অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
শ্রী টিটু চন্দ্র রায় নামে এক ব্যক্তির ইসলাম ধর্মকে কটুক্তি ও অবমাননা করে এক ফেসবুক স্ট্যাটারের জেরে রংপুরে সম্প্রতি অনেক তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়েও বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধন করে এবং এক পর্যায়ে কে বা কারা হিন্দু পাড়ায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে।
বরাবরের মতই বাংলাদেশের মিডিয়া যেমন আচরণ করে এক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই করলো। অর্থাৎ ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাস, প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে না পাওয়া, সাধারণ মুসল্লিদের প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন, ইত্যাদিকে ছাপিয়ে হিন্দু বাড়িতে হামলাটাই মুখ্য হয়ে উঠলো তাদের কাছে। এটা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হলো। ইসলামপন্থিদেরকে অভিযুক্ত করার যাবতীয় চেষ্টা মিডিয়া করেছে।
যদিও প্রত্যক্ষদর্শী এলাকাবাসীরা জানিয়েছে পলাশ চন্দ্র নামে স্থানীয় এক হিন্দু আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগীতায় মোটর সাইকেলে করে এসে কে বা কারা হিন্দু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এমনকি ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে পুলিশ আগুন নিভানোর জন্য হিন্দুদের কাছে সহযোগীতা চাইলেও যাদের ঘরে আগুন লেগেছে স্বয়ং সেই হিন্দুরাও আগুন নিভাতে এগিয়ে আসেনি, পুলিশকে কোনো সহযোগীতা করেনি। এসব প্রমাণ থেকে বুঝা গিয়েছিলো, সাধারণ মুসল্লিদের বিক্ষোভের ফাঁকে একটি পক্ষ সংখ্যালঘু রাজনীতিকে কাজে লাগাতে পরিকল্পিতভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে।
মিডিয়াগুলোতে তখন ধর্ম অববমাননাকর স্ট্যাটাসদাতা টিটু রায়কে নিরক্ষর হিসেবে তুলে ধরে তাকে নির্দোষ প্রমাণের প্রাণপণ চেষ্টা চালানো হলেও এখন তদন্ত কমিটির কাছে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেই ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাসটি শ্রী টিটু চন্দ্র রায়ই দিয়েছিলো।
জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান ও রংপুর জেলার অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মো. আরিফ আজ দুপুরে জানিয়েছেন, ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাসটি রংপুরের টিটু রায়ই দিয়েছেন, এর প্রমাণ তারা পেয়েছেন। এ মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।(তথ্যসূত্র: ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভি)
সেই ঘটনার সময় বাংলা ট্রিবিউন অনলাইন পত্রিকায় শিরোনাম করা হয়েছিলো- ‘ফেসবুকে কথিত স্ট্যাটাস দেওয়া টিটু রায় ‘নিরক্ষর’, এলাকায় নেই ৭ বছর’। সেখানে টিটু রায়ের পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘টিটু রায় ফেসবুক ব্যবহার তো দূরে থাক, কোনও পড়ালেখাই জানে না। টাকা-পয়সা ধার-দেনা করে প্রায় সাত বছর ধরে সে এলাকাছাড়া।’
এমন শিরোনামে খবর বেরোয় কালেরকণ্ঠসহ আরো অনেক পত্রিকায়। এভাবে নিরক্ষর ব্যাপারটি হাইলাইট করে টিটু রায়কে নির্দোষ প্রমানের চেষ্টা চালিয়েছিলো অধিকাংশ মিডিয়া। অথচ এলাকাবাসীর কথাই এখন সত্য প্রমাণিত হলো। প্রমাণ হয়েছে মিডিয়ার কথিত ‘নিরক্ষর’ টিটু চন্দ্র রায়ই ফেসবুকে ধর্ম অবমাননাকর স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলো।
মিডিয়ার এমন একপেশে ভূমিকা প্রায়সময় বাংলাদেশে বিপর্যয় ডেকে আনে। অপরাধীর পক্ষে সাফাই গেয়ে তারা অপরাধী তথা অপরাধকেই সাপোর্ট দেয়। বিশেষ করে অপরাধী যদি সংখ্যালঘু পর্যায়ের কেউ হয়ে থাকে তাহলে তো কথাই নেই। মিডিয়া তাকে নির্দোষ প্রমানে উঠে পড়ে লেগে যায়। এতে করে ন্যায়বিচারে বিঘ্ন ঘটে। মিডিয়া যদি প্রশাসনের ব্যর্থতাকে হাইলাইট করে তুলে ধরতো তাহলে প্রশাসন আর এমন গাফিলতি করতে সাহস পেতো না। এবং অন্যান্য এলাকায় এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও কমে আসতো।
Discussion about this post