অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জামায়াতে ইসলামীকে ‘গরিবের বউ’ মনে করে সবাই এই দলটিকে নিয়ে খেলতে পছন্দ করে। কয়েক বছর ধরে এই খেলাটি চলে আসছে। তবে যারাই জামায়াতের সঙ্গে খেলতে মাঠে নেমেছে কেউই উইকেট বাঁচিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে পারেনি। দেখা গেছে সবাই ছক্কা মারতে গিয়ে বোল্ড আউট হয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
২০০৬ সালে প্রথম জামায়াতকে নিয়ে খেলাটা শুরু করেছিলেন বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভুইয়া, সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। তাদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন ছিলেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত। এ পরিকল্পনার সঙ্গে তারা জড়িত ছিলেন। কারণ, ওই দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে পল্টনে জামায়াতের সমাবেশস্থলের আশপাশে কোনো পুলিশ দেয়া হয়নি।
এমনকি জামায়াতের তৎকালীন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও বিএনপি মহাসচিবকে একাধিকবার ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেনি। অথচ একই দিন নয়াপল্টন বিএনপির কার্যালয় এলাকা ছিল পুলিশি বেষ্টনির ভেতর। জামায়াত-শিবিরকে নিশ্চিহ্ন করাই ছিল তাদের টার্গেট। কিন্তু, এ খেলার পরিণাম একজনেরও ভাল হয়নি। মান্নান ভুইয়া ও সাইফুর রহমান দুই জনই দল থেকে বহিষ্কারের পর্যায়ে ছিল। তাদের মৃত্যুও ভালভাবে হয়নি। আর লুৎফুজ্জামান বাবরের অবস্থাতো সবার চোখের সামনেই।
এরপর জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করতে মাঠে নেমেছিলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। জামায়াতের কয়েকজন নিরপরাধ শীর্ষ নেতাকে অন্যায়ভাবে বিচারপতি সিনহা বিচারের নামে হত্যা করেছেন। জামায়াতে ইসলামী নিশ্চিহ্ন হয়নি। কিন্তু, সিনহার পরিণাম! একটা পর্যায়ে এসে লাঞ্চিত, বঞ্চিত ও অপমাণিত হয়ে তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তদন্তের নামে মিথ্যা-ভিত্তিহীন ডকুমেন্ট তৈরি আর ভুয়া সাক্ষীর তথ্য দিয়ে জামায়াতের নিরপরাধ নেতাদেরকে অপরাধী বানিয়েছিলেন। তার পরিণামও হয়েছে বিচারপতি সিনহার মতই। রস খাওয়া শেষে একপর্যায়ে সরকার তাকেও লাথি মেরে ফেলে দিয়েছে।
তারপর জামায়াতের সঙ্গে খেলতে মাঠে নেমেছিলেন সাবেক এক পদচ্যুত রাষ্ট্রপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও তার ছেলে মাহী চৌধুরী। তাদের আবদার- জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ না দিলে তারা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেবেন না। কারণ, জামায়াত স্বাধীনতা বিরোধী। অবশেষে কী হলো? বাপ-বেটা শুধু জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকেই বাদ পড়েনি, নিজের হাতে গড়া দল থেকেও তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
এবার জামায়াতকে নিয়ে খেলতে মাঠে নেমেছেন বিএনপি নেতা এডভোকেট আহমেদ আযম খান। শনিবার রাতে বেসরকারি টিভি চ্যানেল নিউজ২৪ এর জনতন্ত্র-গণতন্ত্র নামক টকশোতে আলোচক ছিলেন। টকশোতে জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেছিলেন-বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললেও এরপক্ষে কাউকে পাওয়া যায় না। তার একথার জেরে আযম খান বলেছেন, যারা স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করবে না তাদের এদেশে কোনো রাজনীতি করার অধিকার নেই। স্বাধীনতা আমাদের একটি বড় অর্জন। জামায়াতের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যারা যখন, যে প্রেক্ষিতে মনে করেছিল যে এটা সঠিক নয়, তাদের যদি এখনো রিয়েলাইজেশন (উপলব্ধি) না হয় তাহলে এদেশে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এদেশে থাকারও তাদের কোনো অধিকার নেই।
এখানে আযম খান পরোক্ষভাবে যে জামায়াতকে বলেছেন এতে কোনো সন্দেহ নেই। হয়তো কোনো পরিস্থিতির কারণে তিনি জামায়াতের নাম মুখে নেননি।
জামায়াতে ইসলামী কী কারণে ওই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি সেটার ব্যাখ্যা দলটির সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম একাধিকবার দিয়েছেন। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ ভাগ হওয়ার পর এটার ওপর ভারত আগ্রাসন চালাবে এমন আশঙ্কা থেকেই জামায়াত যুদ্ধে অংশ নেয়নি। স্বাধীনতার পরই জামায়াত স্বাধীন বাংলাদেশকে মেনে নিয়েছে। বিগত ৪৭ বছরের মধ্যে জামায়াত নেতারা একদিনও এদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে কথা বলেনি। বরং দেশবাসী জানে, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করে যাচ্ছে জামায়াতে ইসলামী।
আহমেদ আজম খানেরও জানা আছে যে, জামায়াতে ইসলামী সত্যিকারের একটি দেশপ্রেমিক দল হওয়ার কারণেই তার দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বিগত ১৮ বছর ধরে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। দেশি-বিদেশি অনেক চাপের পরও খালেদা জিয়া জামায়াতকে ছাড়েন নি।
অথচ আজম খান আজ আকারে ইঙ্গিতে বলছেন, জামায়াতের এদেশে কোনো রাজনীতি করার অধিকার নেই। এদেশে তাদের থাকার অধিকার নেই। আজম খানের উচিত জামায়াতের সমালোচনা না করে চৌধুরী পরিবারের দিকে তাকানো।