সরকার ‘ভয়’ থেকে বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করতে চাইছে বলে দাবি করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেছেন, “আজ যদি আমরা কথা বলতে পারি, সারাদেশে যদি আমাদের কথা বলতে দেওয়া হয়, তবে আশা করি, ছয় থেকে এক বছরের মধ্যে কথার কারণেই এ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো সম্ভব।” “কিন্তু তারা কথাকেই ভয় পায়,” বলেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মান্না।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘দুর্নীতি’ শিরোনামে নাগরিক ঐক্য আয়োজিত এক আলোচনা অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের আলোচক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এরাও সরকারের সমালোচনা করেন।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সদস্য জাহেদ-উর-রহমান বলেন, জবাবদিহিতা না থাকায় দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “ভয় থাকলে কোনো সরকার চেষ্টা করে অন্যায়, অত্যাচার, অনাচার কিছুটা কম করতে। এই ভয় যখন না থাকে, যখন তার কোনো জবাবদিহিতা থাকে না। এদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এ ভয় এ সরকারের মধ্যে নেই।
“যে দেশে গুড গভর্নেন্স দূরের কথা, গভর্নেন্সই থাকে না; যে দেশে গণতন্ত্র দূরের কথা, নির্বাচনই থাকে না, জবাবদিহিতা দূরের কথা, কথাই বলা যায় না, সে দেশে দুর্নীতি হবে না তো কী হবে?” আওয়ামী লীগ সরকার ৫ জানুয়ারির মতো ‘তামাশাপূর্ণ’ নির্বাচনের ছক কষছে বলেও দাবি করেন আসিফ নজরুল।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ বলেন, “বাংলাদেশের মেগা প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতি হচ্ছে। সব দুর্নীতির মূল কারণ সরকার।” জবাবদিহিতার অভাবে দুর্নীনি হচ্ছে মন্তব্য করে সাবেক মহাহিসাব নিরীক্ষক হাফিজউদ্দিন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন প্রশ্ন ফাঁস আগেও হয়েছে তখন প্রশ্ন ফাঁস ঠেকানো যাবে না।” সড়ক-মহাসড়কের বর্তমান দুর্দশার জন্য সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের পদত্যাগ করা উচিৎ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল বলেন, “আমাদের দেশের লোকেরাই এই দেশে স্বৈরশাসন আসতে সাহায্য করেছে, সেটা লজ্জা, দুঃখের ও কষ্টের কথা।”
দেশে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তারের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পাকিস্তান আমলে এত মৌলবাদ শুনিনি, এখন কেন এত মৌলবাদ? দেশে বামপন্থি মৌলবাদের প্রভাব বেড়েছে। এই বামপন্থি উগ্রবাদ মাওলানাদের উগ্রপন্থি হতে উজ্জীবিত করছে।”
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, “লুটপাট সত্ত্বেও এক কোটি প্রবাসী, গার্মেন্টস শিল্প আর কৃষকরাই দেশের অর্থনীতিকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মান্না বলেন, “আমরা দুর্নীতির কথা মানুষের কাছে বলেই পথে নামার চেষ্টা করব। মানুষকে সাথে নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলব।”
ব্যাংকগুলোতে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারির জন্য দলীয়করণকে দায়ী করেছেন সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ। এই গভর্নর নাগরিক ঐক্যের আলোচনা সভায় বলেন, “রাজনীতি চলে আসাতেই দুর্নীতি হয়। এখন যে অবস্থা চলছে তা থেকে বের হতে হলে প্রথমত রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন।
“এখানে যদি নানা রকম রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে ফল ভালো হয় না। রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকতে পারে, কিন্তু বোর্ড রুমে রাজনীতি নিয়ে আসবেন, সেটা কাম্য নয়।” তিনি বলেন, “ফারমার্স ব্যাংকের উদ্দেশ্যেই ছিল খারাপ। ছয় মাস পরই দেখা গেল চুরি। চার বছর লাগল সেটাকে বের করতে। এর চেয়ারম্যানকে জবাবদিহি করাতে চার বছর সময় লাগা অকল্পনীয় ব্যাপার।”
ঋণ কেলেঙ্কারিতে ধুঁকতে থাকা ফারমার্স ব্যাংকটি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত হয়। কেলেঙ্কারির মুখে তিনি গত বছর ব্যাংকটির চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েন। ব্যাংক খাতে দুর্নীতির জন্য যারা দায়ী, তাদের নাম ‘সবার জানা’ বলে মন্তব্য করেন সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন।
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে সময়োচিত, দৃশ্যমান ও শক্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে হবে। যে অর্থ পাচার করে বা চুরি করে, তার বিরুদ্ধে যদি অ্যাকশন না হয়, তখন অন্যরা উৎসাহ পায়।” শুধু ওএসডি না করে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সূত্র: শীর্ষনিউজ