নাঈম আব্দুল্লাহ
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টা। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে তৎকালীন ছাত্রসমাজ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে এখনকার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকার আমতলা থেকে মিছিল বের করে। আর সে মিছিলে গুলি চালিয়ে শহীদ করা হয় রফিক, জব্বার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ আরও অনেককে। মাতৃভাষার জন্য এ জীবন দেয়া বিশ্বের বুকে আমাদের জাতিকে সম্মানিত করেছে। এমনকি ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত আমতলার সেই ঐতিহাসিক প্রাঙ্গণের বর্তমান চিত্র বড়ই করুণ।
ঐতিহাসিক এই স্থাপনার গায়ে লোহার পেরেক দিয়ে সেঁটে দেয়া হয়েছে ঢাকা মেডিকেলের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী সমিতির নির্বাচনের ব্যানার সহ বেশকিছু রাজনৈতিক ব্যানার ও পোস্টার। সামনের ফুটপাথ হকারদের দখলে। চা, ফিরনি, ঝালমুড়ি, খাবার হোটেল ও বিড়ি সিগারেটের দোকান থেকে শুরু করে মশারি, প্লাস্টিক সামগ্রী, কম্বল ও ফলের দোকান রয়েছে। গেটের ভেতরের দুই পাশে দুটি ভাসমান বসত ঘরও রয়েছে। সামনের ফুটপাথের দোকানীদের এই গেট সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তারা কিছুই বলতে পারেনি।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জানান, ভ্রাম্যমাণ দোকানের পাশাপাশি এখানে রাজত্ব চলে মাদকসেবীদের। দিনের বেলা এ স্থানটি হকারদের দখলে থাকে আর রাতে বসে মাদকসেবীদের জমজমাট আড্ডা। এর সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা এবং হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী নেতারাও জড়িত। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কয়েকবার উচ্ছেদ করলেও তারা পুনরায় ফিরে আসে। ফলে স্থানটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব হারাতে বসেছে।
ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পেরিয়ে গেলেও ঐতিহাসিক এ স্থানটির দায়িত্ব নেয়নি কেউ। আন্দোলনের সময় আমতলা গেটটি ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। বর্তমানে এটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘরের দেওয়া একটি টিনের সাইনবোর্ডের মাধ্যমে কোনোরকম চেনা যায় গেটটি। সে টিনের সাইনবোর্ডটিরও একদিকের পেরেক খসে গেছে।
ঐতিহাসিক এ স্থানটির অবৈধ দখল বিষয়ে যেন কারো কোন মাথাব্যাথা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্থাপত্য ও গণপূর্ত অধিদফতর, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাংলা একাডেমি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনসহ সবাই এ ঐতিহাসিক স্থানটির রক্ষণাবেক্ষনের ব্যাপারে নির্লিপ্ত। অবহেলা আর সংশ্লিষ্টদের নির্লিপ্ততায় এ স্থানটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব হারাতে বসেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক আমতলা অবহেলিত কোন যুক্তিতে? এ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষায়ও কি উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রয়োজন হবে?