মিরাজ খন্দকার
আমরা প্রায়ই একটি বাগধারা শুনি আর সেটি হলো ‘মগের মুল্লুক ‘ । যার অর্থ অরাজক পরিস্থিতি। মধ্যযুগে বার্মিজ মগদের অমানুষিক অত্যাচারের আর ডাকাতির প্রেক্ষিতে বাংলা ভাষার সম্ভারে এই শব্দ যোগ হয়। এখন এই বাগধারাটি চলমান আওয়ামী সরকারে এসে ম্লান হয়ে এসেছে। কারণ বর্তমান লীগের মুল্লুকে জনগণের উপর ভয়ংকর সব অত্যাচার আর নজিরবিহীন লুটপাট মগের মুল্লুককেও হার মানিয়েছে। দেখে যখন তখন মানুষ খুন হচ্ছে। বিনা অপরাধে ক্রসফায়ারে মানুষ মারা যাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কিছু মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। যাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে একের পর এক নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি ঘটে চলেছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিরাজ করছে চরম নিরাপত্তাহীনতা। এসব অঘটনে সরকারের কোন বিকার নেই। বিদেশে লক্ষ কোটি টাকা পাচার, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন অর্থ উধাও হয়ে যাওয়া, এটিএম কার্ড জালিয়াতি করে ব্যাংকের টাকা লুট, বেসিক ব্যাংক, হলমার্ক, শেয়ারবাজার প্রভৃতি শিরোনামের কেলেঙ্কারি যেন নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
গত ৭ বছরের মধ্যে ঘটেছে ৬টি বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনা। এ ৬ টিতেই ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি চুরি বা আত্মসাৎ করা হয়েছে। শেয়ারবাজার, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, বেসিক ব্যাংক ও ডেসটিনি কেলেঙ্কারির পর যুক্ত হয় ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি। সর্বশেষ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা চুরির ঘটনা।
ইসলামী ব্যাংক দখল
জামায়াতে ইসলামীর ব্যাংক বলে পরিচিত বাংলাদেশের সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংক। এর আমানত, ইনভেস্টমেন্ট এবং নীট লাভ সবচেয়ে বেশী। বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গ্রাহক এই ব্যাংকের। বহুদিন ধরেই এই ব্যাংকটিকে কঠোর নজরদারীতে রাখে। অবশেষে নজিরবিহীন ক্যু করে সরকার দখল করে নেয় ইসলামী ব্যাংককে। অস্ত্রের মুখে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে বাধ্য করা হয় পদত্যাগ করতে। কীভাবে সরকার ইসলামী ব্যাংক দখল করে নিয়েছে এ নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে লন্ডন ভিত্তিক বিখ্যাত সাপ্তাহিকী দ্য ইকনোমিষ্ট। তারা “The government initiates a coup at Bangladesh’s biggest bank” শিরোনামে ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল প্রকাশিত এক প্রতিবেদন পত্রিকাটি লিখেছে।বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই ৫ জানুয়ারী ২০১৭ সকালে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান আর এমডিকে ফোন করে। প্রথমে তাদের বাসা থেকে তুলে নিয়ে ডিজিএফআই সদর দপ্তর ঢাকা ক্যান্টমেন্টে নিয়ে আসা হয়। সেখানে একজন গোয়েন্দা কর্তা তাদের পদত্যাগ পত্র এগিয়ে দিয়ে তাতে স্বাক্ষর করতে বলেন। বাধ্য হয়ে তারা পত্রে স্বাক্ষর করে চলে আসেন। এর পর গোয়েন্দা কর্তাদের উপস্থিতিতেই সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি হোটেলে সভা ডেকে নতুন পরিষদ গঠন করা হয়।পত্রিকাটি আরো লিখেছে, সরকার মূলত বহুদিন থেকেই ব্যাংকটি দখল করতে চেষ্টা করছিলো। ব্যাংক দখলে এটির মূল শেয়ার যাদের সেই ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবিকে অন্ধকারে রাখা হয়। আইডিবি অভিযোগ করেছেব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিবর্তনে নিয়ম নীতির বালাই ছিলো না,তাদেরও জানানো হয়নি। মাত্র তিন দিন আগে বৈঠকের খবর দেয়া হয়। ফলে তাদের পক্ষে যোগদান সম্ভব হয় নি।
রিজার্ভ চুরি
বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার তথা ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার উধাও হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ দেশের বাইরে থেকে অজ্ঞাতনামা হ্যাকাররা ‘হ্যাকড’করে এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তারা এ ক্ষতির জন্য ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে দায়ী করেছেন। ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এই ব্যাংকিং হ্যাকিংয়ের ঘটনার পরে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলছে, তাদের ওখান থেকে হ্যাকিং হয়েছে-এর কোনো প্রমাণ নেই। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এ ব্যাপারে খবর জানার পরই তারা সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করেছে। বেলজিয়ামভিত্তিক আন্তঃব্যাংক আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক সুইফট কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। প্রেরণ ও গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যে বার্তা বিনিময় হয়েছে, সেটি বিশ্বাসযোগ্য ছিল। সুইফট বলেছে, তাদের নেটওয়ার্ক অপব্যবহার হয়েছে- এ রকম কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা, ভারতীয় কিছু প্রতিষ্ঠান এই চুরির সাথে জড়িত বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হলেও সরকার এই ব্যাপারে বেশ নীরবতা পালন করছে। বাংলাদেশের সম্পদ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেও রয়েছে সরকারের ব্যার্থতা। অনেকেই বলে থাকেন এই ব্যার্থতা ইচ্ছেকৃত। সরকার জড়িত আছে বলেই রিজার্ভ চোরদের নাম আজও আমরা জানতে পারিনি। উপরন্তু এটি হ্যাকিং নয় বরং ব্যাংকের কেউ টাকাটা সরিয়েছে এমন দাবী গুম হয়েছেন তানভীর হাসান জোহা। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) মন্ত্রণালয়ের সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর (অপারেশন) ছিলেন। সরকারই তাকে গুম করে এই বিষয়ে কথা বলতে বারণ করে। সৌভাগ্যবান জোহা ফিরে এসেছেন। কিন্তু তিনি কুলুপ এঁটেছেন।
বিদেশে টাকা পাচার
গত বছরের শেষে আর্থিক খাতের আরেক বড়সড় ঘটনা ছিলো বাংলাদেশ থেকে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়া। কেবল ২০১২ সালেই বাংলাদেশ থেকে ১৭৮ কোটি ডলার বা ১৩ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এই অর্থ সরকারের ওই বছরের স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের চেয়ে বেশি। গত এক দশকে (২০০৩-২০১২) বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থের পরিমাণ এক লাখ কোটি টাকা। ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) সম্প্রতি অর্থ পাচারের তথ্য প্রকাশ করে জানায়, বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার ২০১৩ সালে ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার অবৈধ পথে বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। টাকার অঙ্কে যা ৭৬ হাজার ৩৬১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পাচার হওয়া এই অর্থ বাংলাদেশের ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, পল্লী উন্নয়ন, শিল্প ও ভৌত অবকাঠামো খাতের মোট উন্নয়ন বাজেটের সমান। জিএফআই সাত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ থেকে কী পরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে পাচার হয়- তা নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। ‘উন্নয়নশীল বিশ্বথেকে অবৈধ অর্থের প্রবাহ- ২০১৪-১৩’শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী প্রকাশ করা হয়। মূলত, আমদানি-রপ্তানির সময়ে পণ্যের প্রকৃত মূল্য গোপন করার মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছরই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পাচার হলেও ২০১৩ সালে এর পরিমাণ ছিল অনেক বেশি। এতে বেশি অর্থ পাচার হওয়া দেশের তালিকায় খারাপ অবস্থানে গেছে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছিল ১৪৫টি দেশের মধ্যে ৫১তম। আর এবার বাংলাদেশ ১৪৯টি দেশের মধ্যে হয়েছে ২৬তম। জিএফআইর গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয়েছে ২০১২ ও ২০১৩ সালে। যেমন, ২০১২ সালে অর্থ পাচারের পরিমাণ ৭২২ কোটি ৫০ লাখ ডলার এবং ২০১৩ সালে ৯৬৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর আগে ২০০৮ সালে ৬৪৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার, ২০০৯ সালে ৬১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, ২০১০ সালে ৫৪০ কোটি ৯০ লাখ ডলার এবং ২০১১ সালে পাচার হয় ৫৯২ কোটি ১০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের পরিমাণ ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর গড়ে প্রতিবছর পাচার হয়েছে ৫৫৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
এটিএম কার্ড জালিয়াতি
বাংলাদেশে এটিএম কার্ড জালিয়াতি এর নতুন ঘটনার জন্ম দেয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে এটি ছিলো এক আলোচিত ঘটনা। এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক জার্মান নাগরিক পিওতর সিজোফেন স্বীকারোক্তি দিলে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ব্যাংকের এটিএম কার্ড জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল ব্যবসায়ী, কয়েকটি ব্যাংকের কার্ড শাখার কর্মী ও পুলিশ জড়িত বলে স্বীকার করেছেন এই মামলায় গ্রেফতারকৃত জার্মান নাগরিক পিওতর সিজোফেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁদের চক্রটি ‘স্কিমিং ডিভাইস’নামের বিশেষ যন্ত্র বসিয়ে গ্রাহকদের কার্ডের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির মাধ্যমে ক্লোন কার্ড তৈরি করে টাকা তুলে নেয়। এই জালিয়াতির টাকা চার ভাগ হতো। ‘পস মেশিন’সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মধ্যস্থতাকারীকে ভাগ দেয়ার পর বাকি টাকা পেতেন ভয়ঙ্কর প্রতারক বিদেশি নাগরিক পিওতর সিজোফেন মাজুরেক (ছদ্মনাম থমাস পিটার)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে রিমান্ডে থাকা পিওতরের দাবি, সবাইকে ভাগ দেয়ার পর তার থাকত মাত্র ৪০ শতাংশ। অন্যদিকে, ‘পস মেশিন’সরবরাহ করা হতো এমন ২০টি প্রতিষ্ঠানের নামও জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। প্রসঙ্গত, ৬ ও ৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত বেসরকারি তিনটি ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকা তুলে নেয় চক্রটি। টাকা হাতিয়ে নিতে তারা স্কিমিং ডিভাইস বসিয়ে গ্রাহকদের গোপন তথ্য চুরি করে।তদন্তে নাম উঠে আসে সরকারের কর্তাব্যাক্তিদের নাম। এই ঘটনাও অন্যান্য ঘটনার মত চাপা পড়ে যায়।
হলমার্ক কেলেঙ্কারি
দেশে হলমার্ক কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত ঘটনায় ব্যাংকের টাকা লুটপাটের চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের মধ্য সময় জুড়ে। ঐসময় সোনালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাওয়া হয়ে যায়। এই ঘটনায় গঠিত কমিটির রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অখ্যাত হলমার্ক গ্রুপ কেবল সোনালী ব্যাংক থেকে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। রিপোর্টে বলা হয়, সোনালী ব্যাংকের শেরাটন শাখা (বর্তমান রূপসী বাংলা) থেকে ২০১০-২০১২ সময়ে মোট তিন হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ একাই আত্মসাৎ করে দুই হাজার ৬৮৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়নি। দেশের বৃহত্তম এই রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি
সাম্প্রতিক সময়ের ব্যাংক খাতের আরেক বড় কেলেঙ্কারি হলো বেসিক ব্যাংকের টাকা লুট। বেসিক ব্যাংকে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জালিয়াতির ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে অভিযোগ উঠার পর অনুসন্ধান করে দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুসন্ধান শেষে গত বছরের শেষের দিকে ৫৬টি মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন। বেসিক ব্যাংকের চারটি শাখায় ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় প্রথম পর্যায়ের ১৮টি মামলায় ১৫৬ জনকে আসামী করা হয়। এই অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর নাম ব্যাপকভাবে উচ্চারিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে দায়ী করা হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও ব্যাংকের এই লাগামহীন দুর্নীতিতে আবদুল হাই জড়িত বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু রহস্যজনকভাবে কোন মামলায় আসামী করা হয়নি তাকে। এছাড়াও একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো খেয়ে ফেলেছে তাদের মূলধন। ২০১৬ সাল শেষে সোনালী ব্যাংকের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া বেসিক ব্যাংকে ঘাটতি হয়েছে ২ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা ও রূপালী ব্যাংকের ৭১৪ কোটি টাকা।
শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি
২০১০ সালের ডিসেম্বর-জানুয়ারির শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রথমবারের মতো দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ লুটপাটের চিত্র সামনে আসে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে সরকার একটি তদন্ত কমিটি করে। তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ অর্থমন্ত্রীর কাছে তদন্ত রিপোর্ট পেশের পর সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, একটি চক্র সংঘবদ্ধভাবে শেয়ার বাজার থেকে কমবেশি ৫ হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে। তিনি সুনির্দিষ্ট করে নাম না বলে জানান, ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ সুযোগ পেলে অসততা করেন। তবে এগুলো প্রতিরোধের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসি’র। এসইসি সেই প্রতিরোধের কাজ করেনি। তাই এই কেলেঙ্কারির প্রধান দায় তাদের। তিনি জানান, এসইসির বাইরে এই কেলেঙ্কারিতে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত- তা তারা বুঝতে পেরেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে অনিয়ম করা হয়েছে তাও তারা বের করছেন। কিন্তু কত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান জড়িত সেভাবে সংখ্যা সুনির্দিষ্ট করেননি তারা। কেন করবেন? করলে তো চোর প্রমাণিত হয়ে যেত সরকার থাকা ব্যাক্তিবর্গই।
অব্যাহত লুটপাটে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মানে এর দায় নিতে হয় জনগণকে। একের পর এক লুটপাট হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংকগুলো। আর দফায় দফায় সেই ব্যাংকগুলোর ঘাটতি পূরণ হচ্ছে জনগণের টাকায় গঠিত রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে সকল জ্বালানী, বিদ্যুত, গ্যাসসহ সকল নাগরিক সুবিধার মূল্য বাড়ানো হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দুর্বিষহ হচ্ছে জনজীবন। বাংলাদেশের জনগণ মুক্তি চায়। বাংলাদেশের মানুষ বাঁচতে চায়।
Discussion about this post