হাসান রূহী, অ্যানালাইসিস বিডি
ক্ষমতা প্রদর্শনের ময়দানে একটি অতি পরিচিত বক্তব্য আছে। আর তা হলো ‘ঐ মিয়া আমারে চিনস?’ এই ধরণের বক্তব্য প্রণেতারাই মূলত প্রশাসনকে বাধ্য করে আইনের রাস্তা ছেড়ে ভিন্ন পথে হাঁটতে। আর যখন প্রভাবশালীরা আইনের চোখে সমান না থেকে উঁচু পর্যায়ে চলে যান, তখনই সাধারণের মধ্যে জন্ম নেয় ক্ষোভ। শুরু হয় আইন লঙ্ঘণের প্রতিযোগিতা।
একুশে টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুরুল আহসান বুলবুল। সম্প্রতি তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটেও প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। চেতনার নামে পক্ষপাতদুষ্ট সাংবাদিকতা ও প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনগুলোতে অতিমাত্রায় তৈল মর্দনের সুবাদে তাকে ইদানিং মানুষ মোটামুটি ভালোভাবেই চেনে। গতকাল রাতে রাজধানীর বেইলী রোডের সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে উল্টোপথে গাড়ি চালানোর দায়ে মনজুরুল আহসান বুলবুল এর গাড়ি আটকে দেয় দায়িত্বরত পুলিশ সার্জেন্ট। এসময় মামলার স্বার্থে গাড়ির কাগজ পত্র দাবি করেন ওই কর্মকর্তা। কিন্তু আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থেকে উল্টো হুমকি দিতে শুরু করেন বুলবুল। উল্টোপথে গাড়ির কাগজ-পত্র ছাড়া চলতে গিয়ে ধরা খেলেও সিনাজুরিতে তিনি দক্ষতা দেখান। সাধারণত প্রভাবশালীরা যেভাবে কথা বলে সেভাবেই তিনি বলতে থাকেন ‘আপনার অফিসার যখন আমাকে এলাউ করেছে তখন আমরা আসছি। উই হ্যাভ দ্যা ডকুমেন্ট।’
তখন পুলিশ সার্জেন্ট বলেন ‘সে ডকুমেন্ট পরে দেখবো।’ বুলবুল তখন একধাপ তেড়ে এসে বলেন ‘আমরাও আপনাকে পরে দেখাবো। উই উইল সি টু-মরো। আমরা কালকে দেখবো। আপনার অফিসার যখন এলাউ করছে তখন আমরা আসছি।’
এ কথা বলার সময়েই ঐ পুলিশ সার্জেন্ট ফোন করেন তার উর্দ্ধতন কমকর্তাকে। জানান উল্টোপথে গাড়ি চালানোর কথা। কিন্তু ফোনের ওপাড় থেকে কি নির্দেশ এলো তা পরিস্কার বোঝা গেল না। এভাবেই নানা বাক-বিতন্ডা চলতে থাকে। আর এসব দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করছিলেন একজন উৎসাহী মানুষ। বুলবুল এসময় পুলিশ কর্তার ওপর রাগ ঝাড়তে না পেরে দৃশ্য ধারণকারী ওই ব্যক্তির মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। হুঙ্কার ছেড়ে বলেন- ‘হেই..! হু আর ইউ?’ কিন্তু বুলবুল সাহেবের সেই হুঙ্কারকে ছাপিয়ে করে দৃশ্যধারণকারী ব্যক্তি বলে ওঠেন ‘আমি উৎসাহী জনতা।’
জনাব বুলবুলের এই হম্বিতম্বির ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সুশীল মুখোশ খুলে গেছে মানুষের সামনে। টকশো’র টেবিলে বসে যারা বাকচাতুর্য দিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন তেমন ব্যক্তিদেরও যে পেছনের একটা চেহারা আছে তা ক’জনেই জানেন!
এ ধরণের দ্বিমুখী চরিত্রের ব্যক্তিরাই দেশের মিডিয়াগুলোকে ব্যবহার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্ট চালিয়ে যাচ্ছে অবিরাম। এরাই জনগণের অধিকার হরণকারীকে হিরো বানিয়ে প্রচার করে। দেশপ্রেমিকদের নামে মিথ্যা কুৎসা রটায়। সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে বাহারি সাজে সাজিয়ে গ্রহনযোগ্য করে প্রচার করতে সিদ্ধহস্ত।
যাইহোক, সাহসী ওই তরুণ থেকে শেখার আছে আমাদের। অপরাধ করেও জনগণের দিকে তেড়ে আসার প্রতিবাদ করে ‘আমি উৎসাহী জনতা’ বলে চিৎকারটা সত্যিই শিহরণ জাগায়। ভাবতে শেখায়, এদেশে এখনও অনেক প্রতিবাদী তরুণ আছেন। এখনও তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখতে পারেন। অন্যায় অসঙ্গতি দেখলে এখন মিডিয়ার ওপর ভরসা না করে জনগণ প্রচারের প্রচারের দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে। এটা সত্যিই আশা জাগানিয়া। সচেতনতার দৃষ্টান্ত। আমরা সবাই এভাবে গর্জে উঠতে পরি। তবে শুধুমাত্র উৎসাহী না থেকে চলুন সচেতন হই। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলি – ‘আমরা সচেতন জনতা…’
লেখক: ব্লগার ও অনলাইন এ্যক্টিভিস্ট