বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আপাতদৃষ্টিতে ভালো আছেন। তবে তাঁর প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে এক্স-রে রিপোর্টগুলো পাওয়ার পর।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক আবদুল্লাহ আল হারুন সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন। এই হাসপাতালে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার এক্স-রে করা হয়েছে।
আবদুল্লাহ আল হারুন সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন হেঁটে ৫১২ নম্বর কক্ষ থেকে এক্স-রে কক্ষে ঢুকেছেন। সেখান থেকে হেঁটে গাড়িতে উঠেছেন। আবদুল্লাহ আল হারুন আরও বলেন, ‘তাঁর (খালেদা জিয়া) জন্য হুইলচেয়াররের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু তিনি আমাকে বলেছেন, হেঁটে যেতে পারবেন।’
বিএসএমএমইউয়ের এই পরিচালক বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে তাঁর হাড়ের বিভিন্ন অংশের যেসব এক্স-রে করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। হাসপাতাল থেকে মেডিকেল প্রতিবেদন কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। কারা কর্তৃপক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গঠন করা মেডিকেল বোর্ডকে দেবে। বোর্ডই পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে।
আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন তাঁর পছন্দের চারজন চিকিৎসককে এক্স-রে কক্ষে রাখার অনুরোধ করেছিলেন। সেই অনুযায়ী ওই চিকিৎসকদের সেখানে রাখা হয়। এঁরা হলেন ডা. ওয়াহিদুর রহমান, ডা. মামুন, ডা. এফ এম সিদ্দিকী এবং কারাগারে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আজ শনিবার বেলা দেড়টার দিকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে হাসপাতাল থেকে আবার কারাগারে নেওয়া হয়েছে। এর আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে তাঁকে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। বেলা ১টা ৩৩ মিনিটে তাঁকে বহনকারী গাড়ি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কারাগারের দিকে রওনা হয়। বেলা পৌনে দুইটায় তিনি কারাগারে পৌঁছান।
বিএসএমএমইউয়ের কয়েকজন চিকিৎসক জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় খালেদা জিয়া কেবিন ব্লকের ৫১২ নম্বর কক্ষে অবস্থান করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চার সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কয়েকটি এক্স-রে করা হয়।
খালেদা জিয়া কারাগার থেকে হাসপাতালে পৌঁছানোর পর কিছুটা হেঁটে গিয়ে লিফটে ওপরে ওঠেন। এ সময় তাঁর পরনে ছিল অফহোয়াইট রঙের জামদানি শাড়ি। তাঁর চারপাশে ছিল পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স ও কারারক্ষী।
হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ও খালেদা জিয়ার কয়েকজন ব্যক্তিগত চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের মধ্যে নিউরো মেডিসিনের ওয়াহিদুজ্জামান এবং মেডিসিনের এফ এম সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির চেয়ারপারসনের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও তাঁর দুই মেয়ে হাসপাতালে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন।
খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে হাসপাতালে আনা-নেওয়ার সময় ওই সব সড়কে যান চলাচল সীমিত করা হয়। পাশাপাশি পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রচুর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
নেত্রীর আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল ও কারাগার এলাকায় বিএনপির কিছু কিছু নেতা-কর্মীকে ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ হাসপাতালের সামনে জড়ো হওয়া বিএনপির কিছু কর্মীকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শাহবাগ থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করে থানায় রাখা হয়েছে।
খালেদা জিয়া কারাগারের উদ্দেশে হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার পর বিএনপির সমর্থকেরা আজিজ মার্কেটের সামনে থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি কাঁটাবন মোড় হয়ে হাতিরপুলের দিকে গেলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে তাঁকে সেখানে রাখা হয়।
সূত্র: প্রথম আলো