অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বোরকা পরে ঘুষের টাকা আনতে গিয়ে অবশেষে ধরা খেলেন সরকারের বিতর্কিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। এদেশে বিতর্কিত যে কয়জন নারী আছেন তার মধ্যে তুরিন আফরোজ অন্যতম। তুরিন শুধু বামপন্থী চেতনায়ই উজ্জিবিত নন, তিনি একজন চরম ইসলাম বিদ্বেষীও বটে।
দলীয় লোক দিয়ে গঠিত কথিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সরকার তুরিন আফরোজকে নিজেদের ঘরের লোক মনে করেই প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। কথিত ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর তুরিন আফরোজ আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে।
জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের কথিত অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এমন কোনো অসৎ পথ নেই তুরিন আফরোজ যা অবলম্বন করেনি। প্রসিকিউটর হয়েও নির্লজ্জের মতো শাহবাগের বিতর্কিত গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচারের স্লোগান দিয়েছেন।
ট্রাইব্যুনালে গিয়ে ক্ষমতার দাপটে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে অশালীন ভাষায় গালি গালাজ করতেন। ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে আইনি যুক্তি উপস্থাপনকালে ‘পশু’ ও ‘নরপশু’ বলে গালি দেন। পরের দিন জামায়াতের আইনজীবী এডভোকেট শিশির মনির বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করলে আদালত তাকে তলব করে।
তারপর, জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রায়ের পর তুরিন আফরোজের ভুমিকা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু। গণমাধ্যমের কাছে সেদিন তুরিন আফরোজ এমন ভাষা ব্যবহার করেছিল যা কোনো ভদ্র-সভ্য মানুষের মুখ থেকে বের হতে পারে না।
অন্যদিকে তুরিন আফরোজ টিভি টকশোতে গিয়েও সর্বদা জামায়াত, ইসলামি শিক্ষা, ইসলামী সংগঠন, মসজিদ, মাদরাসাসহ এদেশের আলেম ওলামার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যাচ্ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তুরিন আফরোজ তার নিজ এলাকা নীলফামারীতেও বিতর্কিত হিসেবে পরিচিত। সরকারের তিন বছর পূর্তির অনুষ্ঠানে স্থানীয় এমপি গোলাম মোস্তফা প্রকাশ্যেই তুরিন আফরোজকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করেছেন। যা নিয়ে পরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।
এখন আবারো আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন বিতর্কিত সেই তুরিন আফরোজ। তবে এবার আলোচনায় এসেছেন অপকর্ম করতে গিয়ে ধরা খেয়ে। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হলো- চরম ইসলাম বিদ্বেষী তুরিন আফরোজ অপকর্ম করতে গিয়ে অবশেষে ইসলামের ফরজ বিধান বোরকার আশ্রয় নিলেন!
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) এবং পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে গত ২৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন ট্রাইব্যুনাল তাকে কারাগারে পাঠান।
ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান। জানা গেছে, গত ১১ নভেম্বর ওয়াহিদুল হকের বিরুদ্ধে করা মামলাটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজকে। এর এক সপ্তাহ পর তিনি ওয়াহিদুল হককে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সাক্ষাৎ করতে চান। তাকে যে কোনো দিন আটক করা হতে পারে বলেও তিনি কথোপকথনকালে জানান। প্রথমে নির্ধারণ হয় ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হকের গুলশানের বাসায় তাদের সাক্ষাৎ হবে। এ সময় তুরিন আফরোজ জানান, সহকারী ফারাবী বিন জহির অনিন্দকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বোরকা পরে তারা দুজন ওয়াহিদুল হকের বাসায় যাবেন। পরবর্তী সময়ে সাক্ষাতের স্থান পরিবর্তন হয়। তারা গুলশানে অলিভ গার্ডেন নামের একটি রেস্টুরেন্টে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রায় তিন ঘণ্টা মামলার নথিপত্র নিয়ে আলোচনা করেন। তখন মুহাম্মদ ওয়াহিদুল হককে তুরিন আফরোজের সহকারী ফারাবী বলেন, আপনি যে পদে ছিলেন, তাতে তো ২০-২৫ কোটি টাকা এমনিতেই ক্যাশ থাকার কথা।
যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আসামিকে বাঁচাতে গোপন বৈঠকে অর্থ লেনদেনের ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর এখন এনিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষক ও আইনজ্ঞরা মনে করছেন, যুদ্ধাপরাদের বিচারের জন্য গঠিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়ে জামায়াতে ইসলামী যে অভিযোগ এতদিন করে আসছে, তুরিন আফরোজের ঘটনার মাধ্যমে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে।