অ্যানালাইসিস বিডি ডেস্ক
মিয়ানমার বাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের হত্যা-নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৪ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এক কঠিন পরিস্থিতির মুখে সবকিছু ফেলে দেশ ছেড়ে চলে আসতে তারা বাধ্য হয়েছে। হয়তো আসার মুহূর্তে যাদের হাতে নগদ কিছু টাকা ছিল তা নিয়েই চলে এসেছে। অতিরিক্ত আর কিছু আনতে পারেনি।
বাংলাদেশে এসে তারা এখন চরম মানবেতর জীবন-যাপন করছে। পাহাড়ের আনাচে-কানাচে খোলা আকাশের নিচেই দিন-রাত পড়ে থাকতে হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেও কোথাও একটু মাথা গুজার জায়গা পাচ্ছে না। যাকে বলা যায় সীমাহীন ও অবর্ণনীয় কষ্ট।
অপরদিকে, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভাগ্য খুলে গেছে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের। সারাদেশ থেকে নিয়ে আসা সাধারণ মানুষের ত্রাণ লুটপাটের পাশাপাশি রোহিঙ্গ শরণার্থীদের নিয়েও তারা রমরমা বাণিজ্য শুরু করেছে। সরকারি জায়গায় তাবু টানিয়ে তারা অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাবুতে আশ্রয় দিচ্ছে।
উখিয়ার পালংখালীতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৬টি ক্যাম্প আছে। এ ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, পালংখালীর এই ৬ টি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করছে কক্সবাজারের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আলী আহমদ ও আওয়ামী লীগ নেতা খসরু। অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে তারা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ক্যাম্পে আশ্রয় দিয়েছে। প্রতিটি পরিবার থেকে তারা ৮-১০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। আর বিচ্ছিন্নভাবে যারা আসছে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি নিয়েছে ২-৩ হাজার টাকা করে। এভাবে তারা অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
তারপর, উখিয়ার বালুখালীতে রয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ২টি ক্যাম্প। এই দুইটি ক্যাম্পের আয়তন অনেক বড়। এখানে ১ লাখের মতো রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।
অ্যানালাইসিস বিডির অনুসন্ধানে জানা গেছে, বালুখালীর এ দুইটি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করছে উখিয়ার যুবলীগ নেতা ও স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল আফসার। আফসারের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে কিছুদিন আগে তাকে দল থেকে বহিস্কার করেছিল। এখন আবার তাকে দলে নেয় স্থানীয় যুবলীগ। এই যুবলীগ নেতা আফসার ও তার সহযোগীরা রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে তাদেরকে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় দিচ্ছে। পালংখালীর মতোই জনপ্রতি ২-৩ হাজার এবং প্রতি পরিবারকে ৮-১০ হাজার টাকা দিয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
তাদের এই রোহিঙ্গা শরণার্থী বাণিজ্য নিয়ে উখিয়ার স্থানীয় লোকদের মাঝেও চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু, বিভিন্ন কারণে প্রকাশ্যে তারা কিছু বলতে পারছে না। স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ এসব জেনেও রহস্যজনক কারণে চুপ করে আছে। আর ক্যাম্প থেকে বের করে দেয়ার ভয়ে আশ্রয় নেয়া অসহায় রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও ভয়ে মুখ খুলছে না।
Discussion about this post