কদরুদ্দিন শিশির
গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস একটি সংবাদ থেকে দু’টি প্যারা তুলে ধরছি। “কিছু রাজনীতিবিদ নির্বাচন এলে বক্রপথে ক্ষমতায় যাবার স্বপ্ন দেখে : প্রধানমন্ত্রী” শিরোনামের প্রতিবেদনটি বলা হয়–
“অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডেকান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশীপ-২০১৭ মানবতার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রকাশ করেছে সংক্রান্ত সাংসদ ফখরুল ইমামের তথ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটুকু বলতে চাই, কি পাইনি সে হিসাব মেলাতে মন মোর নহে রাজি। কি পেলাম, কি পেলাম না সে হিসাব মেলাতে আমি আসিনি। দেশের মানুষের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য আমি কাজ করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বিশ্লেষণ তাঁর ওপর কোন প্রভাব ফেলেনা।”
এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরো বিস্তারিত বক্তব্য আছে বাসসের এই লিংকে- http://www.bssnews.net/bangla/newsDetails.php?cat=7&id=436059&date=2018-01-17
বাসসের প্রতিবেদনের শেষাংশতে লেখা হয়–
“উল্লেখ্য, অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ডেকান ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশীপ-২০১৭’র গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী তালিকায় ৫ম হয়েছেন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট, ৪র্থ হয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মারকেল, ৩য় ধনকুবের বিল গেটস, ২য় হয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস এবং প্রথম হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (বিশ্ব মানবতার চ্যাম্পিয়ন)। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, সেবার জন্য কেবল টাকা নয়, একটি মানবিক মনেরও প্রয়োজন রয়েছে, প্রয়োজন উদারতা, সাহস ও মমত্ববোধ।”
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটিতে এসব তথ্যে যে সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে তাতে গিয়ে তন্নতন্ন খুঁজে আলোচ্য নামের কোনো গবেষণা প্রতিবেদনের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
বিডিফ্যাক্টচেকের অনুসন্ধান মতে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পোপ ফ্রান্সিস, বিল গেটস বা আরও যাদের নাম উল্লেখ করে “মানবতার চ্যাম্পিয়ন” বলে জাতীয় সংসদে প্রচার এবং বাসসের প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে- তা সম্পূর্ণ ভুয়া।
অস্ট্রেলিয়ার deakin university এর ওয়েবসাইটে গিয়ে ‘নিউজরুম’ এবং ‘মিডিয়া রিলিজ’ সেকশনে এমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায়নি। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে নিয়ে গবেষণা ও তাদেরকে কোনো উপাধি দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলে বিশ্ববিদ্যালয়টির ওয়েবসাইটে সে সংক্রান্ত খবর অবশ্যই থাকার কথা।
সংসদে এমপি ফখরুল ইমাম এবং বাসস তাদের প্রতিবেদনে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বলেছে “সেন্টার ফর হিউম্যান লিডারশীপ”। যদিও বাস্তবে deakin university ও অন্যান্য কয়েকটি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় চলা গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম Centre for Humanitarian Leadership বা CHL.
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের লিংক: http://www.deakin.edu.au
CHL এর লিংক: http://centreforhumanitarianleadership.org/
CHL এর ওয়েবসাইটেও সম্প্রতি বা অতীতে কাউকে “মানবতার চ্যাম্পিয়ন” বা “বিশ্ব মানবতার চ্যাম্পিয়ন” বলে ঘোষণা করার কোনো তথ্য নেই।
বাসসের সংবাদে সূত্র হিসেবে উল্লেখ দু’টি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে কোনো তথ্য না পেয়ে বাড়তি সূত্র হিসেবে অনুসন্ধানের জন্য গুগলের সহায়তা নেয়া হয়।
প্রথমে নিচের কী-ওয়ার্ডগুলো দিয়ে গুগল সার্চ করে উপরে বর্ণিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কী-ওয়ার্ডগুলো হল-
deakin university center for human leadership Sheikh Hasina
deakin university center for human leadership Pope Francis
deakin university center for human leadership Bill Gates
এরপর CHL এর নামের বানান ঠিক করে আবারও গুগল সার্চ দিয়েও পাওয়া যায়নি কোনো তথ্য।
Centre for Humanitarian Leadership Sheikh Hasina
Centre for Humanitarian Leadership Pope Francis ইত্যাদি।
শুধু সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটেই নয়, বিশ্বের কোনো প্রান্তের অন্য কোনও ওয়েবসাইট/নিউজ পোর্টালে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বর্তমান বিশ্বের অত্যন্ত সুপরিচিত ব্যক্তিবর্গ- পোপ ফ্রান্সিস, বিল গেটস, ওয়ারেন বাফেট এবং এঞ্জেলা মেরকেলকে কোনো নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ‘মানবতার চ্যাম্পিয়ন’ ঘোষণা করা হবে- আর তা বিশ্বের কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হবে না? আশ্চর্যজনক ব্যাপার!
অবশ্য বিশ্বের কোথাও যে এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়নি তা অবশ্য ঠিক নয়। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ‘ভুয়া খবর বিতরণের ওয়েবসাইট’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করা ‘বাংলা ইনসাইডার’ নামক একটি পোর্টালে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে গত ৮ জানুয়ারি। ওয়েবসাইটটির বাংলা ভার্সনে প্রতিবেদনের শিরোনাম করা হয়েছে, “শেখ হাসিনা: বিশ্ব মানবতায় চ্যাম্পিয়ন“।
সূত্র: বিডিফ্যাক্টচেক