ঢাকায় ৭ মার্চ আওয়ামী লীগের সমাবেশের মিছিলের মধ্যে বাংলামোটরে এক কলেজছাত্রীকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যৌন হয়রানি করার ঘটনায় ছাত্রীর বাবা রমনা থানায় মামলা করেছেন। খবর শীর্ষনিউজের।
রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা ওই মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
“ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে অপরাধীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত বা গ্রেফতার করা যায়নি।”
ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে বুধবার বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা ছিল। ক্ষমতাসীন দলটির বিভিন্ন ওয়ার্ড শাখা এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে ওই জনসভায় যোগ দেন। তাদের মিছিল থেকে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বেশ কয়েকজন নারীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে।
বাংলামোটরে এ রকম একটি মিছিলের মধ্যে পড়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের একদল যুবকের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা এক তরুণী তার ফেইসবুকে পোস্ট করলে তা ভাইরাল হয়ে যায়।
সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, কলেজ থেকে ফেরার সময় এই জনসভার কারণে বাস না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে বাংলামোটরে আসার পর একটি মিছিলে থাকা একদল যুবক তাকে ঘিরে ফেলে যৌন নিপীড়ন করে।
তিনি ফেইসবুক পোস্টে লেখেন, ১৫-২০ জন যুবক তাকে যৌন নিপীড়ন শুরু করে এবং তারা তার জামা ও ওড়না ছিঁড়ে ফেলে, তাকে থাপড়ায়। পরে এক পুলিশ সদস্য তাকে উদ্ধার করে একটি বাসে তুলে দেয়।
ক্ষোভের সঙ্গে ওই তরুণী লেখেন, ‘আমি এই শুয়োরদের দেশে থাকবো না, জয়বাংলা বলে যারা মেয়ে মলেস্ট করে আমি তাদের দেশে থাকবো না’।
এর পর বিষয়টি ভাইরাল হয়। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সোচ্চার হন। এই বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনাও আসে নানাজনের মন্তব্যে।
ঢাকার একটি নামি কলেজের ওই শিক্ষার্থী প্রথমে পাবলিক স্ট্যাটাস দিলেও পরে তা ‘অনলি মি’ করে দেন, ফলে এখন আর তা সবাই দেখতে পারছেন না।
এর ব্যাখ্যায় আরেক পোস্টে তিনি লেখেন- পোস্টটি রাজনৈতিক উস্কানিমূলকভাবে শেয়ার করা হচ্ছিল বলে তিনি তা ‘অনলি মি’ করেছেন।
রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তারা বুধবার রাতেই ওই তরুণীর বাসায় গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে এসেছেন। বাংলামোটরে শিক্ষার্থীকে হয়রানির ঘটনার ভিডিও ফুটেজ পাওয়ার পর জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টাও চলছে।
“ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের আইডেনটিফাই করার চেষ্টা হচ্ছে, যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আপনারাও জানতে পারেন, কারা কারা এতে জড়িত।”
অপরাধী যে দলেরই হোক, ছাড় দেয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রমনা থানার ওসি মাইনুল ইসলাম শুক্রবার সকালে বলেন, “ফেইসবুক স্ট্যাটাসে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, মামলায় প্রায় সেভাবেই লেখা হয়েছে। তবে কোন পুলিশ সদস্য ওই তরুণীকে উদ্ধার করে বাসে উঠিয়ে দিয়েছেন- তা এখনো জানা যায়নি। সেটাও খুব শিগগিরই বের করা হবে।”
পুলিশ ইতিমধ্যে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে তার বক্তব্য রেকর্ড করেছে বলে জানান ওসি।