অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিএনপিতে সরকারের গুপ্তচর হিসেবে পরিচিত খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের গ্রেফতার ও রিমান্ড নিয়ে আবারো নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের কথিত দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দিয়ে যেদিন কারাগারে পাঠানো হয়েছে সেদিনই আদালত প্রাঙ্গণ থেকে পুলিশ শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে। ইতিমধ্যে পুলিশ তাকে দ্বিতীয় দফায় বৃহস্পতিবার ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে।
শিমুল বিশ্বাসকে নিয়ে অনেক আগ থেকেই বিএনপির ভেতরে নানা গুঞ্জন আছে। অভিযোগ আছে, তিনি দলের ভেতর সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন।
খোঁজ নিয়ে অ্যানালাইসিস বিডি জানতে পেরেছে, শিমুল বিশ্বাস ছাত্রজীবনে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার পরিবহন ব্যবসা আছে। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি আস্তে আস্তে অবস্থান মজবুত করেন। এক পর্যায়ে এসে তিনি খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারীর পদটি দখলে নিতে সক্ষম হন। এরপরই তিনি দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন।
দলে তার কোনো পদ পদবী না থাকলেও তিনি এখন বিএনপির তৃতীয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। শিমুল বিশ্বাসের অনুমতি ছাড়া দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে পারেন না। এমনকি শিমুল বিশ্বাসই এখন বিএনপির অন্যতম নীতিনির্ধারক। দলের মধ্যে কাকে কোন পদ দেবে সেটার পরামর্শও খালেদা জিয়াকে তিনি দিয়ে থাকেন। বলতে গেলে, বিএনপির সিনিয়র নেতাদেরকে তিনি পাত্তাই দেন না।
তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো তিনি সরকারের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেন। খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় সরকার বিরোধী আন্দোলনের যে রূপরেখা তৈরি করেন শিমুল বিশ্বাস এসব তথ্য সরকারের কাছে পাচার করে দেন। তিনি খালেদা জিয়ার ওপর এমনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছেন যে, তার বিষয়গুলো জানার পরও খালেদা জিয়া তাকে বাদ দিতে পারছেন না।
সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় ছিল ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খালেদা জিয়ার একান্ত বৈঠকে শিমুল বিশ্বাসের উপস্থিত থাকার বিষয়টি। এনিয়ে বিএনপির সিনিয়র নেতারাও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে পরে জানা গেছে, বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্য রিয়াজ রহমানকে কায়দা করে দেরি করিয়ে দিয়ে বৈঠকে তার জন্য রাখা চেয়ারে গিয়ে আগেই বসে পড়েন শিমুল বিশ্বাস। বিষয়টিতে অবাক চীনারা এ ব্যাপারে আপত্তি জানালেও চেয়ারে গ্যাট হয়ে বসে ছিলেন শিমুল বিশ্বাস। এমনকি খালেদা জিয়ার সঙ্গে চীনা প্রেসিডেন্টের একান্ত বৈঠকেও তিনি উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে বিএনপিকে চিঠি দিয়ে এ বিষয়টি জানতে চায় চীন। ওই চিঠিতে অনুমোদিত ব্যক্তি না হয়েও শিমুল বিশ্বাসের বৈঠকে অংশগ্রহণের কারণ জানতে চাওয়া হয়।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ ছিল, শিমুল বিশ্বাস ৪৭টি মামলার আসামি। এর মধ্যে ২৬টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আছে। পুলিশের সামনে দিয়ে তিনি হোটেল শেরাটনে প্রবেশ করলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেনি। তাহলে ধরে নিতে হবে, সরকারের কারসাজিতেই রিয়াজ রহমানকে পরিকল্পিতভাবে বাদ দিয়ে শিমুল বিশ্বাসকে এখানে রাখা হয়েছে। যাতে করে পরবর্তীতে সরকার সব কিছুই জানতে পারে যে চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এদিকে, খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর শিমুল বিশ্বাসের গ্রেফতার নিয়ে বিএনপির ভেতরে নানা গুঞ্জন চলছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, মামলার আসামি হিসেবে সরকার শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেনি। কারণ, এর আগেও শিমুল বিশ্বাস একাধিকবার খালেদা জিয়ার সঙ্গে আদালতে গিয়েছেন কিন্তু তখন তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেনি। সরকার বিশেষ উদ্দেশ্যে শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। এ গ্রেফতার পূর্ব পরিকল্পিত। বিএনপির ভেতরে কী হচ্ছে এবং আগামী দিনে বিএনপির টার্গেট কী এসব তথ্য জানতেই মূলত শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যথায় খালেদা জিয়া বাইরে থাকতে সরকার শিমুল বিশ্বাসকে গ্রেফতার করেনি কেন?