অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট্রের কথিত দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে পুরান ঢাকার নাজিমদুদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগারে ১১ দিন ধরে বন্দি জীবন-যাপন করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সোমবার খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা রায়ের কপি পেলে জামিন আবেদন ও উচ্চ আদালতে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
এদিকে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। দিন দিন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সর্বমহলেই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর সমালোচনা হচ্ছে। তাই হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দেবেন। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো বিরোধীতা করবে না।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে জামিন না দেয়ার বিষয়ে সরকার এখনো অনঢ়। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা তীব্র বিরোধীতা করবেন।
কারণ হিসেবে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠালে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হবে, সমালোচনা হবে, বিএনপি আন্দোলন করবে ও খালেদা জিয়ার প্রতি মানুষের সহানুভূতি বাড়বে এসব সরকার আগ থেকেই জানতো। দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এটা বাহ্যিকভাবে দেখা গেলেও অভ্যন্তরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা মাত্র একটা ইস্যু।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে জেলে ঢোকানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার আরও দুই বছর আগে। বিগত ২ বছরের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। কিন্তু একটিতেও তাকে গ্রেফতার করেনি সরকার। কারণ, সরকারের ধারণা ছিল, এসব মামলায় গ্রেফতার করা হলেও আবার জামিন নিয়ে বের হয়ে আসবে। এটাতে বরং লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। তাই এসব মামলায় সরকার খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করেনি।
সরকারের টার্গেট ছিল আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েক বছরের সাজা দিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলা ভরা। সেই লক্ষ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে। আর খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর দেশের পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে এবং সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপও আসবে এসব ঝুঁকি মাথায় রেখেই সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই সরকার আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আনতে চায়। এজন্য সরকার দুইটি টার্গেটে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রথমত: বিএনপিপন্থী কয়েকজন বুদ্ধিজীবী আছেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার তাদেরকে ব্যবহার করবে। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এক্ষেত্রে সরকার বিকল্প ধারার সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরীকেও ব্যবহার করতে পারে। আর গত পরশু দিন বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেনও যে, আমার মনে হয় বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে না।
দ্বিতীয়ত: বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার আন্তর্জাতিক লবিংও বাড়াচ্ছে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের যে কিছুটা টানাপোড়েন আছে সেটা মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করছে। আগামী মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ভারত সফরে যাওয়ার কথা রয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ প্রভাবশালী দেশগুলোর সঙ্গেও সরকার সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছে। এক্ষেত্রে রোববার বাংলাদেশ থেকে কার্গো পরিবহনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উন্নয়ন হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
অপরদিকে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ম্যানেজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় দিন রাত অবিরাম চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
আর খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও তারা বলেছেন, আমরা আশা করি বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার যদি এ কাজে সফল হয় তাহলে আগামী নির্বাচনেও বিএনপিকে ক্ষমতার বাইরে থাকতে হবে। তবে, সংসদে বিরোধীদলের আসনে বসতে পারবে। কারণ, সরকার চাচ্ছে আগামীতে জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বিএনপিকে বিরোধীদলের আসনে বসাতে। আর বিএনপিকে যদি বিরোধীদলের আসনে বসাতে পারে তাহলে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো সমালোচনা বা কোনো বিদেশি চাপ আসবে না।