মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে। এই ইস্যু নিয়ে জাতিসঙ্ঘে একা হয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ সময় ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ, ফিলিস্তিনীদের রকেট হামলা ও ইসরাইলের বিমান হামলায় কমপক্ষে দু’জন নিহত ও আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এদিকে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা এক জরুরি বৈঠকে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক সংস্থাটিতে এখন একা হয়ে পড়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড ও জেরুসালেমে একদিনের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও সহিংসতাকালে গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরাইলে কমপক্ষে তিনটি রকেট ছোঁড়া হয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটিকে ইসরাইলের আয়রো ডোম এন্ট্রি মিসাইল সিস্টেম ভূপাতিত করেছে।
আরেকটি রকেট পরিত্যক্ত স্থানে পড়েছে কিন্তু তৃতীয়টি ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী সেরোতে পড়েছে।
যদিও ইসরাইলের সরকারি বেতার জানিয়েছে, রকেট বিস্ফোরিত হয়নি এবং এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এই রকেট হামলার পর ইসরাইল গাজা ভূখণ্ডের দুটি হামাস মিলিটারি স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়।
গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানায়, এই হামলায় ১৪ জন আহত হয়েছেন।
দিনের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে দুই ফিলিস্তিনী নিহত হন। গাজা ও ইসলাইলকে বিভক্তকারী বেড়ার কাছে এই সংঘর্ষ ঘটে।
গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলা-বিক্ষোভ-সংঘর্ষে নিহত ৪
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন দু’জন। এ ছাড়া ছয় শিশুসহ কমপক্ষে ৩৫১ জন আহত এবং কাঁদানে গ্যাসের বিষক্রিয়ায় ৭৪৮ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। গাজা উপত্যকা থেকে রকেট হামলার জবাবে এ হামলা চালানোর দাবি করেছে প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। স্থানীয় সময় শুক্রবার রাতে এ বিমান হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছে রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরটি। এর আগে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় আরো দুই ফিলিস্তিনি নিহত এবং সাত শতাধিক আহত হন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে আইডিএফ জানায়, শুক্রবার হামাসের রকেট হামলার জবাব দিতে গাজায় এ হামলা চালানো হয়েছে। হামাসের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও অস্ত্রাগার এ হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল। ইসরাইল দাবি করে, শুক্রবার প্রথমে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে তিনটি রকেট ছোড়ে হামাস। তবে ওই রকেট হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কি না তা জানা যায়নি। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় গত বৃহস্পতিবার জেরুসালেম, পশ্চিম তীর ও গাজা শহরে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ফিলিস্তিনিরা। ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে শুক্রবার ‘ক্ষোভ দিবসের’ ডাক দেয়া হয়। এ সময় ইসরাইলি বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে কমপক্ষে দুই ফিলিস্তিনি নিহত এবং সাত শতাধিক আহত হন।
গত বুধবার জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বকে আরো সঙ্কটময় করবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া এই পদক্ষেপ ইসরাইল-ফিলিস্তিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চলমান প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করবে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে বেশ শঙ্কিত আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন তারা। জেরুসালেমে ইসরাইলের রাজধানী স্থানান্তর ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ডেকে আনবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জর্দান। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায় তুরস্কও।
জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তটি বেশ পুরনো। ১৯৯৫ সালেই মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদিত এক আইনে ইসরাইলের মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুসালেমে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেয়া হয়। তবে সাবেক সব প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর একই পথে হেঁটেছিলেন ট্রাম্পও। তবে এবার বেঁকে বসেন তিনি। গত বুধবার জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।
১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয় ইসরাইল। পরে ১৯৮০ সালে তারা পূর্ব জেরুসালেমকে একীভূত করে নেয় ইসরাইলের অংশ হিসেবে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটি বেআইনি পদক্ষেপ এবং ওই অঞ্চলকে দখলকৃত ভূখণ্ড হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।
সূত্র: নয়াদিগন্ত
Discussion about this post