আফগানিস্তানের কাবুলে সংবাদ সংস্থা আফগান ভয়েস এবং শিয়া সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তেবিয়ান সেন্টারের কার্যালয়ের কাছে একটি বোমা হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন। আফগান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা হতাহতের খবরটি নিশ্চিত করেছে। এই বিস্ফোরণকে ‘আত্মঘাতী বোমা হামলা’ বলে সন্দেহ করছে কর্তৃপক্ষ। আফগান ভয়েসের এক সাংবাদিক ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে দাবি করেছেন, তিনি একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। আফগান ভয়েসের প্রবেশ পথেও একটি বিস্ফোরণ হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে উদ্ধৃত করে আল জাজিরা জানায়, বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে আফগান ভয়েস এবং তেবিয়ান সেন্টারের কার্যালয়ের কাছে বোমাটির বিস্ফোরণ হয়। ওয়ান টিভি নিউজকে আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, এটি আত্মঘাতী বোমা হামলা বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। সম্ভবত একজন আত্মঘাতী এ হামলা চালিয়েছে। হামলায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তিকে উদ্ধৃত করে টোলো নিউজ জানায়, বৃহস্পতিবার অ্যাক্টিভিস্টরা তেবিয়ান কালচারাল সেন্টারে একটি বৈঠকের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। তখন এক আত্মঘাতী হামলাকারী তার সঙ্গে থাকা বোমা বিস্ফোরণ করে। আফগানিস্তানের উপ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র নাসরাত রাহিমি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘তাবিয়ান কালচারাল সেন্টারটি হামলার লক্ষ্য ছিল। আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযানের ৩৮ তম বার্ষিকী পালনের জন্য সেখানে এক অনুষ্ঠান চলার সময় বোমাটির বিস্ফোরণ হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, প্রচণ্ড বিস্ফোরণে পার্শ্ববর্তী আফগান ভয়েসের ভবন ভেঙে গেছে।
আফগান জার্নালিস্টস সেফটি কমিটি (এজেএসসি) হামলার নিন্দা জানিয়েছে। টুইটারে এজেএসসি জানিয়েছে, উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তা করার জন্য তাদের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যাচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কোনও গোষ্ঠী হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে আফগান তালেবানের পক্ষ থেকে হামলার দায় অস্বীকার করে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
গত মে মাসে জালালাবাদে আফগানিস্তানের একটি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলায় ৬ জন নিহত হয়। ওই হামলার দায় স্বীকার করেছিল আইএস। নভেম্বরে বেসরকারি টেলিভিশন স্টেশন শামশাদ টিভিতে আইএস এর হামলায় অন্তত একজন নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হয়। এর আগে ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে টোলো নিউজের কর্মীদের বহনকারী একটি গাড়িতে হামলায় ৭ জন নিহত হয়। এর আগে তালেবানের কাছ থেকে হুমকি পেয়েছিল টোলো নিউজ।
এছাড়া ২০১৭ সালে কাবুলে বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা হয়েছে। গত ৮ মার্চ শহরের একটি হাসপাতালে বন্দুকধারীর হামলায় ৩০ জন নিহত হয়। ওই হামলায় আইএসের পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হলেও কর্তৃপক্ষ সন্দেহ করেছিল অন্য কোনও সংগঠন হামলায় জড়িত। এরপর গত ৩১ মে কূটনৈতিক এলাকার কাছে একটি ট্রাকে বোমা বিস্ফোরিত হয়। ওই হামলায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। তবে কারা ওই হামলাটি চালিয়েছিল তা এখনও স্পষ্ট নয়। ২১ অক্টোবর কাবুলের শিয়া মসজিদে হামলায় ৩৯ জন নিহত হয়। ওই হামলারও দায় স্বীকার করে আইএস। সর্বশেষ ২৫ ডিসেম্বর কাবুলে গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ের কাছে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা হয় এবং আইএস এর পক্ষ থেকে দায় স্বীকার করা হয়।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন