অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কথিত উন্নয়নের জোয়ারে ভাসছে সারাদেশ ও দেশের মানুষ। আওয়ামী লীগের দাবি বাংলাদেশ নাকি স্বল্পন্নোত থেকে উন্নয়নশীল দেশে প্রবেশ করেছে। তারা এটা কে তাদের মহান অর্জন হিসেবে দাবি করে বিশাল সমারোহে দেশব্যাপী উৎসব পালন করছে। গায়ে কথিত উন্নয়নের তকমা লাগিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার সারাদিনই রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা নিয়েছেন। আর সারাদেশে সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে বাধ্য করেছে আনন্দ র্যালি করতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কথিত উন্নয়ন উদযাপন করতে সরকার রাষ্ট্রের কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। অধিকাংশ এলাকাতেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উৎসবের কথা বলে টাকা নিয়ে নিজেদের পকেটে ঢুকিয়েছে। তবে, সরকার ডাক ঢোল পিটিয়ে কথিত উন্নয়ন উৎসব উদযাপন করলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এর কোনো প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।
এদিকে, সরকারের এই উন্নয়ন উদযাপন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন সহ সর্বমহলে বইছে সমালোচনার ঝড়। বিশিষ্টজনেরা এনিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের বিগত ৯ বছরের শাসনামলে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন কমপক্ষে অর্ধশত বার বাংলাদেশের খুন-গুম, বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ক্ষমতার অপব্যবহারের জন্য আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে বাসা-বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে খুন করেছে। অনেকের লাশও মিলেনি। আর বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম, জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আমান আযমী, মীর কাসেম আলীর ছেলে ব্যারিস্টার আরমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিবির নেতা অলিউল্লাহ ও আল মোকাদ্দেসসহ জনপ্রিয় আরও অনেক নেতাকে সরকার গুম করেছে। আজ পর্যন্ত যাদের কোনো খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের সদস্যরা।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও সরকারের এসব খুন-গুম ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বর্তমান সরকার যে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে খুন-হত্যা ও গুমের মাধ্যমে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে এটা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত।
অন্যদিকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী তাদের সকল প্রকার মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ঘরোয়াভাবেও তারা সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারে না। সভা-সমাবেশের সকল প্রকার অধিকার থেকে সরকার তাদেরকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এমনকি সাধারণ নাগরিকরাও আজ সরকারের অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করতে পারছে না।
এছাড়া নতুন নতুন কালো আইন করে সরকার দেশের গণমাধ্যমের কণ্ঠ চেপে ধরে রেখেছে। সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের অপকর্ম নিয়ে কিছু লিখলেই ওই গণমাধ্যম ও সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। বিশেষ করে ভিন্নমতের জনপ্রিয় কয়েকটি গণমাধ্যম সরকার বন্ধ করে দিয়েছে।
তারপর বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশে লুটপাট-দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। দেশের প্রধান পুঁজি বাজার থেকে কয়েক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সরকার এটাকে পঙ্গু করে দিয়েছে। নিজেদের লোক দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেয়ায় বেসরকারি খাতের অধিকাংশ ব্যাংকগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি যাওয়া টাকাও সরকার ফেরত আনতে পারেনি। বিশিষ্টজনদের মতে, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়ই রিজার্ভ থেকে এই টাকা নিয়েছে। এজন্যই অর্থমন্ত্রী এনিয়ে বেশি কিছু বলেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রের এমন কোনো অর্থনৈতিক সেক্টর নেই যেখান থেকে সরকারের লোকজন লুটপাট করেনি। এমনকি দেশের অর্থনীতির এই করুণ অবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশিষ্টজনদেরকে গাধা বলেও আখ্যা দিয়েছেন।
তারপর দেশের বিচার বিভাগের অবস্থা আরও বেহাল। বিচার বিভাগকে অনেকে আওয়ামী লীগের সহযোগি প্রতিষ্ঠান বলেও মন্তব্য করছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মতো বিচার বিভাগও সরকারের অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে পারেনি। সরকারের সামগ্রীক ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলায় বিচারপতি এসকে সিনহাকে শুধু পদ নয়, দেশও ছাড়তে হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে দেশের নিম্ন আদালতগুলোও সরকারের হুকুমের বাইরে কিছু করছে না। সাজাপ্রাপ্ত লোকজন নির্বিঘ্নে মন্ত্রী পদে টিকে থাকলেও টুনকো অজুহাতে বিরোধীদলের সিনিয়র নেতাদেরকে বছরের পর বছর জেল খাটতে হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সরকারের আমলে খুন-গুম, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ, লুটপাট, দুর্নীতি, দুঃশাসন, ন্যায় বিচারের অনুপস্থিতি সবই আন্তর্জাতিক মহল কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। কথিত উন্নয়ন নিয়ে জাতিসংঘ স্বীকৃতি দেয়ায় যদি রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে উন্নয়নের স্বীকৃতি উদযাপন করতে হয়, তাহলে সরকারের আন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের অপকর্মের যেসব স্বীকৃতি এসেছে সেগুলোও উদযাপন করা দরকার।