অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শেখ মুজিবুর রহমানের একক নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা এমন দাবি করলেও বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে এনিয়ে ঘোর আপত্তি রয়েছে। ইতিহাস থেকে যতটুক জানা যায়, ৭০‘র নির্বাচনের পর শেখ মুজিব স্বাধীনতা চায়নি। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষমতা।
যে ৭ মার্চের ভাষণকে আওয়ামী লীগ মানুষের মুক্তির সনদ হিসেবে আখ্যায়িত করছে, সেই ৭ মার্চের ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানকে চারটি শর্ত দিয়েছিলেন। পাকিস্তান যদি তার সেই শর্তগুলো মেনে নিতো তাহলে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে আদৌ আলাদা হতো না।
তারপর ২৫ মার্চের কালো রাতে দেশের সাধারণ মানুষকে বুলেটের মুখে ঠেলে দিয়ে শেখ মুজিব পাকিস্তানিদের হাতে ইচ্ছে করেই ধরা দিয়েছিলেন। এমন তার দলের নেতাদেরকেও আত্মগোপনে চলে যেতে বলেছিলেন। এসব থেকে স্পষ্ট বঝা যায় যে স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের কোনো অবদান নেই। যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে সাধারণ মানুষ। তারপরও এদেশের রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে মেনে নিয়েছে।
অপরদিকে, ২৫ মার্চের সেই ভয়াল রাতে নেতৃত্বহীনতার কারণে দেশের মানুষ যখন কোনো দিশা খুঁজে পাচ্ছিলো না তখন মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম কালোর ঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। যা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত। এমনকি যুদ্ধের সময় দেশকে যে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করা হয়েছিল তিনি ছিলেন একটি সেক্টরের কমান্ডার। স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবুর রহমানই তাকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন।
কিন্তু, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে আদালতের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের নাম বাদ দিয়ে সেই স্থলে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে। সমস্ত বই পুস্তক থেকেও জিয়াউর রহমান নাম বাদ দেয়া হয়। এই ভাবে একের পর এক বিভিন্ন স্থাপনা থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলে আওয়ামী লীগ সরকার।
জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলে সেখানে শাহজালালের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এমনকি সংসদ ভবনের পাশে চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে জিয়াউর রহমানের মাজারটিও সরানোর জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেছে সরকার।
সর্বশেষ বুধবার রাজধানীর শাহবাগে শহীদ জিয়া শিশু পার্ক থেকে জিয়াউর রহমানের নামটি বাদ দিয়ে শিশু পার্ক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জিয়াউর রহমানের নাম সম্বলিত নামফলকটি মুছে ফেলা হবে বলেও জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
সরকারের এই সিদ্ধান্তে বিশিষ্টজনসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মহান স্বাধীনতার ঘোষক ও বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত একজন মুক্তিযোদ্ধার নাম সকল স্থাপনা থেকে মুছে ফেলায় সরকারের প্রতি এখন মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ঘৃনার সৃষ্টি হয়েছে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর বিতর্কিত ভূমিকা থাকার পরও আওয়ামী লীগ সরকার তাকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা অপচয় করছে। মাওলানা আব্দুল খান ভাষানী শেখ মুজিবের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন। কিন্তু, আওয়ামী লীগ সরকার ভাষাণী নভথিয়েটারের নাম পরিবর্তন করে সেটাকে বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করেছে। এ কারণে ভালবাসার পরিবর্তে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের ঘৃনা সৃষ্টি হয়েছে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের সমান অবদান রয়েছে। এদেশের মানুষ দুইজনকেই ভালবাসে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই-পুস্তকসহ সারাদেশের স্থাপনা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলে তার বাবাকে প্রতিষ্ঠিত করার যে চেষ্টা করছেন, এক সময় এর ফলাফল হিতেবিপরীত হবে। শুধু স্থাপনা থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেললেই মানুষ জিয়াকে ভুলে যাবে না। বরং সরকারের এসব কর্মকা-ের কারণে বঙ্গবন্ধুর প্রতি মানুষের যে ভালবাসাটুকু ছিল সেটাও এখন চলে যাবে।