অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিগত সেনা শাসিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নামে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা করা হয়। এসব মামলায় তারা দুইজনকে গ্রেফতার করে কয়েক মাস বিশেষ কারাগারে আটক রাখা হয়। পরে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চাপে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন তাদেরকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল আসনে বিজয়ী হয়। ওই নির্বাচনের পরই অভিযোগ উঠেছিল যে ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন পরিকল্পিতভাবেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতকে পরাজিত করেছিল। দায়মুক্তি দেয়ার শর্তেই তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনেছিল। রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষের অভিযোগ যে সত্য ছিল দীর্ঘদিন পর সেটা প্রমাণ পাওয়া গেছে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির লেখা বই ‘দ্যা কোয়ালিশন ইয়ার’ থেকে।
২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে প্রথমেই শেখ হাসিনা তার নামে করা সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করে নেন। আর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো আগের অবস্থাতেই থেকে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে খালেদা জিয়ার মামলাতো প্রত্যাহার করেনি, বরং উল্টো স্থগিত থাকা মামলাগুলোর কার্যক্রম আবার নতুন করে শুরু করে।
বিশেষ করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলা দুইটির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকার বকশিবাজারের আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিশেষ আদালত স্থাপন করে। দুইটি মামলার মধ্যে জিয়া অরফানেজ দুর্নীতির মামলার কার্যক্রম প্রায় শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ ও খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তিতর্কও শেষ হয়েছে। এখন অন্য আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক চলছে। হয়তো চলতি সপ্তাহেই মামলার কার্যক্রম শেষ হবে। শেষ হলেই যেকোনো দিন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলার রায় হবে।
খালেদা জিয়ার মামলার রায় যত ঘনিয়ে আসছে রাজনীতিতে উত্তাপ-উত্তেজনা ততই বাড়ছে। আত্মপক্ষ সমর্থন করে দেয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া একাধিকবার বলেছেন, আমাকে রাজনীতি ও নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা মিথ্যা সাক্ষী বানিয়ে ও জাল কাগজ তৈরি করে মামলার চার্জশিট দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, এ মামলায় আমি ন্যায়বিচার পাবো না। সরকারের নির্দেশনার আলোকেই বিচারকরা রায় প্রদান করবেন।
বিএনপি নেতারা বলছেন, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের বাইরে রাখতেই সরকার ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে। বিচারকরা স্বাধীনভাবে মামলার রায় দিতে পারবেন না। রায় কী হবে সেটা সরকারের পক্ষ থেকে আগেই বলে দেয়া আছে। সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে বিচারকরা যেতে পারবেন না।
অপরদিকে, প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও সরকারদলীয় নেতারা বলে আসছেন এ মামলায় সরকারের কোনো হাত নেই। এটা তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে করা মামলা। আদালতের ওপর সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
তবে, প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা এসব কথা বললেও সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী দুই বছর ধরেই বলে আসছেন যে দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে জেলে যেতেই হবে। খালেদা জিয়ার স্থান হবে কাশিমপুর কারাগারে। খালেদা জিয়ার জেলের বাইরে থাকার কোনো সুযোগ নেই।
তাদের এসব বক্তব্যে মামলার নিরপেক্ষ কার্যক্রম ও রায় নিয়ে বিশিষ্টজনসহ সচেতন মানুষের মনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মামলার রায়ে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন নাকি দোষী সাব্যস্ত হবেন সেটা জানেন আদালত। সরকারের মন্ত্রীরা প্রতিদিন আগাম রায় দিয়ে খালেদা জিয়াকে জেলে ঢুকাচ্ছে কীভাবে?
সর্বশেষ শুক্রবার রাতে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা কক্সবাজারে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আপনারা একটু অপেক্ষা করুন, আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে জেলে যেতে হবে।
মামলার রায়ের সময় যখন ঘনিয়ে আসছে তখন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীর এমন বক্তব্য মানুষের মনে সৃষ্ট হওয়া সন্দেহ সংশয়কে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর রাঙ্গার এ বক্তব্য নিয়ে সারাদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও বিশিষ্টজনসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
অনেকেই বলছেন, খালেদা জিয়ার মামলার রায়ের খসড়া কি সরকারের মন্ত্রীদের হাতে চলে আসছে? নাকি রায় কি সেটা সরকারই ঠিক করে দিয়েছে?
কেউ কেউ বলছেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায়ের মতো খালেদা জিয়ার মামলার রায়ও আগেই সরকার লিখে রেখেছে। এখন বিচারকরা শুধু সরকারের লিখিত রায় পড়ে শুনাবেন।