা (জাতিসংঘ) পান সেই তথ্যগুলো বস্তুনিষ্ঠও নয়, সত্যও নয়।”

তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো যে তথ্য দিচ্ছে, তাতে করে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের বিপরীত চিত্রই পাওয়া যায়।

কিন্তু এসব ঘটনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভূক্তভোগীরা আইনের আশ্রয় যেমন নেন না তেমনি আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী থেকেও নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে ঘটনা খতিয়ে দেখার প্রবণতা দেখা যায় না।

সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত সংবাদ

Home Post

রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫
Home Post

সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

আগস্ট ১০, ২০২৫
Home Post

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫

জনপ্রিয় সংবাদ

  • পাহাড়ে পরিকল্পিতভাবে বাঙালি উচ্ছেদ ও ডি ইসলামাইজেশন করা হচ্ছে

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • Trademark Web based poker Crazy Expensive diamonds Gambling enterprise Video slot Genuine Imitation Financial

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • অসুরের মুখে দাঁড়ি-টুপি : মুসলিম বিদ্বেষে সীমা ছাড়াল ভারত

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • ভাষা আন্দোলন ও এর ঘটনা প্রবাহ

    0 shares
    Share 0 Tweet 0
  • মুসলমানদের সেই সোনালী দিনগুলো আজ কোথায়?

    0 shares
    Share 0 Tweet 0

সাম্প্রতিক সংবাদ

রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ না হয়ে রাজনীতির হাতিয়ার: গোয়েন্দা সংস্থা ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৫

সন্ত্রাসের দুই মুখ: গাইবান্ধার সিজু হত্যা ও বসুন্ধরায় সামরিক ষড়যন্ত্র

আগস্ট ১০, ২০২৫

জুলাই বিপ্লব: গণআকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন ও রাষ্ট্ররূপান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী এবং ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক দায় ও চূড়ান্ত অগ্নিপরীক্ষা

মে ৩১, ২০২৫

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব

মে ২১, ২০২৫

ইশরাকের মেয়র হতে বাধা কোথায়?

মে ২১, ২০২৫

© Analysis BD

No Result
View All Result

© Analysis BD