অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
একটি সাদামাটা হিন্দু পরিবার। পরিবারের ৫ বছরের শিশু রোহিত কৌল। সে তার অন্য ৩ ভাইবোনের সাথে বাড়ীর উঠোনে বসে খেলছে। তাদের বাসাটি দক্ষিন কাশ্মীরের (জম্মু কাশ্মীর) অনন্তনাগ জেলার লাভডোরা গ্রামে। এই শিশুগুলো এখন অনেকটাই চুপচাপ, নিজেদের মত করেই থাকে। কেননা মাত্র ৩ মাস আগে তাদের মা বেবী কৌল মারা যান। প্রচন্ড বুক ব্যাথা ও শ্বাস কষ্টে মৃত্যু হয় তার। আর এক বছর আগে তাদের পিতা মহারাজ ক্রিশানও মারা যান।
এই অসহায় হিন্দু পরিবারের পাশে তার ধর্মীয় কোন সহযাত্রীরা এসে দাঁড়ায়নি। অথচ সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এলাকার অন্যন্য মুসলমান পরিবারগুলোই। গোটা ভারতে যখন হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলছে সেখানে কাশ্মীরের এই গ্রামটির এহেন বাস্তবতা সর্বত্র আলোচনায় এসেছে।
বিগত বছরগুলোতে গরুর গোশতসহ আরও নানা ইস্যুকে কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশ কতগুলো সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যাতে প্রানও হারিয়েছে অসংখ্য নিরীহ মুসলমান। ২০১৭ সালের এপ্রিলে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি গবেষনায় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার দিক থেকে বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ভারতকে চতুর্থ জঘন্য রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
ভারত নিয়ন্ত্রিত এই জম্মু কাশ্মীরে মুসলমানরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ যদিও সেখানে হিন্দু, শিখ ও খৃষ্টানসহ অন্যন্য সংখ্যালঘুরাও বসবাস করছে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে সেই ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকেই।
বেবী কৌল মারা যাওয়ার পর আশেপাশের মুসলমানসহ অন্য ধর্মের অনেকেই এসে হিন্দুধর্ম মতে তার সৎকারের আয়োজন করে। এই কৌল পরিবারটি আগাগোড়াই দারিদ্রতার কষাঘাতে বিপর্যস্ত। পরিবারের মুল দুই অভিভাবকের মৃত্যু প্রতিবেশীদের সকলকেই নাড়া দিয়ে যায়। সবাই একজোট হয়ে এই অসহায় শিশুগুলোর পাশে এসে দাঁড়ায়। এই মুসলমান প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শিশুগুলো এতটাই আদর ও ভালোবাসা পাচ্ছে যে আত্মীয় স্বজনরা এসে বেশ কয়েকদফা তাদেরকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তারা তাদের সাথে চলে যেতে রাজী হয়নি।
গ্রামবাসী সকল মুসলমানেরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা এই পরিবারটিকে এখনকার মত করেই সাহায্য করে যাবে এবং হিন্দু শিশুগুলোকে সঠিকভাবে বড় করার জন্য প্রয়োজনীয় সব কিছু করবে।
ভারতে মুসলমানদের এই ধরনের মানবিক আচরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগে অমরনাথ তীর্থ যাত্রার সময়েও হিন্দুরা যাতে কাশ্মীরের বরফ ঢাকা পথ পেরিয়ে সুস্থভাবে যেতে পারে সেই জন্য মুসলমানেরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো।
এই বছরের গোড়ার দিকে উত্তর কাশ্মীরের বান্দিপোরা অঞ্চলের সুমবাই গ্রামের মুসলমানেরাও স্থানীয় একটি হিন্দু মন্দির পরিস্কার করার উদ্যেগ নেয় যাতে হিন্দুরা আনন্দের সাথে পুজা উদযাপন করতে পারে।
মুসলমানদের মানবিক এইসব আচরনের প্রভাব পড়ছে হিন্দুদের উপরও। ভারতের অন্য স্থানের হিন্দুরা মুসলমানদের প্রতি প্রচণ্ড আক্রোশ প্রদর্শন করলেও কাশ্মীরের হিন্দুরা চলতি বছরের ঈদে মিলাদুন্নবীর শোভাযাত্রায় মুসলমানদের সহযোগিতা করেছে এমনকি অনেকক্ষেত্রে বাচ্চাদের মধ্যে চকলেটও বিতরন করেছে।