অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ১৭৩টি দেশের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায় তৃতীয় সৎ সরকার প্রধানের উপাধি পেয়েছেন। কোন কোন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান প্রথম ও দ্বিতীয় হয়েছে সেটা অবশ্য জানা যায়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্বে সৎ প্রধানমন্ত্রীর কোনো তালিকাই আসলে কেউ করেনি। এটা সম্পূর্ণ একটি ভুয়া ও বানোয়াট সংবাদ ছিলো। যা মূলত সরকারপন্থি বোরহান কবিরের গুজবনির্ভর নিউজ পোর্টাল বাংলা ইনসাইডার থেকেই পরিকল্পিতভাবে ছড়ানো হয়েছে। এর আগে শান্তিতে নোবেল ও শেখ হাসিনাকে জাড়িয়েও এই নামসর্বস্ব পোর্টালটি নানা গুজব ছড়িয়েছেলো।
তবে এটা ঠিক যে, সেই কথিত জরিপটি যদি এখন করা হয় তাহলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সততার দিক থেকে না হলেও অসততার দিক থেকে প্রথম মিথ্যাবাদী সরকার প্রধানের উপাধি পাবেন বলে মনে করছেন রাজনীতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, শুক্রবার রাতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে মিথ্যাচার করেছেন তার প্রথম হওয়ার শুধু এটাই যথেষ্ট।
শুক্রবার ‘ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৫ মার্চ সেনানিবাস থেকে একজন স্কুটার চালক তাদের কাছে একজন বাবুর্চির একটি ক্ষুদ্র বার্তা দিয়ে বলেন যে, পাকিস্তানিরা মাঝরাতের পরে দেড়টায় হামলা শুরু করবে। কিন্তু দখলদার বাহিনী সেদিন রাত ১১টাতেই হামলা শুরু করে। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে থামাতে চট্টগ্রামে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করায় জিয়াউর রহমান বাঙালিদের ওপর গুলি চালিয়ে অসংখ্য লোককে হত্যা করে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর এমনই দূরদর্শিতা ছিল যে, তিনি ভাল করেই জানতেন ১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠাতা পেলেও পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে না। সেজন্য বঙ্গবন্ধু আগেভাগেই কিভাবে গেরিলা যুদ্ধ করতে হবে, কিভাবে মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ পাবে এবং কারা বাঙালিদের সমর্থন করবে তা ভেবে রেখেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য নিয়ে এখন রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এমন বক্তব্য দেয়ায় বইছে সমালোচনার ঝড়ও। কারণ-
প্রথমত: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে থামাতে চট্টগ্রামে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করায় জিয়াউর রহমান বাঙালিদের ওপর গুলি চালিয়ে অসংখ্য লোককে হত্যা করে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আজ পর্যন্ত যত ইতিহাস রচিত হয়েছে একজন লেখকও তাদের গ্রন্থে এ কথা উল্লেখ করেননি যে, ২৫ মার্চের কালো রাতে চট্টগ্রামে বাঙালিদের ওপর জিয়াউর রহমান গুলি চালিয়েছিলেন। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও আজ পর্যন্ত এমন দাবি করেননি।
শনিবার বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীও বলেছেন, নাউজুবিল্লাহ, শেখ হাসিনা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ডাহা মিথ্যা কথা বলেছেন।
আর বিশিষ্টজনেরা বলছেন, শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাবেক রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ কথা বলেছেন। এর মাধ্যমে বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে মিথ্যাচারের দৌড়ে তিনি এগিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয়ত: তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান জানতেন পাকিস্তানিদের হামলার কথা। তাই তিনি আগেই প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা করে গেছেন। অথচ ইতিহাস বলছে ভিন্ন কথা।
ইতিহাস থেকে অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৫ মার্চ রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সমঝোতার প্রস্তাবের জন্য শেখ মুজিব জেনারেল পীরজাদার টেলিফোনের অপেক্ষা করেছেন। তখন ড. কামাল মুজিবের বাসায় বসা। ২৫ মার্চ দিনেই শেখ মুজিব বুঝতে পেরেছিলেন যে সমাঝোতা হবে না। একটা আর্মি অপারেশন হবে। তাই বিকেলেই তিনি আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল-রাজ্জাকসহ অন্যান্যদেরকে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে চলে যেতে বলেছিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তার বইয়ে এ তথ্য উল্লেখ করেছেন। আর তার দলের সেক্রেটারি জেনারেল তাজউদ্দিন আহমেদকে বলেছিলেন আত্মগোপন করতে। প্রতিরোধের কোনো কথা শেখ মুজিব কাউকে বলেন নি। বরং দেশের জনগণকে কঠিন বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে শেখ মুজিব পাকিস্তানি সেনাদের কাছে রাতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন।
ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সেই দিনের মন্তব্য থেকেও বুঝা যায় যে শেখ মুজিব আসলে কী করেছিলেন। ‘ঢাকা আগরতলা মুজিব নগর’ নগর নামক বইয়ে এম এ মোহাইমেন লিখেছেন, খন্দকার মোস্তাক বলেছেন, শেখ মুজিবের গ্রেফতারের খবর শুনে ইন্দিরা গান্ধী আমাদের বলেছেন, যুদ্ধ আরম্ব করে সেনাপতি ধরা দিয়েছেন আর আপনাদেরকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলেছেন, এটা কোন ধরণের রণকৌশল? তখন আমরা ইন্দিরা গান্ধীর এ কথার কোনো জবাব দিতে পারিনি। ইন্দিরা গান্ধী বার বার বলছেন, ভূ-ভারতে কে কোথায় শুনেছে যে, যুদ্ধ আরম্ব করে সেনাপতি শত্রু পক্ষের হাতে স্বেচ্ছায় ধরা দেয়?
ঐতিহাসিক এই তথ্য থেকে প্রমাণিত হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন সবই মিথ্যাচার। তার বাবা ক্ষমতার জন্য এদেশের মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন সেদিন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী তার বাবাকে হাইলাইট করার জন্য প্রতিনিয়ত ইতিহাস বিকৃত করে চলছেন।