মুসাফির রাফি
পবিত্র রমজান মাস সংযমের মাস। আত্মশুদ্ধির মাস। তাকওয়ার মাস। এই মাসে আমরা অন্য মাসের তুলনায় একটু বেশী ইবাদত করার চেষ্টা করি বাড়তি সওয়াবের আশায়। রহমত, বরকত ও নাযাতের এই মাস থেকে আমরা নিজেদেরকে গুনাহমুক্ত করারও চেষ্টা করি। যে ব্যক্তি রোজার মাস পেলো কিন্তু এর হক আদায় করতে পারলোনা, নিজেকে গুনাহমুক্ত করে সদ্য প্রসূত নিষ্পাপ শিশুর মত বানিয়ে নিতে পারলোনা, তার মত হতভাগা কেউ নেই।
ইফতার ও সাহরী রোজার মাসের অপরিহার্য ইবাদত। আমরা সাহরী করে রোজা শুরু করি আর ইফতার দিয়ে সেই উপবাসটি ভঙ্গ করি। হাদীসে আছে, একজন রোজাদারের জন্য দুটি আনন্দের সময়, এক যখন সে ইফতার করে এবং দুই যখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করে।
এত মহিমান্বিত এই মাস এবং এর ইবাদত নিয়ে আমরা তেমন একটা সিরিয়াস থাকিনা। আগাগোড়াই রোজার মাসের হক আদায় করা হয়না আমাদের। বছর কয়েক আগে রোজার মাসের পবিত্রতা নষ্ট বলতে আমরা বুঝতাম দিনের বেলায় হোটেল খোলা রাখা, অশ্নীল সিনেমার পোস্টার লাগানো, প্রকাশ্যে খাবার রাখা, রোজার সময় গান বাজনা ইত্যাদি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দিনের বেলায় মার্কেটিংটাও রোজার পবিত্রতাকে ক্ষুন্ন করার একটি কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তবে ইদানিং বেশ কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে তথাকথিত ডিজিটাল জমানা শুরু হওয়ার পর নতুন এক ট্রেন্ড শুরু হয়েছে। একটা হলো টিভিগুলোতে রান্নার অনুষ্ঠান। আর দুই ইউটিউবে ইফতার ও সাহরী নিয়ে নানা ভিডিও ভ্লগ নির্মান।
টেলিভিশনের রান্না আয়োজন দেখলে মনে হয়, রোজা এসেছে আরো বেশী করে খাওয়ার জন্যই। এসব অনুষ্ঠানে উপস্থাপক নারী বা অতিথিরা নারী হলেও তাদের মাথায় কাপড় থাকেনা, পড়নের পোশাকেও শালীনতা নেই। ইফতারির আগ মুহুর্তে এই প্রোগ্রামগুলো এবং এগুলোর স্পন্সর হিসেবে নানা ধরনের বিজ্ঞাপনও আমাদেরকে দেখতে হয়। আর সে কারনেই যে মুহুর্তগুলো ছিল দোয়া কবুলের সময়, সবচেয়ে গুনাহ মাফের সময়, সেই ইফতারির আগ মুহুর্তে এসেই বরং আমাদের রোজা বরং বেশী হালকা হয়ে যায়।
ইউটিউবে হালে অনেক ইউটিউবারের জন্ম হয়েছে। বেশী হলে যা হয়, অধিকাংশ ইউটিউবারেরই কোন মান নেই। কনটেন্ট দুর্বল। ভাষাও যাচ্ছে তাই। তারা সস্তায় ক্যামেরা কিনে নেমে পড়েছেন রাস্তায়। আমাদের যাদের ইউটিউব দেখার অভ্যাস আছে, তারা পড়েছেন যন্ত্রনায়। প্রতিনিয়ত এই সব ছবি, ভিডিও’র প্রোমোশোনাল আসতেই থাকে। যেভাবে তারা ইফতার নিয়ে যুদ্ধে নামেন, আইটেমের পর আইটেম খান সেগুলো আসলে রোজার কোন শালীনতায় পড়ে জানিনা।
এমনকি বাড়ীর মহিলাদেরকে নিয়ে রাতের বেলায় সাহরী খেতে যায় অনেকেই। সাহরী পার্টিরও ট্রেডিশন চালু হয়েছে। অত্যন্ত বেদনাদায়ক। সামান্য কয়টা লাইক, কমেন্ট আর শেয়ারের জন্য রোজার দিনে, তাহাজ্জুদের সময়ে যেভাবে আমরা ক্যামেরা লাইট আর বাড়ীর মেয়েদেরকে নিয়ে নেমে পড়েছি, আনন্দ করছি তাতে আর যাই হোক, রোজার হক আদায় হচ্ছে বলে মনে হয়না। জানিনা এভাবে ভ্লগাররা ভিডিও বানিয়ে কয় টাকা কামাই করেন, তবে তারা রোজার মাসের নেয়ামত থেকে যে বঞ্চিত হচ্ছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই।