অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল গত মাসের শেষের দিকে ভারত থেকে আসার পরই অ্যানালাইসিস বিডির একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, তাদের ভারত সফর সফল হয়নি। আগামী নির্বাচনকে সামনে যে প্রত্যাশা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ভারত সফরে গিয়েছিল সে উদ্দেশ্য হাসিল হয়নি। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সভাপতি অমিত শাহ দেখা না করায় হতাশ হয়েই ভারত থেকে ফিরেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
এখন দিন যত যাচ্ছে ভারতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কিছু লক্ষণও দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বড় খাত হলো শেয়ারবাজার। আইন অনুযায়ী কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে মোট শেয়ারের ২৫ শতাংশ বিক্রি করতে হয়। চলতি বছর ডিএসইসি’র পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের পর ভারত-চীন এতে অংশ নেয়।
জানা গেছে, শেয়ারবাজারের উচ্চপর্যায়ের কিছু ব্যক্তি ভারতের কাছে শেয়ার বিক্রির তদবির করেন। কিন্তু, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সবুজ সংকেত পাননি। আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারত সফরের আগে কোনো পক্ষের কাছেই শেয়ার বিক্রির অনুমোদন দেয়নি সরকার। বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতারা সাক্ষাৎ করতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে এখন বিভিন্ন কাজে চিনকে বেছে নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে শেয়ারবাজারের ২৫ শতাংশ শেয়ার বন্ধুদেশ ভারতকে বাদ দিয়ে চিনের কাছে বিক্রি করা হয়।
তারপর গত মাসের ২৮ তারিখে পদ্মসেতুর রেল লাইন তৈরি নিয়ে চিনের সঙ্গে বড় একটি চুক্তি করেছে সরকার। এখন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভারতকে বাদ দিয়ে চিনকেই বেশি কাছে টানছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অনুসন্ধানে আরেকটি তথ্য জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জেলা নেয়ার পেছনে সরকারের যে উদ্দেশ্য ছিল তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। শেখ হাসিনার প্রধান টার্গেট ছিল বিএনপিকে ভেঙ্গে দুই টুকরো করা। কিন্তু সেটা হয়নি। তারপর প্রধানমন্ত্রীর ধারণা ছিল, খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি জামায়াত মাঠে নামবে। কিন্তু সেটাও হলো না। শেখ হাসিনার সর্বশেষ টার্গেট ছিল খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া। কিন্তু, সেটাও এখন পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের একটি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন, বিএনপি এখন ভারতের পরামর্শে চলছে। ভারতই পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংগঠিত করে রাখছে। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপিকে কোনো সহিংস আন্দোলনে নামতে দিচ্ছে না ভারতই। এসব কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের ওপর এখন প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ।
এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- ভারতকে বাদ দিয়ে সরকার এখন অতিমাত্রায় যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে। গত সপ্তাহে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের বাসায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সিনিয়র কয়েকজন নেতা বৈঠক করেছেন। অথচ বিগত ১০ বছরের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসায় আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বৈঠক করার কোনো নজির নেই। তারপর বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেখ হাসিনাকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে রোহিঙ্গ ইস্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে প্রকাশ করলেও ধারণা করা হচ্ছে মার্কিন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয় থাকতে পারে।
এদিকে ভারত মনে করছে, বাংলাদেশের কাছে আমেরিকার দীর্ঘদিনের চাওয়া সেন্টমার্টিনে একটি ঘাটি করা। শেখ হাসিনা হয়তো এবার তা দিয়েও দিতে পারে। আর বাংলাদেশ যদি এমন কিছু করে তাহলে সেটা হবে ভারতের জন্য ভয়াবহ বিপদ। তখন এ অঞ্চলে ভারতের আধিপত্য কমে যাবে।
এসব মিলিয়ে এখন ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই টানাপোড়েনে চলছে। শেখ হানিার সরকার থেকে ভারত এক প্রকার মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেই বলা যায়।