মুসাফির রাফি
আমার এই লেখার ইস্যুটি হয়তো একটু পুরোতন কিন্তু প্রেক্ষাপটটা খুবই বাস্তব এবং একই সংগে গুরুত্বপূর্ন। দুদিন আগে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কোটা সংস্কারের দাবীতে হওয়া আন্দোলনকে নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, লন্ডন থেকে ইন্সট্রাকশন দিয়ে বিএনপি এই আন্দোলনটি করার চেষ্টা করে পরিশেষে ব্যর্থ হয়েছে।
তখনই হঠাৎ কৌতুহল জাগলো। আন্দোলনের মধ্যে লন্ডন আসলো কোথা থেকে। পরবর্তীতে জানলাম, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনৈক শিক্ষক ড. মামুনকে ফোন দিয়ে এই আন্দোলনে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ করেছেন। আরো জানালাম, ড. মামুনের সাথে তারেক জিয়ার সেই ফোনালাপটি বাংলা ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়েছে। আর এখন নাকি ইউটিউবেও পুরো বক্তব্য পাওয়া যায়। সেই কৌতুহল থেকেই আজ সকালে ইউটিউবে ফোনালাপটি শুনলাম। সঙ্গে বোনাস হিসেবে একাত্তর টিভির এই সংক্রান্ত টকশোর কিছু অংশ দেখলাম যেখানে উপস্থাপিকা মিথিলা ফারজানা নানাভাবে ড. মামুনকে এই ফোনালাপের বিষয়ে প্রশ্ন করে বিব্রত করার চেষ্টা করেছেন।
যারা এই ফোনালাপটি শুনেছেন, নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন। আলাপটা খুবই সাদামাটা, গতানুগতিক ও নির্ভেজাল সৌজন্যতার কথোপকথন। আলাপে যেই কয়টা বিষয় আমার পর্যালোচনায় ধরা পড়লো তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু দিক হলো-
১. তারেক জিয়াকে আমার কাছে খুবই ভদ্র, সভ্য এবং মার্জিত একজন ব্যক্তিত্ব বলে মনে হয়েছে। যেভাবে তিনি ড. মামুনকে সম্বোধন করেছেন, তাকে সম্মান করেছেন- এটা আমার কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে। বিএনপির মত বিশাল দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি যুগলের সন্তান হওয়ার পরও তার বিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি তারেক জিয়ার খুব ভক্ত নই। তবে এই কথোপকথনটি আমার মত অনেককেই উৎসাহিত করবে বলে আমার ধারনা।
২. তারেক জিয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন জেলে যাওয়ার পর বেশ কিছু ভিকটিম পরিবারকে ফোন দিয়েছেন। এরকম কিছু খবর বিএনপির প্রেস উইং পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছে। সুতরাং এই ফোনটি লিক হয়ে বিএনপির কোন ক্ষতি হয়নি। আর যে কোন প্রয়োজনে যে কাউকে যে কোন ব্যক্তি ফোন দিতেই পারেন।
৩. ড. মামুন সচরাচর তারেক জিয়ার সাথে কথা বলেন না তাও এই কথোপকথনে প্রমানীত হয়েছে। যেভাবে তিনি তারেক জিয়ার শারীরিক খোঁজ নিচ্ছিলেন তাতে বোঝা যায় তারেক সাহেবের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ হয়না। তিনি তারেক জিয়ার সাথে কথা বলতে পেরে বেশ উৎসাহী, আনন্দিত এবং উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন, কথাবার্তার টোনে তা স্পষ্টতই বোঝা গেছে। বিএনপির প্রতি সহানুভুতিশীল একজন ব্যক্তির এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক।
৪. ফোনালাপের একেবারে শেষ দিকে ড. মামুন নিজের পরিচয় দিচ্ছিলেন যেখানে তিনি নিজেকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের একজন উপদেষ্টা হিসেবে তারেক জিয়ার কাছে পরিচিত হলেন। এটা দ্বারাও ড. মামুনের নির্ভেজাল সততা প্রমানীত হয়। কেননা তারেক জিয়া বিএনপির অনেক পদের অনেকের নিয়োগের নেপথ্যের মুল ব্যক্তি হিসেবে বিশ্লেষকরা ধারনা করেন। তাই ড. মামুনের এহেন পদে নিয়োগেও তারেক জিয়ার হাত থাকা অস্বাভাবিক নয়। অথচ তার কাছেই ড. মামুন নিজেকে বিএনপি সংশ্লিষ্ট হিসেবে যেভাবে প্রমান করার চেষ্টা করলেন তা তার সাদামাটা মানসিকতারই ইংগিত বহন করে।
আমি পুরো ফোনালাপটা শুনে বুঝতেই পারলাম না যে এখানে সমস্যাটি কোথায়। কেন এটাকে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা ইস্যু বানালেন আর কেনই বা একাত্তরের মত দলকানা মিডিয়াগুলো এর মধ্যে দুর্গন্ধ খুঁজতে শুরু করলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের একজন প্রতিনিধি হিসেবে তার সাথে তারেক জিয়া কথা বলতেই পারেন বা ছাত্রদের কোন আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার কথা বলতেই পারেন তাতে দোষটা কোথায়?
আমি নিশ্চিত করেই জানি, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বা ওবায়দুল কাদেরও হরহামেশাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী পন্থী নীল দলের শিক্ষকদের ফোন দেন। বর্তমান ভিসি আখতারুজ্জামান বা সাবেক ভিসি আরেফিন সিদ্দিক কিংবা ড. আনোয়ার হোসেন এরা সবাই তো নীল দলের প্রতিনিধি। তারা আওয়ামী লীগের ইন্ধনেই নানা কর্মসূচী নানা সময়ে দিয়েছেন- এটাও সবাই জানে। একইভাবে আওয়ামী লীগ মনা সাংবাদিক, চিকিৎসক বা প্রকৌশলীদেরকেও আওয়ামী লীগের নেতারা ফোন দিয়ে অনেক সময় অনেক এসাইনমেন্ট দেন। সেখানে ড. মামুনকে তারেক জিয়া ফোন দিলে অসুবিধাটা কোথায়?
গোটা আলাপে একটি বারও আইন বিরোধী কোন কথা তারেক জিয়া কিংবা ড. মামুন বলেননি। এত পরিশীলিত, মার্জিত আলাপ আমাদের দেশের রাজনীতিবীদেরা করেন, এটাই হয়তো অনেকেই জানেননা। আমি বরং বলবো, এই আলাপটি সকলের শোনা উচিত, প্রচার করা উচিত। অথচ আফসোস বিএনপির জন্য, যারা এত সুন্দর একটা কথোপকথনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের নোংরা প্রচারনা ও কুৎসিত রাজনীতির কাউন্টার কোন উত্তর দিতে পারলোনা।
পরিশেষে, কিছু মৌলিক প্রশ্ন তুলি-
১. বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক এই ফোনালাপটি কোথা থেকে সংগ্রহ করলেন?
২. আমাদের সবার ফোনকি যখন তখন যে কোন সাংবাদিক প্রচার করতে পারেন?
৩. এই অধিকার বা ক্ষমতা তারা কোথায় পেলেন?
৪. আওয়ামী নেতাদের ফোনালাপ কেন ফাঁস হয়না?
৫. সাংবাদিকদের স্ক্যান্ডালের কথা কেন লিক হয়না?
৬. আমার ফোন আরেকজন আমার অনুমতি ছাড়া কিভাবে রেকর্ড করে?
এই সব সিন্ডিকেটেড নোংরামীর এবং সকল প্রশ্নের জবাব একদিন দিতে হবে। সেদিন কুচক্রীদের যোগসাজশে হওয়া সকল ষড়যন্ত্রই প্রকাশিত হবে।