হাসান রূহী, অ্যানালাইসিস বিডি
উন্নয়নের ফিরিস্তি বর্ণনা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ভেরিফাইড টুইটার একাউন্ট থেকে ব্যবহার করা হয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ছবি। আর এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা।
এই টুইটে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কথিত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আলোকে জুলাই’১৬ থেকে ডিসেম্বর’১৭ পর্যন্ত কিছু পদক্ষেপের ফিরিস্তি তুলে ধরা হয়েছে। ভারতীয় সেনা সদস্যের ছবি সম্বলিত ওই পোস্টারে বলা হয়েছে –
০১. ২৬ টি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে;
০২. ৪০০ জনকে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে;
০৩. ব্যাসেল ইন্সটিটিউটের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী অর্থায়ন সূচক বেড়েছে ২৮ পয়েন্ট;
০৪. সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হহয়েছে ৭৮ জনকে;
০৫. আগস্টে একটি জনসমাবেশে হামলার পরিকল্পনা ব্যার্থ করে দেয়া হয়েছে;
০৬. নভেম্বরে ভারতের সাথে সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি যৌথ মহড়া পরিচালনা করা হয় যা বামে দেখানো হয়েছে;
Some of the recent efforts of #Bangladesh to counter and prevent terrorism and violent extremism under Awami League Government's 'Zero-Tolerance' Policy pic.twitter.com/JxcDygu6n5
— Awami League (@albd1971) January 25, 2018
যদিও উল্লিখিত এসব তথ্য নিয়ে অনেক বিতর্ক ও মতানৈক্য রয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ-র্যাব কর্তৃক পরিচালিত সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত করা ও জঙ্গি আস্তানা আবিস্কারের বিষয়গুলো বরাবরই বিতর্কের জন্ম দিয়ে এসেছে। কিন্তু ভারতীয় সেনা সদস্যের ছবি ব্যবহারের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। যদিও ৬ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে ভারতের সাথে সন্ত্রাসবাদবিরোধী একটি যৌথ মহড়ার ছবি এটি। কিন্তু উপরের ৫টি তথ্য বাদ দিয়ে কেন শুধু ভারতীয় সৈন্যের ছবি দেয়াই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল? আর যদি মহড়ার ছবি দিতেই হয় তবে বাংলাদেশী অংশগ্রহণকারীর ছবি কেন ব্যবহার করা যায়নি?
পুলিশ ও র্যাবের তথ্য বলছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকে যোগান দেয়া হয়েছে। পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ও র্যাব প্রধান বেনজির উভয়েই স্বীকার করেছেন এ বিষয়টি। অথচ সেই ভারতের সাথেই সন্ত্রাসবাদবিরোধী যৌথ মহড়ার আয়োজন করছে ক্ষমতাসীন সরকার। শুধু মহড়া নয়, রীতিমত সেই মহড়া নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ক্যম্পেইনও করছে তারা। এত দেশ থাকতে জঙ্গিদের অস্ত্র সরবরাহকারী ভারতের সাথেই কেন এই দহরম মহরম?
এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব আসলে কি হতে পারে তা অনুমান করা খুব বেশি কষ্টসাধ্য নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ ও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা বলেই মনে করছেন অনেকে। কিন্তু এতে যে স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব খর্ব হচ্ছে সেদিকে খেয়াল করার যেন ফুসরত নেই ক্ষমতাসীনদের।