বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ মুখোমুখি অবস্থানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠোর অবস্থানে পুলিশ প্রশাসনও। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের মধ্যেও। অনেকেই সফর সংক্ষিপ্ত করে কক্সবাজার ছাড়ছেন। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে ঘুরে হোটেল মালিক ও পরিবহন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য জানা গেছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার বকশীবাজারে বিশেষ জজ আদালত-৫-এ ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
কক্সবাজার কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি কাজী রাসেল আহমেদ বলেন, ডিসেম্বর থেকে কক্সবাজারে পর্যটকের আগমন শুরু, চলবে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কায় ভ্রমণে থাকা পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা সফর সংক্ষিপ্ত করে কক্সবাজার থেকে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। এতে খালি হয়ে যাচ্ছে হোটেল-মোটেল। এ ছাড়া ৮ ফেব্রুয়ারি ঘটনাকে কেন্দ্র করে হোটেল–মোটেলে ২০ শতাংশ আগাম বুকিং বাতিল করা হয়েছে।
গতকাল সকালে শহরের হোটেল-মোটেল জোনে কথা হয় ঢাকার উত্তরা থেকে আসা পর্যটক ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। তিনি মা, স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার আসেন গত রোববার। বুধবার সেন্ট মার্টিন ঘুরে শনিবার ঢাকায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। তিনি সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকাল ঢাকার ফিরে গেছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি যেকোনো মুহূর্তে উত্তপ্ত হতে পারে। এ জন্য ঢাকায় চলে যাচ্ছেন দ্রুত।
পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত আছেন তাঁরা।
চাপে বিএনপি, তৎপর আওয়ামী লীগ
গতকাল দুপুরে শহরের সার্কিট হাউস সড়কের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ২০-২৫ জন পুলিশ সদস্য কার্যালয়ের মূল ফটকে দাঁড়িয়ে আছেন। এ সময় বিএনপির কাউকে সেখানে দেখা যায়নি।
কক্সবাজারের সাবেক সাংসদ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, কক্সবাজারে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। এরপর বিনা উসকানিতে পুলিশ দলের ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘরে ঘরে তল্লাশি চালিয়ে নেতা-কর্মীদের এলাকাছাড়া করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, পুলিশ গত কয়েক দিনে আটক করেছে মহেশখালী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী, উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি আরাফাত মো. রিয়াদ, চকরিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন, চকরিয়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল হাসান, চকরিয়া পৌর যুবদলের সহসভাপতি সাইফুল ইসলামসহ অন্তত ২১ জনকে।
এদিকে বিএনপিকে ঠেকাতে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে ঘিরে কক্সবাজারকে অশান্ত করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। ওই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে একটি মহল সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। জনগণের জানমালের ক্ষতি হয় এ রকম নৈরাজ্য কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
সূত্র: প্রথম আলো