অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব ইসির। নির্বাচনের তফসিল ও তারিখ ঘোষণা করা হবে ইসির পক্ষ থেকেই। কিন্তু ইসির তফসিল কিংবা তারিখ নির্ধারণের আগেই গতকাল আইনমন্ত্রী কর্তৃক রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করায় এনিয়ে বিতর্কের তৈরি হয়েছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের মতে, এটি সম্পূর্ণরুপে সংবিধানের লংঘন। তারা প্রশ্ন রেখেছেন, ইসি আসলে কার নির্দেশে চলে? কাগজে কলমে স্বাধীন প্রতিষ্ঠান বলা হলেও ইসির সবকিছু কি সরকারের পক্ষ থেকেই ঠিক করে দেয়া হচ্ছে?
মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়ে আসায় ২৪ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে এই নির্বাচনের ক্ষণ গণনা। এ নির্বাচন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছিলেন। তিনি সোমবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, “২৫ জানুয়ারি কমিশন বৈঠক হবে। পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।”
এর মধ্যেই রাতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ১৯ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন ঠিক হওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানান। জিজ্ঞেস করা হলে তিনি রাতে বিডিনিউজকে জানান, “১৯ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হবে বলে আমি ইসির কাছ থেকে জানতে পেরেছি।”
কিন্তু আইনমন্ত্রীর ‘ইসির কাছ থেকে জানতে পেরেছি’ বক্তব্যের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এ সম্পর্কে বলেন, “আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। ভোটের তারিখ নিয়েও আমার কিছু জানা নেই। আমার সামনে কমিশনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের (১৯ তারিখ) এরকম কিছু আলোচনাও হয়নি।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, “২৫ জানুয়ারি কমিশন সভা রয়েছে, তাতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। তাছাড়া ভোটের তারিখ ঠিক করার বিষয়টি সিইসি ও একজন নির্বাচন কমিশনারের বিষয় নয়। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত হবে।”
আইনমন্ত্রী কীভাবে রাষ্ট্রপতির ভোটের তারিখ জানালেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এই নির্বাচন কমিশনার।
তবে তফসিল ঘোষণার আগে আইনমন্ত্রী দিন জানিয়ে দেওয়ায় তা নিয়ে সিইসিসহ অনেকেই মুখ খুলতে চাননি। বিডিনিউজের পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদাকে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি তা ধরেননি। নির্বাচন কমিশনের ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নেন আবদুল হামিদ। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সে হিসেবে আবদুল হামিদ এই পদে ১৭তম ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন।
সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে।
সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। এটি ছাড়া প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন।
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, সংবিধান অনুযায়ী, ভোট হতে হবে ২৪ জানুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। সংসদের চলতি অধিবেশনেই এ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক তফসিল ঘোষণার আগে স্পিকারের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
কিন্তু এসবের আগেই আইনমন্ত্রী নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিলেন। এটি সংবিধানের লঙ্ঘণ বলেই মনে করেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, কাগজে কলমে ইসিকে স্বাধীন বলা হলেও সরকারের নকশা অনুযায়ীই তাদের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যার প্রমাণ ইসির সিদ্ধান্তের আগেই সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে দেয়া। এমন ইসির অধিনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হতে পারে না। জাতীয় নির্বাচন তো নয়ই।