অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে হামলার ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পাঁয়তারা করছে প্রশাসন। হামলার ঘটনায় ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীকে চার দিন ধরে আটকে রেখে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টা করছে প্রশাসন। ওই শিক্ষার্থীর নাম আহমাদ শাহ মাসুদ। তিনি আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র। শনিবার পুলিশের হেফাজতে থাকা শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে পরীক্ষা দিতে নিয়ে আসলে এ তথ্য ফাঁস হয়ে যায়।
এদিকে পরীক্ষা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে টানা চারদিন আটকে রাখায় উদ্বিগ্ন বিভাগীয় শিক্ষক, সহপাঠী ও অভিভাবকেরা। তারা বিষয়টি নিয়ে শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে ভিসি প্রফেসর ড. হারুন-উর-রশিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্স হামলার ঘটনায় চালক ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদেরকে প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান তার অফিসে ডেকে পাঠান। প্রক্টর চালক ও শিক্ষার্থীদের থানায় পাঠান। সেখানে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে একজন (মাসুদ) বাদে সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়। মাসুদকে ছাড়া অন্যরা আসতে না চাইলে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। তাকে কেন রাখা হচ্ছে জানতে চাইলে, শৌলকূপা থানা কর্তৃপক্ষ জানায়- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশনায় তাকে রাখা হচ্ছে।
থানা থেকে ফিরে আসা শিক্ষার্থীদের ভাষ্যমতে, পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘আমরা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাইনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশেই তাকে অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাখা হচ্ছে।’
এদিকে ঘটনার দিন আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে প্রক্টর আশ্বস্ত করে বলেন, মাসুদের কোনো সমস্যা নেই। অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে রাখা হয়েছে। বিষয়টি আমার নজরেও আছে। আপনারা টেনশন করবেন না। সে তো আমারও শিক্ষার্থী।’
এদিকে ঘটনার চার দিনের মাথায় শনিবার মাসুদের পরীক্ষা থাকায়, প্রশাসনের দায়িত্বে তাকে ক্যাম্পাসে আনা হয়। এ সময় কথা হয় ক্যাম্পাসে কর্মরত এক সাংবাদিকের সাথে। অবস্থা জানতে চাইলে মাসুদ প্রথমে কেঁদে ফেলে। তারপর ওই সাংবাদিককে জানায়, ‘আমাকে চড়-থাপ্পড় দিয়েছে। চোখ বেঁধে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছে। মাসুদ জানায়, প্রথম থেকেই পুলিশ তার কাছে অ্যাম্বুলেন্সে হামলার বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য বিভিন্নভাবে চাপ দিচ্ছে। তাছাড়া স্বীকারোক্তি দিলে ছেড়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে তারা।
মাসুদের ভাষ্য মতে, ‘পুলিশ জোর করে স্বীকারোক্তি দিতে বলছে যে, অ্যাম্বুলেন্সে হামলার ঘটনায় হাদি ও শাহজালাল জড়িত। তুই বলবি যে, হামলার সময় অ্যাম্বুলেন্সের আলোতে তাদের দুইজনকে দেখা গেছে। পুলিশ আমাকে বলে, ‘শনিবার তোকে পরীক্ষা দিতে সুযোগ দেবো। তবে তুই পরীক্ষা দিয়ে এসে হামলার সাথে হাদি ও শাহজালাল জড়িত এটা স্বীকার করবি।’
তারা বলেছে, তোরে আমরা বাঁচিয়ে দেবো, শুধু যা বলবো তা স্বীকার করবি। তারা শুধু ওই দুজনকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমাকে স্বীকার করতে বলেছে যে, হামলার সময় গাড়ির লাইটের আলোয় আমি তাদের দেখতে পেয়েছি। এ ছাড়া আর কোন কিছু আমাকে জিজ্ঞেস করেনি। গত বুধবার প্রক্টর আমাকে দুই মিনিটের জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা আমাকে তিন দিন আটক রেখেছে। গতকাল (শুক্রবার) একজন পুলিশ এসে বললো- প্রক্টর, এসপি এবং ওসি স্যারের সাথে সমন্বয় করেছি। এসময় ওসি এসে বলেছে, যদি এই স্বীকারোক্তি দাও তবে তোমাকে যেটা করতে চেয়েছি তা করবো না।’ মাসুদের এই কথাগুলোর অডিও রেকর্ড অ্যানালাইসিস বিডির কাছে সংরক্ষিত আছে।
শনিবার দুপুরে বিষয়টি নিয়ে বিভাগের শিক্ষকরা প্রক্টরের সাথে বৈঠক করে। এসময় কয়েকজন সাংবাদিক সেখানে গেলে প্রক্টরের আপত্তিতে তারা বৈঠক কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। বৈঠক শেষে আটক শিক্ষার্থী ও প্রক্টরের সাথে সাংবাদিকরা কথা বলতে চাইলে তিনি কোনো কথা না বলেই ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে প্রক্টর অফিসে যান। সেখানে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের সাথে প্রায় দশ মিনিট অবস্থান করেন প্রক্টর। এরপর মাসুদকে আবার পুলিশের হাতে তুলে দেন প্রক্টর প্রফেসর ড. মাহবুবর রহমান।
এদিকে মাসুদের এই ভয়াবহ তথ্য নিয়ে ভিসির সাথে সাক্ষাৎ করেন ক্যাম্পাসে মাসুদের সাথে কথা বলা সেই সাংবাদিক। এ সময় পুরো ঘটনা জানানো হয় ভিসিকে। ঘটনা শুনে ভিসি নিজেও হতবাক হয়ে যান। ভিসি বলেন, ‘বিভাগের শিক্ষকরা একটু আগে আমার কাছে এসেছিল। ছাত্রকে আটকে রাখার বিষয়ে তারা কথা বলেছে। কিন্তু ঘটনার আসল রহস্য উদঘাটন করতে ব্যর্থ হয়ে কোনো নিরপরাধ ব্যাক্তিকে জড়িয়ে যেন কোনো ষড়যন্ত্র না হয়। যদি এমন ষড়যন্ত্র হয় তবে তা খুবই উদ্বেগের বিষয়।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাত পৌনে ৪টার দিকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বড়দহ নামক এলাকায় ডাকাতের হামলার কবলে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স। এসময় ডাকাতরা অ্যাম্বুলেন্সে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর সর্বস্ব লুটে নেয়। এসময় তারা অ্যাম্বুলেন্সে ভাঙচুর চালিয়ে চালক আব্দুল খালেককে মারধোর করে আহত করে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। রাস্তায় গাছ ফেলে এসময় ট্রাক ও যানবহনে গণডাকাতি হয় বলে জানা যায়। সর্বস্ব লুট হওয়া পাঁচ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর একজন হলেন আহমাদ শাহ মাসুদ।