অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
চিকিৎসার জন্য গত সপ্তাহে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। কারাগার থেকে বের হওয়ার পর থেকেই তিনি অনেক জটিল রোগে ভুগছেন। চিকিৎসার জন্য লন্ডন যেতে তিনি একাধিকবার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সরকার তাকে যেতে দেয়নি। এনিয়ে তিনি রিট করলে সুপ্রিমকোর্ট তাকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেন। সুপ্রিমকোর্টের অর্ডার নিয়ে তিনি পরে সিঙ্গাপুর গিয়েছেন। সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময়ও পুলিশ তার পাসপোর্ট নিয়ে ২ ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে হয়রানি করেছে। সুপ্রিমকোর্টের অর্ডারের কাগজটি সঙ্গে থাকায় আদালত অবমাননার আশঙ্কায় পুলিশ তাকে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। সর্বশেষ খবর নিয়ে জানা গেছে, তিনি এখন সিঙ্গাপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে, মাহমুদুর রহমান বিদেশ যাওয়ার পরই তাকে নিয়ে দেশে আরেক খেলা শুরু হয়ে গেছে। ১ ডিসেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিল (বিডিসি) কর্তৃক আয়োজিত ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণমাধ্যমর ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মাহমুদুর রহমানের দেয়া বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার মানহানি হওয়ার কথিত অভিযোগ এনে দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহারে মামলা দায়ের করছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার, শনিবার ও আজ রোববার এই তিনদিনে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে ৫টি রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলা দায়ের হয়েছে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- গত বৃহস্পতিবার নাটোরে ১ হাজার কোটি টাকার মানহানি মামলা দায়ের করা হয়েছে। নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মালেক শেখ বাদি হয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। দুপুরে আদালত মামলাটি গ্রহণ বাদীর বক্তব্য শুনে সদর থানার ওসিকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিতে ওসিকে আদেশ দেন।
এরপর শুক্রবার মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়রি (জিডি) করা হয়েছে। মানিকগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আনোয়ারুল হকের ব্যক্তিগত সহকারী নিজাম হোসেন শুক্রবার রাতে এ জিডি করেন।
তারপর আজ রোববার কুড়িগ্রাম, গাজীপুর ও সাভারে ৩ টি মামলা করা হয়েছে। কুড়িগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২ হাজার কোটি টাকা মূল্যের সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার অভিযোগ এনে রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট লুৎফর রহমান বাদী হয়ে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হক বসুনিয়ার আদালতে এ মামলা দায়ের করেন। সাভার মডেল থানায় একটি সাধারন ডায়েরি করা হয়েছে। সাভার পৌর এলাকার জালেশ^র মহল্লার বাসিন্দা যুবলীগ নেতা ছাইদুল হক বাদী হয়ে এ সাধারন ডায়েরি করেন। এছাড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি মঈনুল হোসেন শনিবার রাতে একটি ডায়েরি করেন।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই বিভিন্ন স্থানে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলায় একটি করে মামলা করবে আওয়ামী লীগ নেতারা। কোন জেলায় কোন দিন মামলা হবে সেটাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
মামলার কারণ হিসেবে জানা গেছে, প্রেস ক্লাবে দেয়া বক্তব্য কেবলই ইস্যু মাত্র। সরকারের মূল টার্গেট হলো মাহমুদুর রহমানকে মামলা দিয়ে সিঙ্গাপুরে আটকে রাখা। মাহমুদুর রহমানকে বিদেশ যেতে দেবে না এটা সরকারের প্রথম সিদ্ধান্ত ছিল। পরে সরকার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। এর কারণ হলো, জেল থেকে বের হওয়ার সরকার মাহমুদুর রহমানের মুখ বন্ধ করে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মাহমুদুর রহমান সরকারের এসব বাধা মানে নি। বিভিন্ন ইস্যুতে মাহমুদুর রহমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে বলেও মনে করছে সরকার। বিশেষ করে গুম-অপহরণ নিয়ে মাহমুদুর রহমানের সোচ্চার ভূমিকা নিয়ে সরকার খুব অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। এজন্য সরকার তাকে সিঙ্গাপুর যেতে বাধা দেয়নি।
সরকারের টার্গেট হলো কিছু মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হবে। যাতে আবার জেলে যাওয়ার ভয়ে মাহমুদুর রহমান আর দেশে ফিরে না আসে।
তবে, মাহমুদুর রহমানের ঘনিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার যত মামলাই দায়ের করুক না কেন চিকিৎসা শেষে মাহমুদুর রহমান দেশে চলে আসবেন। এসব মামলাকে তিনি পরোয়া করেন না। সূত্রটি জানায়, মামলা দিয়ে সরকার মাহমুদুর রহমানকে বিদেশে আটকে রাখতে পারবে না। মাহমুদুর রহমান দেশে এসে সব মামলার মোকাবেলা করবেন।
Discussion about this post