অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থী মোরশেদার রগ কেটে দেয়ার দায়ে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের শাখা সভাপতি ইফফাত জাহান এশাকে পুনরায় স্বপদে বহাল করেছে ছাত্রলীগ। শুক্রবার (১৩ এপ্রিল) তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও সেক্রেটারি জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এশার বাহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সংগঠনটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, তাদের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্তে এশা নির্দোষ প্রমাণীত হওয়ায় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে৷ তাই আজকে তার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়া হয়।’
এদিকে ছাত্রলীগের তদন্ত কমিটি গঠনের সময় থেকেই শিক্ষার্থীরা আশঙ্কায় ছিলো এশাকে নির্দোষ প্রমান করতেই ছাত্রলীগের কথিত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর তদন্ত কমিটিতে সংগঠনটির একজন বিতর্কিত মাদক ব্যবসায়ী নেত্রীও ছিলেন। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠে।
এদিকে ছাত্রলীগ নেত্রী এশা তার রুমে নিয়ে তিন ছাত্রীকে নির্যাতনের সুস্পষ্ট জবানবন্দিও দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ফাঁস হওয়া একটি অডিওতেও প্রমাণীত হয়েছে এশার নির্যাতনের ব্যাপরটি। অডিওতে এশাকে বলতে শোনা যায় যে, ‘আন্দোলন করলে হল থেকে বের করে দেব, পুলিশ দিয়ে রেপ করিয়ে দেব’। এছাড়া ঘটনার পর এশা জনসম্মুখে এসে তার কাজের জন্য ক্ষমাও চেয়েছিলো। তখন শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে জুতার মালাও পরায়। কিন্তু এরপরও ছাত্রলীগের কথিত তদন্ত কমিটি তাকে নির্দোষ ঘোষণা করলো।
ফাঁস হওয়া অডিও:
গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে কবি সুফিয়া কামাল হলে তিন ছাত্রীকে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় মারধর ও এক ছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দেয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা। এশা ঐ তিন ছাত্রীকে নিজ কক্ষে (৩০৭) ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেন। এসময় তাদের চিৎকার শুনে হলের অন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধারে এগিয়ে যান। তখন মোর্শেদা খানমকে পায়ের রগ কাটা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সাধারণ ছাত্রীরা হলটির মাঠে অবস্থান নিয়ে এশাকে বহিষ্কারের দাবি করেন। নিশ্চয়তা চান নিরাপদভাবে হলে অবস্থানের। এসময় ‘নির্যাতনকারীর কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘মরতে নয়, পড়তে চাই’, ‘বোনের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’- স্লোগান দিতে থাকে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করে ছেলেদের হল থেকে মিছিল নিয়ে কবি সুফিয়া কামাল হলের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে ৪-৫ হাজার শিক্ষার্থী। এসময় তারা এশাকে বহিষ্কারের দাবি করেন।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে এশাকে হল ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয় ছাত্রলীগ থেকেও। কিন্তু আন্দোলন স্থগিত হয়ে যাওয়ার পর এখন এশার বাহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলো ছাত্রলীগ।