অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে সার্বিক পরিস্থিতি এখন সরকারের প্রতিকূলে। কোটা আন্দোলনের আগ পর্যন্ত সরকার মনে করছিল সব কিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। মাঠে নামার মতো কোনো শক্তি আপাতত দেশে নেই। কিন্তু কোটা আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে তিনি তড়িগড়ি করে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর কোটা আন্দোলন বন্ধ হলে সাময়িক স্বস্তি ফিরে এসে সরকারের লোকজনের মধ্যে।
কিন্তু, কিছুদিন সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্কুল-কলেজের শিশু-কিশোররা নেমে আসে রাস্তায়। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও। দেখা গেছে, এক পর্যায়ে পরিস্থিতি পুরোটাই সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। কার্যত ছাত্র আন্দোলনের সময় সরকারের কোনো আদেশ-নিষেধই কার্যকর হয়নি।
ছাত্র আন্দোলন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিতে পারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর এমন রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার নির্মম নির্যাতনের মাধ্যমে ছাত্র আন্দোলন দমন করে।
এদিকে, সরকারের এই অস্থির সময়ের মধ্যেই আবার সরকারের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মাঠে আসে ড. কামাল, বি. চৌধুরী, আ স ম রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ সুশীল সমাজের লোকজন। ইতিমধ্যে তারা যুক্তফ্রন্ট গঠন করে বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গঠনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। তবে, সরকার মনে করছে তৃতীয় এই শক্তিকে সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামাচ্ছে মার্কিন দূতাবাস। বিদেশিদের সহযোগিতায় তৃতীয় শক্তি ক্ষমতা দখলের চক্রান্ত করছে বলেও সরকারের অভিযোগ। এনিয়ে এখন সরকারের মধ্যে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।
এরই মধ্যে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রে গেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মির্জা ফখরুলের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব বৈঠক করবেন।
মির্জা ফখরুলের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর পরই এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে গেছে।
বিশেষ করে নির্বাচনের আগে মির্জা ফখরুলের জাতিসংঘে যাওয়ার খবরে সরকারি মহলে চরম অশ্বস্তি বিরাজ করছে। কারণ, আগামী ২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে। জাতিসংঘের এই গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনের আগে সংস্থাটির মহাসচিবের সঙ্গে বিএনপি মহাসচিবের এই বৈঠক সরকারকে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকার মনে করছে, বিএনপির অভিযোগের ভিত্তিতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের বিষয়টি উত্থাপন হতে পারে। আর উত্থাপন হলেই বড় ধরণের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।
দ্বিতীয়ত: সরকার মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র যেহেতু সরকারের বিরুদ্ধে তৃতীয় শক্তিকে মাঠে নামাচ্ছে, তাই জাতিসংঘও বিএনপিকে আগামী নির্বাচন নিয়ে কোনো সবুজ সংকেত দিতে পারে। বিএনপির অভিযোগ আমলে নিয়ে জাতিসংঘ এবার বড় ধরণের চাপ দিতে পারে। যাতে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো কোনো একদলীয় নির্বাচনের আয়োজন না করে। এছাড়া জাতিসংঘ চাইলে তাদের অধীনেও নির্বাচন করতে চাপ দিতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব নিয়ে এখন সরকারের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।