অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বিদেশে খালেদা জিয়ার কথিত সম্পদ নিয়ে অসত্য বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো উকিল নোটিসের জবাবে উল্টো খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেই আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী দিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
ওই উকিল নোটিস প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেছেন, তা না হলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন তারা।
বিদেশে কথিত সম্পদ নিয়ে বক্তব্যের জন্য বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে উকিল নোটিস পাঠান খালেদা জিয়া। উকিল নোটিশে বলা হয়েছে, ওই বক্তব্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চাইতে হবে এবং তা সংবাদমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৩০ দিনের মধ্যে তা করা না হলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া জানাতে সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে আসেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের বিদেশে অর্থ বিনিয়োগের অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কাছে কোনো তথ্যপ্রমাণ আছে কি না জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের কাছে অবশ্যই তথ্য প্রমাণ আছে। তাছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে মতিয়া চৌধুরীও বলেছেন, “আওয়ামী লীগ তথ্য প্রমাণ ছাড়া ভিত্তিহীন কোনও তথ্য প্রচার করে না। আওয়ামী লীগ কোনো দিন কোনো বানোয়াট কথা বলে না, ভিত্তিহীন তথ্য দেয় না।”
তারা আরো বলেছেন, “খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি দেশে-বিদেশে ফলাও করে প্রচার হচ্ছে। দুর্নীতির মামলায় তাদের শুনানি চলছে, ঠিক এই সময়ে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই খালেদা জিয়া আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন। তিনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন।”
জনাব হাছান মাহমুদ আর মতিয়া চৌধুরী বলছেন তাদের কাছে বিদেশে খালেদার কথিত সম্পদের বিষয়ে তথ্য প্রমাণ রয়েছে। কথা হলো, তাহলে তারা তথ্য প্রমাণ সাংবাদিকদের সামনে পেশ করতে দেরি করছেন কেনো? খালেদা জিয়া শাক দিয়ে যেই মাছটি ঢাকার চেষ্টা করছেন সেই মাছটিকে তারা উন্মুক্ত করে দিচ্ছেনা কেনো? তথ্য প্রমাণ পেশ করেই তো তারা খালেদাকে ধরাশায়ী করতে পারেন। রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে পারেন। খালেদাকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করতে পারেন।
কিন্তু তারা সেই কথিত তথ্য প্রমাণ পেশ না করে বরং খালেদাকে উল্টো আইনি নোটিশ প্রত্যাহার করতে বলছেন এবং না করলে পাল্টা আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকী দিচ্ছেন। প্রমাণ পেশ করে হুমকী দিলেই সেটা যুক্তিযুক্ত হতো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে সরকার তথ্য প্রমাণ না দিয়ে ক্ষমতা দেখাচ্ছে।
যদিও খালেদার কথিত সম্পদ বিষয়ক সংবাদের কোনো হদিস বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো তন্ন তন্ন করেও সার্চ করেও খুঁজে পায়নি। বাংলাদেশের সরকার সমর্থিত দু-তিনটি মিডিয়াতে এই কথিত খবরটি এসেছে। তারা যেসব তথ্যসূত্র ব্যবহার করেছে সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
এ সম্পর্কে বিডিনিউজ২৪ লিখেছে- “প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী সম্পাদিত দ্য ডেইলি অবজারভারে এই খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল গত ১ ডিসেম্বর। প্রতিবেদনে সংবাদের উৎস বলা হয়েছিল, আরবভিত্তিক টিভি চ্যানেলগুলোকে উদ্ধৃত করে ‘গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক (জিআইএন)’ এবং ‘কানাডার টিভি চ্যানেল দ্য ন্যাশনাল’ এই খবর দিয়েছে।
ইন্টারনেট ঘেঁটে ‘দ্য নাশনাল’ নামে কানাডার কোনো টিভি চ্যানেলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। কানাডার রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলে দ্য নাশনাল নামে একটি নিউজ প্রোগ্রামের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, তবে সেখানে সার্চ দিয়ে খালেদা সংক্রান্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। আর গ্লোবাল ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ক নামে কোনো গণমাধ্যম ইন্টারনেটে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
‘বাংলা ইনসাইডার’ নামে একটি ইন্টারনেট সংবাদপত্রেও ‘খালেদার সম্পদের’ খবরটি ছাপা হয়েছে। সেখানে কোনো সূত্রের উদ্ধৃতি নেই। এই সংবাদপত্রটি ইতোপূর্বে ভুয়া খবর প্রকাশের জন্য আলোচনায় আসে।”
এছাড়া আরো অনেকের পাশাপাশি অ্যানালাইসিস বিডির পক্ষ থেকেও অনলাইনে এবং উল্লিখিত বিদেশি পত্রিকায় তন্ন তন্ন করে সার্চ করা হয়েছে। কিন্তু খালেদার কথিত নিউজের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
গত ৭ ডিসেম্বর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নে ওই প্রসঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই খবর কেন শুধু দুটি সংবাদপত্র ও দুটি টেলিভিশনে প্রকাশ করা হল, কেন অন্য সংবাদমাধ্যমগুলো তা প্রকাশ ও প্রচার করল না- সেই প্রশ্ন তুলে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী অনেকটা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, “সৌদি আরবে যে বিশাল শপিং মল পাওয়া গেল; এটা তো আমরা বলিনি। এই খবর দেওয়ার কোনো আগ্রহ দেখলাম না।”
পরেরদিন ৮ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে এটাকে সর্বৈব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে অভিহীত করেন এবং এই মানহানিকর মিথ্যা তথ্য প্রচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা প্রার্থনা করার আহ্বান জানান। অন্যথায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার হুমকীও দেন তিনি।’
মির্জা ফখরুলের এই হুমকীর ১০ দিন পার হলেও প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা চাননি কিংবা এই সংবাদের কোনো তথ্য প্রমাণও হাজির করেননি। উল্টো দুদিন আগে একটি বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কথিত সম্পদের বিষয়টি ফের তিনি উল্লেখ করেন। তারই প্রেক্ষিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রীকে আইনি নোটিশ পাঠান খালেদা জিয়া।
Discussion about this post