অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
যেই শাহবাগ একসময় সরকারের একমাত্র ভরসা ছিলো, অন্যয়কে ন্যয় বানানোর হাতিয়ার ছিলো, সেই শাহবাগকে নিয়েই এখন আতঙ্কে আছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যুদ্ধাপরাদের বিতর্কিত বিচারের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে শাহবাগে কিছু লোককে বসিয়েছিল সরকার। কথিত আছে ভারতের টাকায় হালুয়া-রুটি আর বিরিয়ানি খেয়ে ইমরান সরকাররা শাহবাগে বসে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি তুলেছিল। তারা এখানে বসে জামায়াত নেতাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য সরকারের ওপর নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করতো।
শাহবাগের এই দাবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ওই সময় সংসদে দাড়িয়ে বলেছিলেন, যুদ্ধাপরাদের বিচারে আদালত যেন শাহবাগের দাবিকে বিবেচনায় নেয়। অর্থাৎ আদালতকে পরোক্ষভাবে নির্দেশ দিয়ে দিলেন, শাহবাগের দাবি অনুযায়ী আদালত যেনো কাদের মোল্লাসহ জামায়াত নেতাদের ফাঁসি দেয়।
এরপর শাহবাগের দাবির কাছে নতি স্বীকার করে দেশের আইনের শাসনের ওপর ছুরিকাঘাত করে আইন সংশোধন করে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকার। তার ধারাবাহিকতায় বিতর্কিত ও আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচিত এই বিচারের মাধ্যমে পরবর্তিতে ৫ জন জামায়াত নেতা ও একজন বিএনপি নেতার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
শাহবাগের অবস্থান কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারকে শুধু প্রশ্নবিদ্ধই করেনি, দেশের বিচার বিভাগকেও মারাত্মকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
এখন লক্ষণীয় বিষয় হলো, সেই শাহবাগ নিয়েই এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কোটা সংস্কার নিয়ে এই শাহবাগ থেকেই সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছিল শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এটাকে সরকারের সংকটময় সময় বলে আখ্যা দিয়েছেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অনিচ্ছা সত্ত্বেও শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শেখ হাসিনার কাছে তথ্য ছিল যে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতন আন্দোলনে রূপ নিতে পারে। এজন্য তিনি তড়িগড়ি করে দাবি মানার ঘোষণা দেন। তবে, দাবি মেনে নিয়ে আতঙ্ক কাটেনি শেখ হাসিনার। এখনো তিনি টেনশনে আছেন আবারো কোনো আন্দোলনের নামে কেউ আবার শাহবাগে বসে যায় কি না।
একটি সূত্র অ্যানালাইসিস বিডিকে জানায়, এসব নিয়ে তিনি দলের নেতাকর্মীদের কাছে তার উদ্বেগের কথাও জানিয়েছেন। রোববার সরকারি সফরে সৌদি ও যুক্তরাজ্যে যাওয়ার আগমুহূর্তে গণভবনে দলীয় নেতাকর্মীরা সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। শাহবাগে কেউ আবার বসছে কি না তাও তিনি জানতে চান।
প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, শাহবাগে কি আবার কেউ বসলো?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার কোনও চক্রান্ত হচ্ছে কিনা, সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখতে নেতাদের প্রতি তিনি নির্দেশ দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী বিদেশ যাওয়ার আগে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগকে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়ে গেছেন যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহবাগে যেন কোনো দাবি নিয়ে কেউ বসতে না পারে।