অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এখন একেবারে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষাঙ্গনগুলো এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিণত হয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার পরিবর্তে এখন চর্চা হচ্ছে রাজনীতি। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হল দখল, ভর্তি বাণিজ্যকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। দীর্ঘদিন বন্ধ হয়ে থাকছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্রলীগের এসব মারামারি ও খুনোখুনির কারণে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদেরকে ক্যাম্পাসে আসতে দেয় না তাদের বাবা-মা। আর হলে যারা থাকে তাদেরও সব সময় আতঙ্কে সময় কাটে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন পড়ালেখা নাই বললেই চলে।
মূলত ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বেপরোয়া হয়ে উঠে ছাত্রলীগ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে অর্থাৎ বিগত ৯ বছরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ১ হাজারেরও বেশি সংঘর্ষে জড়িয়েছে। যার বেশিরভাগই ঘটেছে নিজেদের মধ্যে। তারা নিজেদের দলেরই অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, অনেক জায়গায় এ সংগঠনের কমিটি পর্যন্ত বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছে।
অপ্রতিরোধ্য এই ছাত্রলীগের লাগাম কোনোভাবেই টেনে রাখতে পারছে না সরকার। তারা কোনো আইন বা দলীয় শৃঙ্খলার ধার ধারে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দোর্দ- দাপট আর অনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে করে তুলেছে অস্থিতিশীল। তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না ছাত্র-শিক্ষক কেউই। ‘ছাত্রলীগ’ নামের আগে ‘ছাত্র’ থাকলেও ছাত্রসুলভ আচরণ উধাও হয়ে গেছে এদের ভেতর থেকে। লাগামহীনতার চিত্র তুলে ধরায় সাংবাদিকদের ওপরও নেমে আসছে নির্যাতনের খড়গ। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, অভিভাবক দল কারোই কোনো নিয়ন্ত্রণ কি নেই মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের ওপর।
ছাত্রলীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে যখন দেশের একের পর এক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন সারাদেশের মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে সংগঠনের কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। এলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বুধবার এক চিঠির মাধ্যমে দেশের সব সাংগঠনিক ইউনিটগুলোকে মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের এই চিঠি বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার এনিয়ে তীব্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এ ঘোষণার মাধ্যমে ছাত্রলীগ সারাদেশের স্কুলগুলোকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র করছে বলেও অনেকে মন্তব্য করছেন।
কেউ কেউ বলছেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পর এখন কোমলমতি শিশু কিশোরদেরকে অপরাজনীতির হাতিয়ার বানাতে স্কুলে ঢুকার চেষ্টা করছে ছাত্রলীগ। তারা যদি স্কুলে ঢুকতে পারে তাহলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা আর এসএসসি পাস করে কলেজে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। এসএসসির আগেই তারা ঝরে পড়বে।
অনেকে বলছেন, সরকার যদি এসব বন্ধ না করে তাহলে কোমল মতি ছেলে-মেয়েদের জীবন রক্ষার্থে আমাদেরকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে। অন্যথায় কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো দেশের স্কুলগুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে।
Discussion about this post