অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
গতকাল প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচীতে পুলিশে হামলা, লাঠিচার্জ ও গ্রেফতার সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আজ বলেছেন, বিএনপির রাস্তা বন্ধ করে অবৈধ ও বেআইনিভাবে সমাবেশ করার কারণে পুলিশ বাধা দিয়েছে। তিনি বলেছেন, রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা বেআইনি। এ জন্য পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে। সমাবেশে ওই দিন বাধা দেওয়ার ঘটনার জন্য বিএনপি নিজেরাই দায়ী।
অথচ বাস্তবতা হলো বিএনপি নয়, বরং আওয়ামী লীগই ৭ মার্চ রাজধানীর প্রধান কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দিয়ে দিনভর সোহরাওয়ার্দিতে সমাবেশ করেছে। সেদিন সমাবেশের কারণে শাহবাগ, মৎস ভবন, কাটাবন, এলিফেন্ট রোডসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ রাখা হয়েছিলো। যার কারনে সারাদিন রাজধানীবাসীকে পোহাতে হয়েছে তীব্র থেকে তীব্রতর যানজট ও দুর্ভোগ।
অন্যদিকে বিএনপির গতকালের অবস্থান কর্মসূচী ছিলো প্রেসক্লাবে। যেখানে প্রতিদিন প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো দল বা সংগঠনের সভা মানববন্ধন ও অন্যান্য কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। বিএনপি অবস্থান কর্মসূচীর জন্য রাস্তা বন্ধও করেনি। পুলিশ তো বিএনপির প্রোগ্রাম শুরুই হতে দেয়নি। তার আগেই তাদেরকে লাঠিচার্জ করে সেখান থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গণতান্ত্রিক দেশে দুটি রাজনৈতিক দলের জন্য এমন বৈষম্যমূলক আচরণ ও ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নীতির সমালোচনা করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। তারা বলছেন, এটা ক্ষমতাসীনদের এক ধরণের স্বৈরাচারি আচরণ। নিজেদের বেলায় রাস্তা বন্ধ করে জনদুর্ভোগ তৈরি করে জনসভা করলেও কোনো সমস্যা নেই, অথচ বিরোধী দলের বেলায় রাস্তা বন্ধ না করলেও সেটা বিশাল সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করায়, মানুষের চলাচলে বাধা দেওয়ায় পুলিশ বিএনপির নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। বিএনপি রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করে বেআইনি কাজ করেছে। বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া না দেওয়া প্রসঙ্গে কাদের বলেন, সভার অনুমতি দেওয়ায় এখতিয়ার মেট্রোপলিটন পুলিশের। পুলিশের কাছে তারা আবেদন করেছে, পুলিশই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।
যদিও বিশ্লেষকরা মনে করেন সরকারের হস্তক্ষেপেই বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছেনা পুলিশ। তাদের প্রশ্ন, বিএনপির জনসভা যদি জনদুর্ভোগ তৈরি করে তাহলে আওয়ামী লীগের জনসভা করতে দিচ্ছে কেনো পুলিশ? তাদের জনসভা যে কতটা দুর্ভোগ তৈরি করতে পারে তার দৃষ্টান্ত তো গত ৭ মার্চের জনসভা। এক্ষেত্রে দেখা গেছে পুলিশ নিজেই রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আওয়ামী লীগকে জনসভা করার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এসব দেখার পরও কি বিশ্বাস করতে হবে যে, জনসভার অনুমতি দেয়া না দেয়ার সিদ্ধান্ত পুলিশ দেয়?
২০১৬ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলকে ঘিরে রাজধানীর বেশ কয়েকটি ব্যস্ততম সড়ক বন্ধ করে রাখা হয়। এসময় রাজধানীবাসিকে পড়তে তীব্র ভোগান্তিতে। কয়েকদিন পর পরই রাস্তা বন্ধ করে এমন অসংখ্য রাজনৈতিক সভার আয়োজন করে আসছে ক্ষমতাসীনরা। অপরদিকে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো রাস্তা বন্ধ করবে দূরের কথা রাস্তায় পা পর্যন্ত ফেলতে পারে না। পা ফেললেই গুলি করছে পুলিশ। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতন মানুষের প্রশ্ন হলো তাহলে কি রাস্তা বন্ধ করে জনসভা করা কেবল আওয়ামী লীগের জন্যই বৈধ? আর বাকি সবার জন্য অবৈধ?