অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ৩ নেতাকে অপহরণ স্টাইলে তুলে নেয়ার দুই ঘন্টা পর আবার ছেড়ে দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশের সাদা পোশাকের একটি দল।
সোমবার বেলা পৌনে একটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের প্রবেশ ফটকের সামনে তাদেরকে রিকশা থেকে নামিয়ে টেনে হেঁছড়ে কালো গ্লাসের সাদা মাইক্রোবাসে করে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ।
এর আগে সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা প্রত্যাহারের জন্য সরকারকে ২ দিনের আল্টিমেটাম দেয় সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। অন্যথায় ফের আন্দোলনে নামার হুমকীও দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে গেলে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকে তুলে নেয়া হয় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল্লাহ নূর, রাশেদ খান ও ফারুক হোসেনকে।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় প্রায় দুই ঘন্টা পর দুপুর পৌনে তিনটার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঐ তিন নেতাকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ।
ছেড়ে দেয়ার পর সংবাদ সম্মেলনে ঐ তিন নেতা বলেন, তাদেরকে টেনে হেঁছড়ে গাড়িতে তোলার পর গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। মাথায় হেলমেট পড়ানো হয়। এরপর ডিবি অফিসে নেয়া হয়। সেখানে তাঁদের বলা হয়, তাঁদের কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখানো হবে। কিন্তু তাঁদের কিছুই দেখানো হয়নি। পরে তাঁদের নাম-ঠিকানা নিয়ে পৌনে তিনটার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে ডিবির যুগ্ম কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘তাদেরকে কিছু তথ্য সহযোগিতার জন্য আনা হয়েছিল। তারা চলে গেছে। তাদের কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। সেগুলোর বিষয়ে তাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। যদিও কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঐ তিন নেতা বলেছেন, তাদেরকে কোনো ভিডিওই দেখানো হয়নি।
ডিবি পুলিশের তুলে নেয়ার ব্যাপারে পরিষদের নেতা নুরুল্লাহ নূর বলেন, ‘এটি একটি অপহরণ। তুলে নেওয়ার সময় অনেকে দেখে ফেলেছিলো বলে বেঁচে ফিরে এসেছি।’
আন্দোলনকারী তিন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তাঁরা ও তাঁদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। রাশেদ খানের অভিযোগ, তাঁর বাবাকে ঝিনাইদহ সদর থানায় তুলে নিয়ে হয়রানি করা হয়। তাঁর বাবা একজন দিনমজুর।
এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের তিন নেতাকে এভাবে চোখ বেঁধে টেনে হেঁছড়ে জোরপূর্বক তুলে নেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হলে এভাবে চোখ বেঁধে টেনে হেঁছড়ে নেয়া হবে কেনো? নাগরিক হিসেবে ন্যয্য অধিকারের জন্য আন্দোলন করে আজ আমরা নিরাপত্তাহীন। রাষ্ট্র যেখানে সন্ত্রাস আর অপহরণ করছে, সেখানে নিরাপত্তা কার কাছে চাইবো?
আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সাদা পোশাকে ও পরিচয়পত্রহীনভাবে তিন শিক্ষার্থীকে তুলে নেয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শিক্ষক ও বুদ্ধিজীবি মহল। তারা বলেন, দেশ আজ সন্ত্রাসী রাষ্ট্রে রুপ নিয়েছে। মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। কথা বলার স্বাধীনতা নেই। যখন তখন যে কাউকে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কেউ জীবিত ফিরে আসছে, কেউ ফিরছে লাশ হয়ে, কেউ আবার হারিয়ে যাচ্ছে চিরদিনের জন্য। এই পরিস্থিতির অবশ্যই অবসান হওয়া দরকার।