অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
২০১০ সালের ২৯ জুন কথিত ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিল জামায়াতের সাবেক আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ ও মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে। এরপর একই অভিযোগে আটক করা হয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লাকে। এরপর মীর কাশেম আলী, সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা ইউসূফ, মাওলানা সোবহান ও এটিএম আজহারুল ইসলাম।
শুরু থেকেই এ বিচারের প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেশি-বিদেশি আইনজ্ঞ ও মানবাধিকার সংস্থা থেকে অভিযোগ উঠে। মূলত জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ প্রমাণের জন্য সরকারের পক্ষে কোনো সাক্ষীই ছিল না। হুমকি-ধামকি দিয়ে জামায়াত নেতাদের এলাকা থেকে সরকার কিছু লোককে ধরে এনে ঢাকার কমলাপুরের সেইফহোমে রেখে তাদেরকে শিখিয়েছে ট্রাইব্যুনালে গিয়ে কী বলতে হবে। এ বিচারের পদে পদে নানা কেলেংকারির ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষ করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে সরকার ফাঁসিতে ঝুলানোর জন্য কসাই কাদেরের সব অপরাধ তার বলে চালিয়ে দিয়েছে। অজ্ঞাত এক নারীকে সেই সাক্ষী মোমেনা বানিয়ে বোরকা পরিয়ে ট্রাইব্যুনালে এনে ক্যামেরা ট্রায়াল করিয়েছে। কেউ তার মুখও দেখতে পারেনি যে তিনি আসলেই সেই মোমেনা কি না। তারপর সাঈদীর পক্ষের সাক্ষী সুখরঞ্জন বালিকে অপহরণ ও স্কাইপি কেলেংকারির ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ধাক্কা লেগেছিল। সকল প্রকার আইন-কানুনকে পদদলিত করে সরকার গায়ের জোরে আদালতের ওপর বন্দুক রেখে কথিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদেরকে হত্যা করেছে।
ওই সময় বিভিন্ন অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রথমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের মামলায় মাওলানা নিজামী, মুজাহিদ ও সাঈদীকে গ্রেফতারের পর সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে বলা হয়েছিল বিএনপি জোট থেকে বেরিয়ে যেতে। বিএনপির সঙ্গ ছেড়ে দিলে তাদেরকে আর মামলায় ফাসানো হবে না। বিএনপির সঙ্গ ছাড়তে অস্বীকার করায় পরে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দেয়া হয়।
তবে ওই সময় লক্ষণীয় বিষয় ছিল, জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হওয়ার পর থেকেই বিএনপির সিনিয়র নেতারা জামায়াতকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. মঈন খান, জেনারেল মাহবুবুর রহমান, খন্দকার মোশাররফ, জয়নাল আবেদীন ফারুক, ব্যারিস্টার মওদুদ, মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমদ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাদেক হোসেন খোকা, মির্জা আব্বাস, মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শামসুজ্জামান দুদুসহ আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা বিভিন্ন সময়ে খালেদা জিয়াকে চাপ প্রয়োগ করেছেন জামায়াতকে জোট থেকে বের করে দিতে।
তবে, বিএনপির সঙ্গে থাকার কারণেই যে সরকার জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা করেছে এই তথ্য খালেদা জিয়ার কাছে ছিল। সেজন্য তিনি দলের নেতাদের কোনো কথা শুনেন নি। এমনকি জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে সরকারের এ কাজে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতার সমর্থন এবং সহযোগিতা ছিল বলেও অভিযোগ আছে।
তবে এখন জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার মাধ্যমে বিএনপি নেতারা কিছুটা বুঝতে পেরেছেন যে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে করা যুদ্ধাপরাধের মামলাও ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন।
বিশেষ করে খালেদা জিয়ার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর বিএনপির নেতাকর্মীরা বিস্মিত হয়ে গেছেন। খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে বিকৃতি করে বিচারক ড. আখতারুজ্জামান তাকে ৫ বছরের সাজা দিয়েছেন। এনিয়ে আজ আদালত পাড়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইছে সমালোচনার ঝড়।
বিএনপির কিছু সংখ্যক নেতাকর্মীকেও আজ বলতে শুনা গেছে যে, যুদ্ধাপরাধের বিচারের মতোই সরকার খালেদা জিয়ার মামলার রায়েও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র একজন নেতা আজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বিচারক আখতারুজ্জামানের রায়ে প্রমাণ হলো জামায়াত নেতারা নির্দোষ ছিলেন। সরকার সাজানো সাক্ষী দিয়ে গায়ের জোরে বিচারের নামে তাদেরকে ফাঁসি দিয়েছে। কারণ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাজানো মামলায় দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে না পেরে তার বক্তব্যকে বিকৃতি করে তাকে ৫ বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় জালিয়াতি আর হতে পারে না।