অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
প্রায় ২০ বছরের রাজনৈতিক জোট ও ভোটবন্ধু বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার সুসম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র প্রার্থিতা দেওয়াকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে এ দুই রাজনৈতিক দল। গত সিটি নির্বাচনগুলোতে মেয়র পদে বিএনপিকে সমর্থন দিলেও সিলেটে তা প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করলো জামায়াত।
শুক্রবার (২৯ জুন) রাতে সিলেটে এককভাবে জামায়াতের প্রার্থিতার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দলের প্রভাবশালী নায়েবে আমির মিয়া গোলাম পরওয়ার। এক প্রশ্নের উত্তরে একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘বিশ্বাস হয় না? আমাদের মেয়র প্রার্থীর কথা তো প্রতিদিনই প্রকাশ্যে আসছে। সিসিক নির্বাচন নিয়ে আমাদের সমঝোতা হয়নি। সমঝোতা হলে তো আমরা বলি। মনোনয়নপত্র দাখিল হয়ে গেলো, আর কী আনুষ্ঠানিকভাবে বলবো? আমাদের দলীয় নেতাকর্মীরাও কাজ করছেন।’
জামায়াতের এই নেতার ভাষ্য, ‘আমরা তো কথা কম বলি। নির্বাচন পরিচালনা কমিটি আছে। কাজও শুরু হয়েছে। আর প্রার্থিতার কথা জানান দেওয়ার ওপর তো নির্বাচনে জেতা নির্ভর করে না।’
যদিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, প্রয়োজনে আরও হবে। তাদের প্রার্থী প্রত্যাহারের বিষয়ে সমঝোতায় আসার সম্ভাবনা আছে। আপস করার সম্ভাবনা তো সবসময়ই আছে।’
এক্ষেত্রে আশাবাদী হওয়ার মতো কিছু দেখছেন কিনা, এমন প্রশ্নে বিএনপির মহাসচিবের উত্তর, ‘আশাবাদী হওয়ার কথা তো বলছি না। আমি বলছি, সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’
মির্জা ফখরুল সমঝোতার সম্ভাবনার কথা বললেও সিলেট জেলা (দক্ষিণ) জামায়াতের আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনও কোনও কিছু হয়নি। জোট থেকে জামায়াতের প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’
সমর্থন না পেলেও কি জামায়াতের প্রার্থী প্রত্যাহার করা হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য মাওলানা হাবিবুর রহমানের ভাষ্য, ‘জোটগতভাবে সমর্থন না হলেও জামায়াত একাই নির্বাচন করবে। নির্বাচন আমরা করবই। তাছাড়া স্থানীয় নির্বাচন তো জোটগত নয়, জোট হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের জন্য।’
এদিকে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে জোটের প্রার্থী হিসেবে তাকে সমর্থন দিতে আহবান জানিয়েছেন জামায়াতের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের ।
গতকাল রাতে আরিফের কুমারপাড়াস্থ বাসায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এক বৈঠকে বিএনপি নেতারা জুবায়েরকে জোটের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহবান জানান। এর প্রতিক্রিয়ায় আজ শনিবার সকালে এডভোকেট জুবায়ের বলেন, জামায়াত বিশ দলীয় জোটের প্রধান শরিক দল। দেশের ১২ টি সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ১১টিতেই বিএনপিকে ছাড় দিয়ে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ ও ভোট দিয়েছেন জামায়াত নেতাকর্মীরা ।
একমাত্র সিলেটে আমরা বিএনপির সমর্থন প্রত্যাশা করে স্থানীয়ভাবে ও কেন্দ্রিয়ভাবে প্রস্তাব রেখেছিলাম। কিন্তু জোটের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তিনি জানান, জোটের অধিকাংশ দলের সমর্থন তার প্রতি রয়েছে বিধায় আরিফুল হক চৌধুরীকে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে জোটের প্রার্থী হিসেবে তাকে সমর্থন দেওয়ার আহবান জানান ।
এক প্রশ্নের জবাবে এডভোকেট জুবায়ের বলেন, এটি স্থানীয় নির্বাচন। জোট গঠন হয়েছে জাতীয় নির্বাচন ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য। সুতরাং এর প্রভাব জোটে কিংবা জাতীয় নির্বাচনে পড়বে না ।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের কোন বক্তব্য ছিলনা,এখনও নেই আমরা কারো বিরুদ্ধে বিষোদগার মুলক বক্তব্যও দিবনা । যারা প্রার্থী হয়েছেন সাবাই যাার যার জায়গায় যোগ্য। তিনি বলেন, আমরা আশাবাদী বিএনপি শেষ মুহূর্তে হলেও আমাদেরকে সমর্থন দিয়ে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে ।