অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সম্প্রতি বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এক মাদ্রাসার অধ্যক্ষের মাথায় প্রতিপক্ষ লোকজনের মলমূত্র ঢেলে উল্লাস করার মত অমানবিক ঘটনা সংগঠিত হয়। ফেসবুকে ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় এই ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জানা যায়, মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনে অধ্যক্ষ (সুপার) আবু হানিফা (৫০) এক সভাপতি প্রার্থীর পক্ষ নেওয়ায় পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তাঁর সহযোগীরা তার মাথায় মলমূত্র ঢেলে প্রতিশোধ নেয়।
এ নিয়ে মাদরাসা সুপার আবু হানিফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের দাখিল মাদরাসার কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সংসদ সদস্যের মনোনীত ব্যক্তি এইচ এম মজিবুর রহমান সভাপতি’র দায়িত্ব গ্রহণ করেন। অন্যদিকে মাদরাসার সভাপতি পদপ্রার্থী ছিল জাহাঙ্গীর খন্দকার। সে এই কারণে আমার প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। গত শুক্রবার আমি আমার মসজিদে ফজর নামায আদায় করে, অজিফা পাঠ করে, সালাতুল ইশরাক আদায় করে ৬.৫০মিনিটে মসজিদ থেকে বের হই। তারপর মাসুম সরকার নামক একজন (জাহাঙ্গীর খন্দকারের দলীয় লোক) আমায় ফোন করে ব্রীজের উপর আসতে বলে। আমি বলি মাদরাসায় বা বাড়ী আসুন, সে বলে না একটা গোপন কথা আছে ব্রীজের উপর আসুন। আমি গেলাম। তারপর পেছনে জাহাঙ্গীর খন্দকার কে দেখলাম। আমি তাকে আসসালামু আলাইকুম.. বলে মোসাফাহ করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। সে আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে এবং সাঙ্গপাঙ্গসহ আমাকে অপদস্ত করে।’
এদিকে প্রধান অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর খন্দকারের রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রথম আলো ও সমকাল পত্রিকা জানিয়েছে তিনি স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা। ‘বরিশালে জাপা নেতার এ কেমন প্রতিহিংসা!’ শিরোনামে প্রতিবেদনে সমকাল জানায়, ওই মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি স্থানীয় জাপা নেতা (পদহীন) জাহাঙ্গীর খন্দকারের নেতৃত্বে তার ছেলে ও ভাইয়ের ছেলেসহ চার-পাঁচ যুবক এই নিকৃষ্ট ঘটনা সংগঠিত করে। এলাকার কেউ কেউ জাহাঙ্গীর খন্দকারকে নারী পাচার ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করেন।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। প্রথম আলোর ভাষ্যমতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু হানিফা এক সভাপতি প্রার্থীর পক্ষ নেন। এর জের ধরে গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর আবু হানিফা মসজিদ থেকে বের হলে তাঁকে ডেকে নিয়ে প্রকাশ্যে তাঁর মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেয় পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তাঁর সহযোগীরা। অপদস্থকারীরা এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে। বিষয়টি কাউকে জানাতে চাননি অধ্যক্ষ। তবে অপদস্থকারীরা পরে এই ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। ভিডিওটি ভাইরাল হলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ঘটনা তদন্তে মাঠে নামে।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আবু হানিফা বিষয়টি ভুলে যেতে চেয়েছিলেন। পরে পুলিশের আশ্বাসে তিনি ওই ঘটনায় গতকাল বাকেরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ গতকালই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে।
অভিযোগ ওঠা ব্যক্তিরা হলেন পরিচালনা পরিষদের পরাজিত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর খন্দকার, তাঁর সহযোগী জাকির হোসেন জাকারিয়া, মো. মাসুম সরদার, মো. এনামুল হাওলাদার, মো. রেজাউল খান, মো. মিনজু, সোহেল খন্দকার, মিরাজ হোসেন। তাঁরা সবাই একই এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে জাহাঙ্গীর খন্দকার জাতীয় পার্টির স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অন্যদের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। (প্রথম আলো)
আবু হানিফা লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, গত ফেব্রুয়ারিতে মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের নির্বাচনে তিনি সভাপতি প্রার্থী এইচ এম মজিবর রহমানের পক্ষ নেন। নির্বাচনে মজিবর রহমান বিজয়ী হলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। এরপর থেকেই জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে (অধ্যক্ষ) বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলেন। সবশেষ গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর তিনি মসজিদ থেকে বের হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা তাঁর পথ রোধ করেন। বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একজন তাঁর হাত ধরেন। অপর একজন তাঁর মাথায় মলমূত্র ঢেলে দেন। এ সময় উপস্থিত সবাই উল্লাস করেন। এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেন তাঁরা।
এদিকে আবু হানিফাকে নিজেদের মতাদর্শী উল্লেখ করে এই ঘটনার নিন্দা ও বিচার দাবি করেছে সুন্নি মতাদর্শের ইসলামি সংগঠন আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত। সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তারা প্রধান অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর খন্দকারসহ সকল সহযোগীকে দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদানের আহ্বান জানান।
রঙ্গশ্রী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন বলেন, বিষয়টি অনেক পরে শুনেছেন তিনি। সমাজের সম্মানিত পেশার একজন ব্যক্তিকে এভাবে কেউ অপমানিত করতে পারে, তা ভাবতেও তাঁর ঘৃণা হয়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম প্রথম আলো পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বিষয়টি জানাতে চাননি। কিন্তু ভিডিও ফেসবুকে তুলে দেওয়ায় তা জানাজানি হয়েছে। আমরা গতকাল ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে কাজ শুরু করেছি। ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে।’