অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বড় ধরণের কোনো সহিংসতা ছাড়াই শেষ হয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী বিশাল ভোটের ব্যবধানে চরম ভরাডুবির পথে রয়েছে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা। ইতিমধ্যে নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে তিনি ফলাফল প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামল থেকেই রংপুর জাতীয় পার্টির শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত। বলা যায় সেই ধারা এখনও পর্যন্ত অব্যাহত আছে। ২০১২ সালের সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত শরফুদ্দিন আহমদ ঝন্টুও এক সময় জাতীয় পার্টির নেতাই ছিলেন। ওই নির্বাচনে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছিল ব্যক্তি ঝন্টুকে। আর জাতীয় পার্টির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ঝন্টুর পক্ষে বিজয়ী হওয়া সম্ভব হয়েছিল। একক প্রার্থী থাকলে জাতীয় পার্টির প্রার্থীই বিজয়ী হতেন। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবে এটা নির্বাচনের আগেই পরিষ্কার ছিল।
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে পরাজিত প্রার্থীদের ভোটের ব্যবধান নিয়ে। বিশেষ করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী কাওসার জামান বাবলার প্রাপ্ত ভোট থেকে জয়ের পথে থাকা জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার প্রাপ্ত ভোট চার গুনেরও বেশি। বিএনপির প্রার্থী পাস না করলেও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে ভোট বেশি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়েও বিএনপি প্রার্থী অর্ধেক ভোট কম পেয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর এ চরম ভরাডুবি নিয়ে নানা কথা শুনা যাচ্ছে।
তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত রংপুরে ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। বিএনপির কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও এবিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যার কারণে শরিক দলগুলোর কেন্দ্র থেকেও স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে সিটি নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার দিক নির্দেশনা দেয়া হয়নি। স্থানীয়রা তাদের খুশি মতো পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। যেমনটি হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে।
নারায়ণগঞ্জে জামায়াতের বিশাল সংখ্যক ভোট থাকার পরও বিএনপি জামায়াতকে এড়িয়ে গিয়েছিল। পরে জানা গেছে, জামায়াত শিবিরের লোকজন বিএনপির প্রার্থীকে ভোট দেয়নি।
এর আগে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে জামায়াত বিএনপির প্রার্থীর জন্য কাজ করেছিল। সেটাও বিএনপির কারণে নয়। যেকোনো জায়গার চেয়ে কুমিল্লায় জামায়াত-শিবিরের শক্ত অবস্থান রয়েছে। এজন্য মনিরুল হক সাক্কু অনেক আগ থেকেই জামায়াতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন।
খোঁজ নিয়ে জান গেছে, রংপুর সিটিতেও জামায়াতের ভোট একেবারে কম নয়। কিন্তু, বিএনপি নেতারা জামায়াতকে এড়িয়ে গেছেন। বিএনপি নেতারা মনে করছিলেন জামায়াতকে বাদ দিয়ে তারা বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
২০ দলের শরিক দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুরে বিএনপি নেতারা শরিক দলের কোনো নেতার সঙ্গেই যোগাযোগ করেনি। তারা একলা চল নীতি অবলম্বন করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতের একজন নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদেরকে যদি তাদের প্রয়োজন না হয় তাহলে আমরা আগ বাড়িয়ে ধানের শীষে ভোট চাইতে যাবো কেন? আমাদের লোকজন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছে। কাকে ভোট দিয়েছে সেটা আমরা জানি না। আর জামায়াতকে এড়িয়ে চলার জন্য বিএনপির কেন্দ্র থেকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য রংপুরের স্থানীয় নেতারাও জামায়াতের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমার ধারণা এ কারণে হয়তো জামায়াতের কোনো ভোট বিএনপি প্রার্থী পায়নি কিংবা তারা ভোট দিতেই যায়নি।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি যদি এভাবে একলা চল নীতি অবলম্বন করে পথ চলে তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় ধরণের পরাজয় তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। বিএনপির কয়েকজন নেতা ২০ দলীয় জোট ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছে। তারা বিএনপি করলেও আসলে সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে।
Discussion about this post