বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত বলেছেন, যে শিক্ষা জাতির এগিয়ে যাওয়ার মূলমন্ত্র সেই শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দিতে সর্বগ্রাসী ষড়যন্ত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। যার প্রমাণ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বস্তরে অব্যাহত প্রশ্নপত্র ফাঁস। মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের মহোৎসব চলছে।
তিনি আজ এক মিলনায়তনে ছাত্রশিবির আয়োজিত সদস্য প্রার্থী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় সাহিত্য সম্পাদক শাহ মো: মাহফুজুল হকের পরিচালনায় এছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক মুতাসিম বিল্লাহ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মো: আতিকুল্লাহসহ কেন্দ্রীয় ও শাখার বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
শিবির সভাপতি বলেন, আগে কদাচিৎ দু-একবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর পাওয়া গেলেও এখন তা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। এ অব্যাহত প্রশ্নফাঁস কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছেনা বর্তমানে জেএসসি ও পিএসসির পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস থেকে কোমলমতি শিশুরাও। প্রশ্নফাঁসের ঘটনার সঙ্গে বরাবরই সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মহিউদ্দন রানা, অমর একুশে হলের নাট্য ও বিতর্ক বিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ইশতিয়াক আহমদসহ ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি দিবালোকের মত স্পষ্টত হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াত চক্রের ব্যবহৃত ডিভাইসসহ কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া এ চক্রের সাথে অনেক কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে। সুস্পষ্টভাবে প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ থাকলেও শিক্ষামন্ত্রী নির্লজ্জের মতো তা অস্বীকার করে যাচ্ছেন। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ঘটনার পরপরই অধিকাংশ ক্ষেত্রে গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। কিন্তু সেই কমিটির প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখে না। ঘটনার পর দায় এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে করা হয় মামলা। গত আট বছরে এমন শতাধিক মামলা হলেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি কাউকেই। ফলে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেও পার পেয়ে যাচ্ছে মুল হোতার।
তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁসের এ অনৈতিক প্রক্রিয়া যেমন যোগ্য নাগরীক তৈরীতে বাধা সৃষ্টি করছে তেমনি কোমলমতি শিশুদের নৈতিকতা ও মনোবল ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ ধ্বংস লীলা অব্যাহত থাকলে অচিরেই আমাদের মেধা সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে। চুড়ান্ত ভাবে দেশ মেধাহীনদের কবলে চলে যাবে। যা জাতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ঢেকে আনবে। দেশে অব্যাহত প্রশ্নফাঁস, নকল, ডিজিটাল জালিয়াতির যে মহোৎসব চলছে তাতে শিক্ষা ব্যবস্থা কোন পযায়ে গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে দেশের শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজ, অভিভাবক ও জনগণ আজ ভীষণ উদ্ধিগ্ন। একটি গঠনমূলক ছাত্র সংগঠন হিসেবে আমরাও দেশের মানুষের সাথে উদ্বিগ্ন। প্রশ্নফাঁসে সরকারের অনৈতিক মদদ ও অযোগ্যতায় লাখো শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধ্বংস হয়ে যাবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে এই জাতি বিনাশী ধ্বংসাত্বক অপতৎপরতা বন্ধ করতে সরকারকে সময়পযোগি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দলীয় পরিচয়ে বিবেকহীন না হয়ে ইতপূর্বে গ্রেফতার হওয়া অপরাধিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস রোধে আরো কঠোর আইন প্রনয়ণ করতে হবে। প্রশ্নপ্রত্রফাঁসে জড়িত ও এদের পৃষ্ঠপোষক মহলকে খুজে বের করতে হবে। ডিজিটাল জালিয়াতি রোধে পরীক্ষা পদ্ধতিকে আরো উন্নত ও যুগপযোগী করতে হবে। প্রশ্নপ্রত্র ফাঁস ও ভর্তি বাণিজ্যসহ সকল ধরনের অনৈতিক কাজ রোধে ধর্মীয় এবং নৈতিক শিক্ষায় গুরুত্ব দিতে হবে।
শিবির সভাপতি বলেন, জাতি তার সন্তানদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ চায়। কিন্তু জাতি তার সন্তানদের ভবিষ্যৎ গভীর অনিশ্চয়তায় ফেলে দিতে পারে না। সুতরাং আগামী প্রজন্মের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে সরকারের অনীহা এবং অযোগ্যতার বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে। ছাত্রশিবির শিক্ষাবিরোধী যেকোনো কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিল এবং আগামীতেও থাকবে ইনশাআল্লাহ।
সূত্র : প্রেস বিজ্ঞপ্তি
Discussion about this post