জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আদালতে অনুপস্থিত থাকা এবং জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও হাতে পায়নি পুলিশ। গত ১২ অক্টোবর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত থেকে জারি হওয়া এ দু’টি গ্রেফতারি পরোয়ানার দ্বিতীয়টি আদালত থেকে পাঠানো হলেও অন্য মামলাটির পরোয়ানা আদালত থেকেই এখনও পাঠানো হয়নি। তবে পুলিশ বলছে,কোনও মামলারই গ্রেফতারি পরোয়ানা তারা হাতে পাননি। অন্যদিকে,কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোল বোমা হামলা মামলায় গত ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। সেটাও মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) পর্যন্ত পুলিশ হাতে পায়নি পুলিশ।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর পেশকার মোকাররম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জারি হওয়া গ্রেফতারি পরোয়ানা এখনও থানায় পাঠানো হয়নি। কেন পাঠানো হয়নি সেটা বলতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
অন্যদিকে,ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের পেশকার ইখতিয়ার আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, যেদিন (১২ অক্টোবর) আদালত ওয়ারেন্ট জারি করেছেন সেদিনই সেই ওয়ারেন্ট সংশ্লিষ্ট থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।খালেদা জিয়ার বাড়ি গুলশানে হওয়ায় এসব ওয়ারেন্ট গুলশান থানায় যাওয়ার কথা।
গুলশান থানার ওসি আবু বকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সেসব গ্রেফতারি পরোয়ানা আমরা হাতে পাইনি।
আদালত থেকে খালেদার গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় পাঠানোর বিষয়ে ঢাকার পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা আদালত থেকে পাঠানোর কথা। সেটা এখনও কেন পাঠানো হয়নি খোঁজ নেওয়া হবে। পুলিশ সেসব গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেলেই সেটা তামিল করবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর সেটা থানায় পাঠাতে হবে। সেই পরোয়ানা তামিল করবে পুলিশ। এটাই নিয়ম। আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় পাঠানো হয়েছে কিনা সেটা জানা আইনজীবীর কাজ নয়। আর গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না।
পুরান ঢাকার বকশি বাজার এলাকায় ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৫ এর অস্থায়ী এজলাসে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচারক মো. আখতারুজ্জামান খালেদা জিয়ার সময় আবেদন নামঞ্জুর করে গত ১২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। একইসঙ্গে এ মামলার অপর দুই আসামি মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল এবং ব্যবসায়ী সরফুদ্দীনের জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করার অভিযোগে দায়ের করা মানহানির মামলায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম নুর নবী গত ১২ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এই গ্রেফতারি পরোয়ানা একইদিন আদালত থেকে পাঠানো হলেও সেটা এখনও গুলশান থানায় পৌঁছেনি। ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের সঙ্গে জোট করে রাজাকার আলবদর নেতা-কর্মীদের মন্ত্রী এমপি বানিয়ে তাদের বাড়িতে ও গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ও মানচিত্র তুলে দেওয়ার অভিযোগে এ মামলা দায়ের করা হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে।
এদিকে আমাদের কুমিল্লা প্রতিনিধি মাসুদ আলম জানান,কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি ভোর রাতে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায় আটজন নিহতের ঘটনায় গত ৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন কুমিল্লা জেলা ও দায়রা জজ বেগম জেসমিন আরা। সেই গ্রেফতারি পরোয়ানা হাতে পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে চৌদ্দগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এ মামলার পরোয়ানা এখনও হাতে পাননি তারা। তবে খালেদা জিয়ার ওয়ারেন্ট তার বাড়ির ঠিকানা গুলশানেই যাবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post