অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
‘‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বের রোল মডেল। দেশের অর্থনীতি এখন অনেক মজবুত। আমরা মানুষকে উন্নত জীবন দিয়েছি। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশের বিস্ময়কর উন্নয়ন দেখে বিশ্বনেতারা অবাক হয়ে যান। তারা জানতে চান এত উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব হয়েছে? দেশের সব মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে পারছে। শেখ হাসিনার বাংলাদেশে দরিদ্র দেখতে হলে জাদুঘরে যেতে হবে।’’ এগুলো হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার দলের নেতাদের নিয়মিত বক্তব্যের অংশ।
প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যান্য মন্ত্রীরা বলছেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। মার্চ মাসেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নত আয়ের দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রীরা এমন দাবি করলেও দেশের বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। দেশে এখনও কমপক্ষে ৮ শতাংশ মানুষ সারা বছর এক বেলা ভাত খেয়ে জীবন যাপন করছেন। আর ২০-২৫ শতাংশ মানুষ বছরে ৩ মাস এক বেলা ভাত খেয়ে জীবন যাপন করছেন। জাপানভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ড’ পরিচালিত এক জরিপে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
সংগঠনটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ১২ গ্রাম ও রায়গ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের বিরাজমান দারিদ্র্যের প্রকৃতি সম্পর্কে এ জরিপ চালায়। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় হাঙ্গার ফ্রি ওয়ার্ল্ডের বলিদাপাড়ার প্রশিক্ষণ ও বিকাশ কেন্দ্রের হলরুমে জরিপের ফল উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রকল্প সমন্বয়ক একেএম মাহতাব উদ্দিন, আঞ্চলিক সমন্বয়ক হাফিজুর রহমান ও প্রকল্প কর্মকর্তা শাহিন হোসেন।
জরিপের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালের মে-জুন মাসে কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ১২ গ্রাম ও রায়গ্রাম ইউনিয়নের একটি গ্রামে এ জরিপ চালানো হয়। জরিপকৃত এলাকার হতদরিদ্র ৪৮২ পরিবারের মধ্যে ১০২টি পরিবারের ওপর জরিপ করা হয়।
জরিপে উঠে আসে- হতদরিদ্র ৮ শতাংশ পরিবার সারা বছর দিনে একবেলা খায়। ২০-২৫ শতাংশ পরিবার বছরে তিন মাস (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) একবেলা খায়। ৫৫ শতাংশ পরিবার ভাতের অভাব হলে বিকল্প খাবার হিসেবে আটা খেয়ে থাকেন।
জরিপে আরও বলা হয়, জনপ্রতি প্রতিদিন খাবারের জন্য ব্যয়কৃত চালের পরিমাণ ৪০০ গ্রাম। বেশিরভাগ পরিবারই চাল কিনে খায়।
এ ছাড়া জরিপে উঠে আসে, ইউনিয়নের ৩৪ শতাংশ পরিবার শাকসবজি খায়। ৪০ শতাংশ পরিবার সপ্তাহে একবারও ফল খায় না।
জরিপের তথ্যমতে, ৭৯ শতাংশ পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যগত সমস্য আছে এবং প্রতি পরিবারের ২ দশমিক ৮ শতাংশ সদস্যের স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে।
নারী স্বাস্থ্য সম্পর্কে জরিপে জানা গেছে, ৭৬ শতাংশ নারী তাদের প্রাত্যহিক জীবনে অপুষ্টিজনিত শারীরিক অসুস্থতাবোধ করেন। প্রায় ৫০ শতাংশই পরিবার পুষ্টি বজায় রেখে রান্না করেন না। এ ছাড়া বাল্যবিয়ে ও অল্প বয়সে মাতৃত্বের প্রবণতা উচ্চ। গর্ভপাত ও নবজাতকের এক বছরের কম শিশু মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায়ে নয়।
এ জরিপের ফল গণমাধ্যমে প্রকাশের পর বিভিন্ন মহলে সরকারের কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সব জায়গার জরিপের ফলাফল একই আসবে। আসলে উন্নয়নের নামে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা প্রতিদিন যে রেকর্ড বাজাচ্ছে তা কল্পনিক। সরকার উন্নয়নের নামে ভাওতাবাজি করছে। এখনো দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। প্রায় দিনই খাবারের অভাবে দেশের কোনো কোনো জায়গায় মানুষ আত্মহত্যা করছে। দেশ এখনো খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়নি। সরকারের দাবি অবাস্তব।
তাদের মতে, স্বাস্থ্যসেবাও এখন পর্যন্ত মানুষের ঘরে ঘরে পৌছেনি। প্রতিদিন বিভিন্ন স্থানে অসহায়-গরিব মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। অথচ প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন দাবি করছেন যে তিনি দেশের মানুষকে উন্নত জীবন দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বাস্তবতার সঙ্গে কোনো মিল নেই।